

প্রায় চার বছর বিরতি কাটিয়ে বরিশাল-ঢাকা নৌরুটে ফিরেছে শতবর্ষী ঐতিহ্যবাহী প্যাডেল স্টিমার ‘পিএস মাহসুদ’। এবার এটি সাধারণ যাত্রী পরিবহনের বদলে ‘পর্যটক সার্ভিস’ হিসেবে যাত্রা শুরু করেছে।
শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ৮টায় ঢাকা থেকে বরিশালের উদ্দেশে যাত্রা করে এই ঐতিহাসিক নৌযানটি।
পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী শুক্রবার সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে বরিশালে পৌঁছালেও ঘাট সংকটের কারণে স্টিমারটি নদীবন্দরে না ভিড়িয়ে অদূরে বধ্যভূমি সংলগ্ন ত্রিশ গোডাউনে কীর্তনখোলা নদীতীরে নোঙর করতে হয়।
এ সময় বরিশালের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার আহসান হাবিব এবং জেলা প্রশাসক মো. খায়রুল আলম সুমনসহ বিআইডব্লিউটিসি কর্মকর্তারা ফুল দিয়ে বরণ করে নেন পর্যটকদের।
বিআইডব্লিউটিসি সূত্রে জানা গেছে, রাষ্ট্রীয় নৌবাণিজ্য প্রতিষ্ঠান বিআইডব্লিউটিসির ঐতিহ্যবাহী প্যাডেল চালিত যাত্রীবাহী নৌযান ‘পিএস মাহসুদ’ শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টায় ঢাকা থেকে ছেড়ে দুপুর ১টার দিকে জাহাজটি চাঁদপুর ঘাটে ১০ মিনিটের জন্য নোঙর করে। যদিও চাঁদপুর থেকে কেউ আরোহন করেনি। প্রথম দিন ৯৬০ যাত্রীবহনক্ষম জাহাজটিতে মোট ৪০ জন ভ্রমণ করেন। এর মধ্যে ২০ জন বরিশাল এবং বাকিরা চাঁদপুরে নেমে যান। এর আগে গত ১৫ ও ২১ নভেম্বরও যাত্রী সংকটের কারণে নৌযানটি যাত্রা বাতিল করতে বাধ্য হয়।
বরিশালের জেলা প্রশাসক মো. খায়রুল আলম সুমন বলেন, প্যাডেল জাহাজ এই অঞ্চলের ঐতিহ্য। এটা যাতে বন্ধ না হয়, যাতে লোকসান না হয় সেই উদ্যোগ সবার নিতে হবে। জাহাজটিতে একটি মিউজিয়াম রয়েছে, যেখানে পুরনো টেলিফোনসহ বিলুপ্ত মালামাল সাজিয়ে রাখা হয়েছে। এই জাহাজ আরও জনপ্রিয় কিভাবে করা যায় সে বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব ড. মহিউদ্দিন আহমেদ প্রথম যাত্রায় পর্যটক হিসেবে ভ্রমণ করে বলেন, এই জাহাজটি দক্ষিণাঞ্চলের ঐতিহ্য। এটা যেন সবাই রক্ষা করে। জাহাজ ভ্রমণে আগের মতোই আরামদায়ক। তবে এখন যেমন আধুনিক হয়েছে, তেমন সুবিধাও বেড়েছে।
অন্য যাত্রীরা সময় ও গন্তব্য আরও যাচাই-বাছাই করে নৌযানটি পরিচালনা করা হলে যাত্রী সংকট কেটে যাবে বলে মত দেন। সেসঙ্গে ভাড়া কমানোরও দাবি জানান তারা।
বিআইডব্লিউটিসি কর্তৃপক্ষ ঢাকা-বরিশাল রুটে প্রথম শ্রেণিতে জনপ্রতি ভাড়া ২ হাজার ৬৬০ টাকা, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ১ হাজার ৬৫০ টাকা এবং ডেক শ্রেণিতে ৬০০ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করেছে। পিএস মাহসুদ প্রতি শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টায় ঢাকা থেকে এবং প্রতি শনিবার সকাল সাড়ে ৮টায় বরিশাল থেকে যাত্রা করবে।
উল্লেখ্য, পিএস মাহসুদ ১৯২২ সালে কলকাতার গার্ডেন রিচ ওয়ার্কশপে নির্মিত হয়। ১৯৮৩ সালে বেলজিয়ামের সহায়তায় স্টিমারটির স্টিম ইঞ্জিনকে ডিজেল ইঞ্জিনে রূপান্তর করা হয়। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে বন্ধ হওয়ার পূর্বে নৌযানটি টানা প্রায় ২৫ বছর ঢাকা-বরিশাল-খুলনা ও ঢাকা-বরিশাল-মোড়েলগঞ্জ নৌপথে যাত্রী পরিবহন করত।
মন্তব্য করুন