চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে বছরের ব্যবধানে মসলাজাতীয় পণ্য আমদানি হয়েছে ৩০ হাজার ৭১৭ টনের বেশি। অথচ দেশের সবচেয়ে বড় ভোগ্যপণ্যের বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে গত বছরের অক্টোবর থেকে দফায় দফায় বেড়েছে মসলার দাম। গত এক সপ্তাহেই বেশিরভাগ মসলার দাম বেড়েছে ন্যূনতম ৩০০ টাকা। দাম বৃদ্ধি নিয়ে আগের মতোই বক্তব্য আমদানিকারদের। তারা বলছেন, মসলা আমদানির ক্ষেত্রে অনেক বেশি শুল্ক গুনতে হয়। তার ওপর চাহিদাও বেশি। পাশাপাশি ডলারের দাম বাড়ার কারণে বেড়েছে খরচও।
আমদানিকারকদের এসব দাবি হাস্যকর বলে মন্তব্য করেছেন ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন, এখনো কোরবানির ঈদ আসতে এক মাস বাকি। এরই মধ্যে তারা মসলার দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। অসাধু ব্যবসায়ীরা সবসময় সুযোগের অপেক্ষায় থাকেন। তবে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, মসলার বাজার নিয়ে কারসাজিতে জড়িতদের চিহ্নিত করতে শিগগির বড় পরিসরে অভিযান পরিচালনা করা হবে। এরই মধ্যে বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা।
চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে বিভিন্ন দেশ থেকে মরিচ, পেঁয়াজ, রসুন, দারচিনি, লবঙ্গ, জায়ফল, জয়ত্রী, এলাচ, ধনিয়া, জিরা, আদা ও হলুদ আমদানি করা হয়। ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ৩০ হাজার ৭১৭ টন বেশি মসলা আমদানি করা হয়েছে। ২০২২ সালে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ১ লাখ ৫১ হাজার ৯৩৩ টন মসলা আমদানি করা হয়। গত বছর আমদানি করা হয় ১ লাখ ৮২ হাজার ৬৫০ টন।
অন্যদিকে গত বছরের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে দেশে পর্যাপ্ত মসলা আমদানি করা হয়েছে। জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ৩২ হাজার ১৭০ টন লবঙ্গ, ২৯ হাজার ৬৪৬ টন গোলমরিচ, ৪১ হাজার ৩৪৬ টন জিরা, ২৪ হাজার ২৬৭ টন এলাচ আমদানি হয়েছে। আমদানির এমন চিত্র দেখা গেলেও বাজারে বিপরীত পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
সপ্তাহের ব্যবধানে খাতুনগঞ্জে প্রতিটি মসলাজাতীয় পণ্যের দাম কেজিতে সর্বনিম্ন ৫০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। গতকাল খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে বড় দানার ভালো মানের প্রতি কেজি এলাচ ৩ হাজার ৯৫০ থেকে ৪ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। এক সপ্তাহ আগে এই এলাচের কেজি বিক্রি হয়েছিল প্রায় ৩০০ টাকা কমে। ছোট দানার প্রতি কেজি এলাচ বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৮০০ টাকায়। গত সপ্তাহে একই মানের এলাচ ৩ হাজার ৫৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। কেজিতে ৫০ থেকে ৮০ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি জয়ত্রী বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৯৫০ টাকায়।
আগের সপ্তাহে ১ হাজার ৩০০ টাকা কেজির লবঙ্গ বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৪০০ টাকায়। গত সপ্তাহে প্রতি কেজি জিরা বিক্রি হয়েছিল মানভেদে ৫৫৭ টাকায়, যা বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকায়। গত সপ্তাহে যে গোলমরিচ প্রতি কেজি ৭৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল, এখন তা ৮৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি দারুচিনি ৪০০ টাকা, হলুদ ৩১০ টাকা, কালিজিরা ৩২০ টাকা, কিশমিশ ৮০০ টাকা, তেজপাতা ১২০ টাকা আর সাদা সরিষা বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়।
খাতুনগঞ্জের মসলা আমদানিকারক ফারুক আহমদ বলেন, মসলাকে বিলাসবহুল পণ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাই এ পণ্য আমদানিতে প্রায় ৫১ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়। পাশাপাশি ডলারের দাম বাড়ার কারণে আমদানি বৃদ্ধি সত্ত্বেও মসলার বাজার চড়া।
চট্টগ্রাম মসলা আমদানিকারক সমিতির সভাপতি অমর কান্তি দাস বলেন, মসলার ব্যবসাটা নির্ভর করে ভারতের ওপর। সেখানে দাম বাড়লে এখানেও বাড়ে। আর এখন ডলার সংকট তো আছেই। শতভাগ মার্জিন দিয়ে মসলা আমদানি করাটা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
খাতুনগঞ্জের মেসার্স আবেদিন ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী আবুল কালাম বলেন, ডলারের মূল্য বাড়ানোর ফলে আমদানি খরচ বেড়ে গেছে,Ñযার প্রভাব পড়েছে পণ্যের দামে। বিশ্ববাজার থেকে পণ্য কিনে দেশে আনতে সময় ক্ষেপণের পাশাপাশি শিপিং চার্জও বেড়ে গেছে। নানামুখী পদক্ষেপের মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলেও তা শতভাগ কার্যকর হয়নি। তাই আসন্ন বাজেটে শুল্ককর না কমালে ভোগ্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।
খাতুনগঞ্জের মেসার্স বাঁচা মিয়া সওদাগর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী সেকান্দর বলেন, কোরবানি ঈদ সামনে রেখে প্রতিষ্ঠানগুলো এরই মধ্যে পণ্য আমদানি ও মজুত করেছে। ফলে বাজারে পর্যাপ্ত পণ্য রয়েছে। তবে ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে আমদানির পথে থাকা পণ্যের বাড়তি খরচ মাথায় রেখে ব্যাবসায়ীরা লেনদেন করতে চাইছেন। এতে বাজার অস্থিতিশীল হওয়ায় শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
ব্যবসায়ীদের এ দাবি মানতে নারাজ ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগের সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন। তিনি বলেন, ডলারের দাম বেড়েছে এখন। কিন্তু মসলাগুলো আনা হয়েছে রমজানের ঈদেরও অনেক আগে। এখন দাম বৃদ্ধির প্রশ্নই আসে না।