কভিড-পরবর্তী সময়ে আমেরিকান নারীরা তাদের বাড়িতে শাকসবজি চাষ বা খামার তৈরি করেছেন। গ্রামের নারী কৃষকরাই মাটি পরীক্ষা ও সংরক্ষণ, ফসল ঢেকে রাখা, স্থায়ী গাছপালা, সার তৈরি এবং ফসল পরিবর্তনের মতো নানা টেকসই কৌশলের চর্চা বেশি করছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অনেক বড় বাণিজ্যিক খামারও তাদের দেখানো পথ অনুসরণ করছে।
নারী কৃষকদেরই ‘স্লো ফুড মুভমেন্টে’-এর নেতৃস্থানীয় পর্যায়ে দেখা যাচ্ছে, যা ভোক্তাদের অর্গানিক ও স্থানীয় খাদ্য কিনতে উৎসাহিত করে।
স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্যের প্রতি ভোক্তাদের আগ্রহ ক্রমেই বাড়ছে।
অন্যদিকে কৃষি উৎপাদনে সম্পৃক্ত হচ্ছেন এমন নারীর সংখ্যাও বাড়ছে দ্রুতগতিতে। ২৮ বছর ধরে নিউইয়র্কের কুইন্সের হলিস সিটিতে বসবাস করছেন মমতা দেবী ভৌমিক। গ্রীষ্মকালে বাড়ির পেছনের আঙ্গিনায় এবং টবে চাষাবাদ করেন লাউ, বেগুন, করলা, শিম, চালকুমড়া, মিষ্টি কুমড়া, কচু, বেগুন, বরবটিসহ নানা রকম সবজি, লেবু, কমলালেবু।
মমতা দেবী ভৌমিক বলেন, নিজের হাতে লাগানো লাউ গাছ থেকে লাউ, শাক পেড়ে রান্না করার আনন্দই অন্যরকম। সবজিগুলো তাজা ও সতেজ থাকে। এ ছাড়া গাছের সবজি হওয়ায় অর্থনৈতিক সাশ্রয়ও হয়।
শুধু বাড়ির আঙিনায়ই নয়, নারীদের মালিকানায় থাকা টেকসই খামারগুলো তাদের কমিউনিটির কাছে স্বাস্থ্যকর খাবার বিক্রি করছে। তারা তাদের ব্যবসায়িক সম্পর্ক গড়ে তুলছে গ্রামীণ ও শহরের দুই ধরনের ক্রেতাদের সঙ্গেই। অনেক নারী কৃষক ক্রেতাদের পুষ্টি ও কৃষি সম্পর্কে শেখাচ্ছেন, স্কুলে ও গৃহহীন মানুষের মধ্যে খাবার বিতরণ করছেন, কমিউনিটি প্রকল্পে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছেন বা লাভজনক ব্রেড অ্যান্ড ব্রেকফাস্ট ফ্যাসিলিটি বা খুচরা পণ্যের দোকান পরিচালনা করছেন, যেগুলো অন্যান্য স্থানীয় ব্যবসায়ীর পণ্য মজুত করে রাখে।
রেহেনা আক্তার লিপি ১৬ বছর ধরে নিউইয়র্ক প্রবাসী। গরমের মৌসুমে বাড়ির করিডোরে, মিষ্টি কুমড়া, লাউ, পুঁইশাক ইত্যাদির আবাদ করেন। তিনি বলেন, নিজের পরিবারের শাকসবজির চাহিদা মিটিয়েও প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজনদের মধ্যেও বিতরণ করি। শুধু বাঙালি প্রবাসী নারীরাই নন, আমেরিকানরাও খামার তৈরি করছেন। ‘আমি মানুষ ও তাদের খাদ্যের মধ্যে একটি সম্পর্ক তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি’—বলেছেন ভিসার দুয়ানে। যিনি ১৯৮১ সালে কলম্বিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান এবং ওহাইওতে তার স্বামীর সঙ্গে পার্পল স্কাইস ফার্ম পরিচালনা করেন। ‘আমাদের ব্রেড অ্যান্ড ব্রেকফাস্ট বা খামারের বাজারে যখন অতিথি আসেন, তখন তারা দেখতে পান, এসব পণ্য কোথা থেকে আসে এবং মানসম্পন্ন পণ্য তৈরির জন্য কতটা শ্রম দিতে হয় ও যত্ন নিতে হয়।’
কভিড-১৯ মহামারি যখন খাদ্য সরবরাহ ও পরিবহনে বিঘ্ন ঘটাচ্ছিল, প্রত্যন্ত এলাকায় খাদ্য পৌঁছানো জটিল করে তুলেছিল, তখন নারী কৃষকরা তাদের কমিউনিটির সাহায্যে এগিয়ে এসেছিলেন।
‘সেলডোভিয়াতে পরিস্থিতিটা ছিল ভীতিকর’, সেই সময়ের স্মৃতি স্মরণ করে বলেছেন আলাস্কার সেলডোভিয়ার রোসানা ম্যাকইনেস। খাদ্যের ঘাটতি আসন্ন ছিল। আমার প্রতিবেশী বলেছিলেন, বাগানে উৎপাদিত সবজিগুলো বিক্রি করা উচিত। আমি তাই করেছিলাম। তবে দ্রুতগতিতে বিক্রি করতে পারছিলাম না, আর তখনই আমার বাগানের পরিধি বাড়ানো এবং কমিউনিটির জন্য খাদ্যের জোগান দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।
মন্তব্য করুন