আসিফ পিনন, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ০১ জুন ২০২৪, ০৩:০০ এএম
আপডেট : ০১ জুন ২০২৪, ০৭:২৯ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
পেশা

সাগর ও বৃদ্ধ নুর নবী

সাগর ও বৃদ্ধ নুর নবী

৬৫ বছরের নুর নবী। বছরের এই মৌসুমে যখন মৎস্য আহরণ বন্ধ থাকে, তখন জাল বাঁধা, ট্রলার মেরামতে দিন কাটে তার। এবারও তেমন অলস সময় কাটছে চট্টগ্রামের কর্ণফুলীর পাড়ে। সঙ্গে ভেসে আসছে অতল সাগরে প্রিয়জন হারানোর স্মৃতি। এই সাগরেই মাছ আহরণে গিয়ে নূর একে একে হারিয়েছেন বাবা-ভাইকে। সাগরের বুকে বিলীন হয়েছে তাদের ভিটেবাড়িও। ২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড়ের কবলে হারান ১১ জন সহকর্মী। সৌভাগ্যক্রমে তিনি বেঁচে ফেরেন। সাগরে এতকিছু হারিয়েও মাছ আর জালের নেশা তাকে ছাড়ে না; কিন্তু ৬৫ দিন মাছ ধরা বন্ধ থাকায় এখন অলস সময় কাটছে তার।

গত ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন বাংলাদেশের সামুদ্রিক জলসীমায় সব ধরনের মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। এরপর থেকে সাগরে থেকে তীরে ফিরে আসে মাছ ধরার ট্রলারগুলো। জেলেদের অনেকেই যোগ দেন অন্য কাজে। বেশির ভাগ জেলে জীবিকার খোঁজে অন্য কাজে চলে গেছেন। জেলেরা জানিয়েছেন, আগামী দুই মাস সাগরে না ফেরা পর্যন্ত নৌকা ও জাল মেরামতের পাশাপাশি খোশগল্পেই সময় কাটবে তাদের। তবে অনেকের মাঝে দেখা গেছে রুটি-রুজির অনিশ্চয়তাও।

মাছ ধরার ট্রলার মাসুদা শাহীনের হেড মাঝি নুর নবী কালবেলাকে বলেন, ‘মাছ ধরা বন্ধ ঘোষণা করায় দুই দিন আগে এখানে (কর্ণফুলীর পাড়ে) এসেছি। এখন জাল মেরামত করছি। জালটি প্রায় এক কিলোমিটার লম্বা। পাশাপাশি ট্রলার মেরামতের কাজ চলছে।

অনেকেই অন্য কাজে গিয়েছেন। তবে আমার অন্য কাজ ভালো লাগে না। সাগরে আমার বাবা-ভাই মারা গেছেন। তবুও এ কাজটিই আমার ভালো লাগে; কিন্তু আমি চাই না আমার সন্তান কেউ এ পেশায় আসুক।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৬৫ দিন মৎস্য আহরণ বন্ধ ঘোষণায় চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড, মীরসরাই, সন্দ্বীপ, বাঁশখালী ও আনোয়ারা এলাকায়ও জেলেদের একই চিত্র। মৎস্য আহরণে বিরত থাকা মৎস্যজীবীদের আপদকালীন বিকল্প আয় বা খাদ্য সহায়তা হিসেবে দুই কিস্তিতে ৬৫ দিনের জন্য ৮৬ কেজি হারে জেলে পরিবারকে ভিজিএফ বরাদ্দ দেওয়ার কথা রয়েছে। জীবিকার বরাদ্দ পেলেও জেলেদের সংগ্রামের জীবনটা চলছেই। সাগরে ফিশিং ট্রলারে গিয়ে কেউ হারিয়েছে বাবাকে, কেউ বা হারিয়েছেন সন্তান। অনেকেই ঝড়ের কবল থেকে জীবন নিয়ে ফিরে আসতে পারলেও দুবির্ষহ স্মৃতি তাড়া করে বেড়ায় তাদের। তাদেরই একজন নুর নবী।

তিনি কালবেলাকে জানিয়েছেন, বংশগত পরম্পপরায় তিনি এ পেশায় যুক্ত। ২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড় সিডরের কবলে হারিয়ে যায় তার ১১ সহকর্মী। সেই ট্রলারডুবির পর বয়ায় ভেসে তিনি চলে যান পাশের দেশ ভারতে। সেখান থেকে ফেরেন ২১ মাস পর। দেশে ফিরে চলে যান কাতার; কিন্তু সেখানে শ্রমিকের কাজ পছন্দ হয়নি তার। কিছু দিন আবারও কাতার সাগরে জেলে পেশায় যুক্ত হন। ২০১৪ সালে আবারও দেশে ফিরে মাছ ধরার ট্রলারে যোগ দেন। এরই মধ্যে ২০২০ সালে জলদস্যুদের হাতে প্রাণ হারান তার ভাই মো. আলমগীর। আর তাদের বাবা মো. ইউনুছ ৩৫ বছর আগে মাছ ধরতে গিয়ে ঝড়ের কবলে পড়েন। চার দিন পর পানিতে ভেসে ওঠে বাবার মরদেহ।

আল ফাহাদ ফিশিং ট্রলারের মালিক জামাল আহমেদ কালবেলাকে বলেন, ‘সাগরের মাছ ধরার কাজটি অনেক কঠিন। সবসময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা সাগরে যায়। ফিরে আসার নিশ্চয়তা থাকে না। ঘূর্ণিঝড়, বিপদ-আপদ লেগেই থাকে। ঝড়ের সময় অনেকেই হারিয়ে যায়।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

দুই প্রতিবন্ধীকে নিয়ে অসহায় জীবন বৃদ্ধা জোবেদার

আবাসিক হলে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ঢাবি কর্তৃপক্ষের দুঃখ প্রকাশ

সাত দিনই চলবে মেট্রোরেল, নতুন সময়সূচি

‘অন্তর্বর্তী সংস্কার কমিটি’র প্রধান তারিক আনাম খান 

স্বামীকে হত্যার দায়ে স্ত্রী ও প্রেমিকের মৃত্যুদণ্ড

মব জাস্টিসের বিরুদ্ধে জবিতে বিক্ষোভ

মারা গেছেন স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের বিমল

একাধিক জনবল নেবে সিটি ব্যাংক

সাগর-রুনি হত্যার বিচারের প্রাথমিক স্তর পরিষ্কার করা দরকার : দুদু

ঢাবির ফজলুল হক হলে পিটিয়ে হত্যা / জড়িতদের গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত ভিসির বাসভবনে অবস্থান  

১০

সময় থাকতে হাসিনাকে ফেরত পাঠান, ভারতকে দুদু

১১

গুলিতে পা হারানো ইমরানের চিকিৎসা অর্থাভাবে বন্ধ

১২

ঢাবি-জাবিতে দুই খুন, যা বললেন ফারুকী 

১৩

নাটোরে শিশু হত্যা মামলায় ৩ জনের ৪৪ বছর কারাদণ্ড

১৪

ইরাকে তুর্কি বিমান হামলা, ২৪ স্থাপনা ধ্বংস

১৫

দ্বিতীয় সেশনেও টাইগারদের দাপট

১৬

ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অস্তিত্ব রক্ষায় ৮ দফা বাস্তবায়নের দাবি ঐক্য পরিষদের

১৭

ভিসার মেয়াদ শেষ আজ, কী ঘটবে শেখ হাসিনার ভাগ্যে

১৮

লক্ষ্মীপুরে পিটিআই প্রশিক্ষকের অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ

১৯

সালমানকে নিয়ে যা বললেন শাবনূর

২০
X