ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ বাবুর মোবাইল ফোনে আদান-প্রদান হয়েছিল হত্যাকাণ্ডের শিকার সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের ছবি। মূল হত্যাকারী আমানুল্লাহ ওরফে শিমুল ভূঁইয়ার সঙ্গে বাবুর দফায় দফায় যোগাযোগ হয়েছিল। বাবু এই যোগাযোগ করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুর হয়ে। এমপি হত্যায় বাবু গ্রেপ্তার হলে তার ফোনে থাকা এসব ছবি এবং কথোপকথনে মিন্টু ফেঁসে যেতে পারেন, এ আশঙ্কায় বাবুর তিনটি ফোন নিয়ে নেন মিন্টু। এরপর সেগুলো ফেলা হয় ঝিনাইদহ শহরের পায়রা চত্বর সংলগ্ন দুটি পুকুরে। ফোনগুলো পুকুরে ফেলে দিলেও তা হারিয়ে গেছে বলে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন বাবু। তিনি এই কাজ করেছেন মিন্টুর কথামতো।
আনার হত্যার তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এমপি আনারকে ১৩ মে হত্যার পর শিমুল ভূঁইয়া দেশে ফিরে আসেন ১৫ মে। ১৬ মে রাতে
বাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করেন শিমুল। এক পর্যায়ে তারা ফরিদপুরের ভাঙ্গায় মিটিং করেন। তাদের মধ্যে এমপি আনারকে হত্যার ছবি আদান-প্রদান করা হয়। ১৭ মে থেকে ১৯ মে পর্যন্ত শিমুলের সঙ্গে বাবুর হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ ও এসএমএস আদান-প্রদান হয়। তারা আনার হত্যা ও পরবর্তী সময়ে টাকা-পয়সার লেনদেন নিয়ে আলাপ করেন।
ডিবির এক কর্মকর্তা জানান, বাবুকে গ্রেপ্তারের পর শিমুলের সঙ্গে ছবি আদান-প্রদানসহ ও অন্যান্য বিষয় স্বীকার করেছেন বাবু। স্বভাবতই প্রশ্ন আসে, তথ্য আদান-প্রদানে ব্যবহৃত মোবাইল ফোনগুলো কোথায়? শুরুতে বাবু জানান, তার ফোনগুলো ঝিনাইদহ শহরের টিকেসি কলেজের সামনে রাস্তার মোড় থেকে পায়রা চত্বর রাস্তার মোড়ে যাতায়াতের সময় হারিয়ে গেছে। তবে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদে তিনি স্বীকার করেন, তার তিনটি মোবাইল ফোন শহরের দুটি পুকুরে ফেলা হয়েছে। আর এ কাজটি করেছেন ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু।
তদন্ত সূত্র জানিয়েছে, বাবুর তিনটি ফোনের মধ্যে দুটি ফেলা হয়েছে পায়রা চত্বর সংলগ্ন পেট্রোল পাম্পের পেছনে একটি পুকুরে আর একটি ফোন ফেলা হয়েছে স্টেডিয়াম সংলগ্ন একটি পুকুরে। ফোনগুলো উদ্ধারে ডিবির টিম বাবুকে নিয়ে ঝিনাইদহে যাবে।
এদিকে গতকাল সোমবার কাজী কামাল আহমেদ বাবুর ব্যবহৃত তিনটি মোবাইল ফোন উদ্ধারে ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আতাউল্লাহর আদালত জামিন ও রিমান্ড নামঞ্জুর করে এ আদেশ দেন।
আদালতের শেরেবাংলা নগর থানার সাধারণ নিবন্ধন শাখার কর্মকর্তা উপপরিদর্শক জালাল উদ্দিন কালবেলাকে বলেন, আসামি বাবুর ফের রিমান্ড আবেদন করেছিলেন তদন্ত কর্মকর্তা। আদালত আসামি বাবুর রিমান্ড ও জামিন নামঞ্জুর করেছেন। একই সঙ্গে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে বাবুকে ঝিনাইদহ কারাগারে পাঠানোর জন্য কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপারকে নির্দেশ দিয়েছেন। সেখানে জেল সুপারের তত্ত্বাবধানে একজন ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে বাবুকে নিয়ে ডিবি পুলিশ অভিযান পরিচালনা করবে।
বাবুকে নিয়ে ঝিনাইদহে আলামত উদ্ধার অভিযান প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার ও ডিবিপ্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, আলামত নষ্ট করার তথ্য আমরাও জিজ্ঞাসাবাদে পেয়েছি। যেহেতু গ্যাস বাবুর (কাজী কামাল আহমেদ) মোবাইলে ডিজিটাল এভিডেন্স রয়েছে, তাকে আমরা আরও জিজ্ঞাসাবাদ করব এবং মোবাইল ফোনগুলো কোথায় ফেলে দিয়েছেন সেগুলো উদ্ধারের চেষ্টা করব।
এমপি আনার হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে বাবুকে গ্রেপ্তারের পর ৯ জুন আদালতে উপস্থাপন করে রিমান্ড আবেদন করে। আদালত সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পরে গত ১৪ জুন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসিমের আদালত তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করেন। ওইদিন জবানবন্দি শেষে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। এই মামলায় শিমুল ভূঁইয়া, তানভীর ভূঁইয়া ও শিলাস্তি রহমান আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এ ছাড়া গ্রেপ্তার ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুর রিমান্ড শেষে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।