চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার একটি মাদ্রাসার চামড়ার গাড়ি রাতভর আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে আনোয়ারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহেল আহমদের বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে, গাড়িটি ছাড়তে দাবি করা হয় ২ লাখ টাকা। সেই চাঁদা না দেওয়ায় রাতভর আটকে রাখা হয় গাড়িটি। দীর্ঘ সময়েও গাড়িটি না ছাড়ায় নষ্ট হয়ে যায় অধিকাংশ চামড়া। পরে ৪৫ হাজার টাকার চামড়া ৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। এ খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
সোমবার কোরবানির ঈদের দিন সাতকানিয়ার বিভিন্ন এলাকা থেকে চামড়াগুলো সংগ্রহ করে দক্ষিণ চরতি মজিদিয়া দাখিল মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। রাত ১২টার দিকে একটি ট্রাকে করে চামড়াগুলো চট্টগ্রাম নগরীর আতুরার ডিপো আড়তে নেওয়ার পথে কালাবিবির দীঘি এলাকায় গাড়িটি আটক করে আনোয়ারা থানা পুলিশ।
দক্ষিণ চরতি মজিদিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার মো. মফিজুর রহমান কালবেলাকে বলেন, মাদ্রাসার মিসকিন ফান্ডে বিভিন্ন এলাকা থেকে ১২৫ পিস কোরবানি গরুর চামড়া সংগ্রহ করা হয়। রাত ১২টার দিকে একটি ট্রাকে করে চামড়াগুলো চট্টগ্রাম নগরীর আতুরার ডিপো আড়তে নেওয়ার পথে আনোয়ারা থানার ওসির নির্দেশে এসআই নাঈমের নেতৃত্বে একটি টহল টিম গাড়িটি আটকে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না দিলে চালকের মামলাসহ নানা হুমকি দেওয়া হয়। চাঁদা না পেয়ে গাড়িটি থানায় নিয়ে আটকে রাখা হয়। পরে নানাভাবে অনুরোধের পর ভোর রাতে ওসি গাড়িটি ছাড়তে রাজি হয়। ততক্ষণে চামড়ায় পচন ধরে গেছে। ভোরে আড়তে পৌঁছালে চামড়ার মান নষ্ট হয়ে যাওয়ায় প্রতি চামড়া মাত্র ৫০ টাকায় বিক্রি করতে হয়। তিনি বলেন, এই চামড়া ৪৫ হাজার টাকায় বিক্রি করা যেত। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ গাড়িটি থানায় আটকে রাখায় কারণে চামড়াগুলো পচে যায়। পরে আড়তে নেওয়ার পর এই চামড়া বিক্রি করা হয় মাত্র ৫ হাজার টাকায়। আমাদের প্রায় ৪০ হাজার টাকার ক্ষতি করল আনোয়ারা থানার ওসি। এই চামড়া সংগ্রহ করে গাড়ি ভাড়াও ওঠেনি।
মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সদস্য ড. মোহাম্মদ আলী চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থান থেকে নগরে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকার চামড়া সংগ্রহ করা হয়েছে। এসব চামড়া বিভিন্ন সড়ক দিয়েই শহরে এসেছে। অথচ পুলিশ বলছে, চামড়ার গাড়ি আটকানোর নির্দেশনা রয়েছে তাদের। আমরা জানতে চাই কে এই নির্দেশনা দিয়েছে? তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। তিনি আরও বলেন, চামড়া দেশের সম্পদ। আনোয়ারা পুলিশ চামড়ার গাড়ি নিয়ে যা করল, তা দেশের ক্ষতি। এতে দেশ ও মাদ্রাসাটি ক্ষতির মুখে পড়ল।
গাড়ি আটকের বিষয়ে আনোয়ারা থানার এসআই হোসেন ইবনে নাঈম ভূঁইয়া সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের একটি নির্দেশনা ছিল, এভাবে যাতে মহাসড়কে চামড়ার গাড়ি চলাচল না করে। সেজন্য আমরা গাড়িটি আটক করি। পরে জানতে পারি এটি একটি মাদ্রাসার চামড়ার গাড়ি। সে কারণে আমরা পরে গাড়িটি ছেড়ে দিই। চাঁদার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করেন।
অভিযোগের বিষয়ে আনোয়ারা থানার ওসি সোহেল আহমেদ বলেন, রাতে আমরা একটি চামড়ার গাড়ি ধরেছিলাম। পরে অবশ্য ছেড়ে দিয়েছি।