খায়রুল আনোয়ার
প্রকাশ : ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:১৫ এএম
আপডেট : ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:৩৮ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

গণমাধ্যম: স্বাধীনতা আছে, স্বাধীনতা নেই

গণমাধ্যম: স্বাধীনতা আছে, স্বাধীনতা নেই

দেশের গণতন্ত্রের সঙ্গে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রশ্নটি জড়িত। গণতন্ত্র না থাকলে সংগত কারণেই গণমাধ্যমও মুক্ত ও স্বাধীনভাবে চলতে পারে না। দেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন যেমন স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত নিরঙ্কুশভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়নি, গণমাধ্যমের স্বাধীনতাও তেমনি এখনো স্থায়িত্ব পায়নি

দেশের গণমাধ্যম স্বাধীন, এক কথায় কি এ সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যাবে? অথবা গণমাধ্যম স্বাধীন না দৃশ্যমান অবস্থা (বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময় বাদ দিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে) বিবেচনা করে এ কথাও কি জোর দিয়ে বলা যাবে? স্বাধীনতার ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে শাসকশ্রেণি, রাজনৈতিক অঙ্গন এবং সাংবাদিক মহলে আলোচনা, সমালোচনা ও বিতর্ক চলছে। স্বাধীনতার পর থেকে পতিত স্বৈরাচারী সরকারের আমল পর্যন্ত কোনো সরকারের আমলেই গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিরঙ্কুশভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন আইন তৈরি করা হয়েছে। বিভিন্ন সময় গণমাধ্যম বন্ধ করা হয়েছে। সব সরকারের আমলেই সম্পাদক ও সাংবাদিক গ্রেপ্তার হয়েছেন। তবে সব আমল ছাড়িয়ে গেছে স্বৈরাচারী শাসক শেখ হাসিনার শাসনকাল। এ সময় সংবাদপত্র বন্ধ করা হয়েছে। সাংবাদিক-সম্পাদককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের নামে যেমন অসংখ্য মামলা দেওয়া হয়েছে, তেমনি দুই-তিনজন সম্পাদকের নামে ৭০-৮০টা করে মামলা দিয়ে বিপর্যস্ত করা হয়েছে। বিজ্ঞাপন বন্ধ করার জন্য বড় বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠান ও বিজ্ঞাপনদাতাদের এক ধরনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রায় সব গণমাধ্যমকে গোয়েন্দা নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে। স্বৈরাচারী সরকারের দৃষ্টিতে ‘বৈরী’ হিসেবে বিবেচিত গণমাধ্যমের সম্পাদক, সাংবাদিকদের অনেককেই গোয়েন্দা সংস্থার কার্যালয়ে ডেকে পাঠানো হতো। এ প্রসঙ্গে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা এ লেখাতেই জানাব।

গত ১৫ বছরের টিভি টকশোতে কখনো কখনো কোনো আলোচকের সরকারের কঠোর সমালোচনা বা সংবাদপত্রে সরকারের দুর্নীতি বা অব্যবস্থা নিয়ে খবর প্রকাশকে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার মাপকাঠি হিসেবে বিবেচনা করার সুযোগ নেই। শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলনে টিভি টকশোতে তার সরকারের বিরুদ্ধে কারও কারও সমালোচনাকে বড় করে দেখিয়ে বলতেন—‘সরকারের বিরুদ্ধে কী না বলা হচ্ছে? যা খুশি তাই বলা হচ্ছে, সরকার তো এতে কোনো বাধা দিচ্ছে না, এরপরও বলা হবে মিডিয়ার স্বাধীনতা নেই?’ দৃশ্যত এ বক্তব্যকে সত্য বলে মনে হলেও বাস্তব চিত্র সম্পূর্ণ বিপরীত।

স্বাধীনতার পর গণমাধ্যমের পরিস্থিতি সম্পর্কে উল্লেখ করতে হয় যে, বাকশাল কায়েমের সময় চারটি সংবাদপত্র রেখে বাকি সব সংবাদপত্রের প্রকাশনা বন্ধ করা হয়। ‘হলিডে’ সম্পাদক এনায়েত উল্লাহ খানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। ‘দৈনিক গণকণ্ঠ’ সম্পাদক কবি আল মাহমুদকেও লেখালেখির জন্য শেখ মুজিবুর রহমানের শাসন আমলে কারাদণ্ড ভোগ করতে হয়। জিয়াউর রহমানের আমলে সাংবাদিক জহুর হোসেন চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। এরশাদের শাসনামলে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়েছিল দৈনিক বাংলার (বিলুপ্ত) সহকারী সম্পাদক ও ‘স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই’ শীর্ষক শিরোনামের জনপ্রিয় কলাম লেখক নির্মল সেন এবং বিবিসিখ্যাত সাংবাদিক আতাউস সামাদকে। এরশাদের আমলেই ‘সাপ্তাহিক বিচিত্রা’ সম্পাদক মিনার মাহমুদকেও জেলে পোরা হয় এবং পত্রিকাটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। খালেদা জিয়ার প্রথম সরকারের আমলে ‘দৈনিক জনকণ্ঠে’র উপদেষ্টা সম্পাদক তোয়াব খান, নির্বাহী সম্পাদক বোরহান আহমেদ এবং সহকারী সম্পাদক এ টি এম শামসুদ্দীনকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

আর শেখ হাসিনার আমলে গ্রেপ্তার ও নিপীড়নের শিকার হওয়া সাংবাদিকের তালিকা অনেক দীর্ঘ। ২০২১ সালে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার মানদণ্ডে বিশ্বের ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৫২তম স্থানে ছিল বাংলাদেশের অবস্থান। একটি মানবাধিকার সংগঠনের হিসাব অনুযায়ী, শুধু ২০২০ সালে দেশে সরকারের বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সরকারি কর্মকর্তা, ভোটারবিহীন নির্বাচনের জনপ্রতিনিধি, সরকারি দলের নেতাকর্মী ২৪৭ জন সংবাদকর্মীর ওপর শারীরিক নির্যাতন ও হামলা চালিয়েছে। আর মামলা তো আছেই। শফিক রেহমানকে জেলে পাঠানো হয়েছে। বন্ধ করা হয়েছে ‘আমার দেশ’ পত্রিকা। রাতের বেলা পুলিশ দিয়ে অনেকটা কমান্ডো স্টাইলে পত্রিকা অফিস থেকে সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দিয়ে মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দেওয়া হয়। একটি মামলায় জামিন নেওয়ার জন্য কুষ্টিয়ায় গেলে সরকারি দলের নেতাকর্মীরা মাহমুদুর রহমানের ওপর হামলা চালিয়ে তাকে রক্তাক্ত করে। একটি টকশোতে দেওয়া বক্তব্যের জন্য ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন স্থানে মামলা দেওয়া হয়। তাকেও কারাগারে পাঠানো হয়েছিল।

স্বৈরাচারী সরকার হেফাজতে ইসলামের মতিঝিল শাপলা চত্বরের সমাবেশ সরাসরি সম্প্রচারের জন্য দিগন্ত টিভি, ইসলামী টিভি বন্ধ করে দেয়। বিএনপির পত্রিকা হিসেবে পরিচিত ‘দৈনিক দিনকালের’ প্রকাশনাও বন্ধ করে সরকার। বন্ধ করে দেওয়া হয় ‘চ্যানেল ওয়ান’। ১/১১-এর সেনা সমর্থিত সরকার দেশের প্রথম নিউজ চ্যানেল ‘সিএসবি’ বন্ধ করে দেয়। শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলনে, টিভি টকশোতে তার সরকারের বিরুদ্ধে ‘যা খুশি বলা হয়’ দাবি করলেও বাস্তব চিত্র ভিন্ন। ‘নিউ এজ’ সম্পাদক নুরুল কবির টিভি টকশোতে এক প্রকার নিষিদ্ধ ছিলেন। তার স্পষ্টবাদিতা ও সাহসের জন্য অনেক টিভি কর্তৃপক্ষ টকশোতে ডাকতেন না। বর্তমান আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলও টিভি টকশোতে এক ধরনের নিষিদ্ধ ছিলেন।

গোয়েন্দা সংস্থা প্রতিটি টিভি চ্যানেলের খবর ও টকশো মনিটর করত। এজন্য সংস্থার কিছু লোকজনকে আলাদাভাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। সরকারের জন্য ‘ক্ষতিকর’ বিবেচনায় টকশো এবং নির্দিষ্ট কোনো খবরের বিষয়ে গোয়েন্দা সংস্থা তাদের দপ্তরে ডেকে নিয়ে কৈফিয়ত চাইত। একই সঙ্গে দেখাত ভয়ভীতি। এ প্রসঙ্গে নিজের এবং সহকর্মীর অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। আমি তখন এনটিভিতে বার্তাপ্রধানের দায়িত্বে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায় হাসিনা সরকার। চেয়ারপারসনকে কারাগারে পাঠানো হলো, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে, এ পরিস্থিতিতে দল কীভাবে চলবে, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী? এসব বিষয় আলোচনার জন্য টকশোতে ওইদিন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। টকশোর উপস্থাপক ছিলেন প্রধান বার্তা সম্পাদক জহিরুল আলম (বর্তমানে বার্তাপ্রধান)। পরদিনের টকশোর জন্য অতিথি হিসেবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফকে ঠিক করা হয়। হানিফ সেই সময় দলের মুখপাত্র হিসেবে নিয়মিত ব্রিফিং করতেন। মির্জা ফখরুলের টকশো রেকর্ডেড ছিল। প্রচার শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পর গোয়েন্দা সংস্থা থেকে জহিরুল আলমকে ফোন করে আমাকেসহ পরদিন বেলা ১১টায় ডিজিএফআইয়ের দপ্তরে যেতে বলা হয়। আমরা দুজন গোয়েন্দা সংস্থার অফিসে নির্ধারিত সময়ে পৌঁছালে বেশ কিছু সময় একটি কক্ষে বসিয়ে রাখা হয়। এরপর আরেকটি কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। বেশ কিছু সময় পর একজন কর্নেল এসে আমাদের সঙ্গে কথা বলা শুরু করেন। এর আগে কোথায় কোথায় সাংবাদিকতা করেছি, কত বছর ধরে পেশায় আছি, কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে অতীতে সংশ্লিষ্টতা ছিল কি না এবং এখনো আছে কি না ইত্যাদি জানতে চান। এরপর কেন এনটিভিতে খালেদা জিয়ার গ্রেপ্তার নিয়ে টকশো করা হলো, যেন কৈফিয়ত চাইছেন, এমনভাবে প্রশ্ন করলেন। আমরা এ বিষয়ে আমাদের বক্তব্য দেওয়ার পর টকশোতে কেন আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকে রাখা হলো না জানতে চাইলেন। আমরা আমাদের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে বললাম যে, আজ রাতে মাহাবুবউল আলম হানিফকে নিয়ে টকশো প্রচারিত হবে। গোয়েন্দা সংস্থার কর্নেল এতে অসন্তোষ জানিয়ে কেন ওবায়দুল কাদেরকে অতিথি করা হলো না প্রশ্ন করলেন। ওবায়দুল কাদের কোনো টিভি চ্যানেলের টকশোতে যান না, এ তথ্য জানানোর পর কর্নেল বললেন যে, ‘আমাদের জানাতেন আমরা ঠিক করে দিতাম।’ এ পর্যায়ে এসে গোয়েন্দা কর্মকর্তা অনেকটা হুমকির সুরে বললেন, ‘আগামীতে এ ধরনের কিছু করা হলে আমাদের হাতে তিনটি অপশন আছে। প্রথমত আপনারা অফিস করবেন, থাকবেন, টিভি সম্প্রচারও থাকবে, কিন্তু মাস শেষে বেতন পাবেন না। অর্থাৎ এনটিভিতে সব কমার্শিয়াল বিজ্ঞাপন বন্ধের ব্যবস্থা করা হবে। দ্বিতীয়টি হলো, ২৪ ঘণ্টা ঠিকই চালু রাখবেন কিন্তু দেশের কোথাও এনটিভি দেখা যাবে না। অর্থাৎ শুধু অপারেটর বা বিটিআরসির মাধ্যমে সম্প্রচার বন্ধ করে দেওয়া হবে। আর শেষ অপশন হলো এনটিভির লাইসেন্স বাতিল করে দেওয়া, যা সরকার যে কোনো সময় করতে পারে।’ গোয়েন্দা কর্মকর্তার জিজ্ঞাসাবাদ ও প্রচ্ছন্ন হুমকির পর আমি ও জহির অফিসে চলে আসি। এরপর আরও একদিন জহিরকে ডিজিএফআই অফিসে যেতে বলা হয়। এই অভিজ্ঞতা শুধু আমাদের নয়, গোয়েন্দা সংস্থা হরহামেশা অনেক টিভি মিডিয়ার বার্তা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্তদের ডেকে পাঠাত।

স্পষ্টভাষী ও সাহসী সম্পাদক হিসেবে পরিচিত নুরুল কবীর কীভাবে তার পত্রিকা সরকারের বিজ্ঞাপন বঞ্চিত হয়েছে, এক সাক্ষাৎকারে সে কথা জানিয়েছেন। ২০২১ সালের ১৫ জুন ‘দৃক নিউজ’-এর পোর্টালে প্রকাশিত দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে স্বৈরাচার সরকারের আমলে গণমাধ্যম কতখানি বিরূপ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে চলছে, তা বর্ণনা করেছেন। নুরুল কবীর নিউ এজে সরকারি বিজ্ঞাপন না পাওয়া প্রসঙ্গে সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘সরকারি দলের একটি প্রভাবশালী অংশ এবং দলবাজ ক্ষমতাবান আমলাদের অধিকাংশই এ কাগজটিকে অপছন্দ করে বললে অনেক কম বলা হবে; তারা বরং কাগজটির বিলুপ্তি কামনা করে। নিউ এজ পত্রিকার জন্য ইস্যু করা একটি বিজ্ঞাপন একজন মন্ত্রী কেটে দিয়েছেন। অন্য এক মন্ত্রীর অভিন্ন নির্দেশনার কথা ও কানে এলো। সরকারের কাছে বিজ্ঞাপন বাবদ প্রাপ্ত বিলের টাকা বছরের পর বছর ঝুলিয়ে রাখা হয়। নিউ এজে বেসরকারি খাতের বিজ্ঞাপন সরবরাহ বন্ধ করার জন্য কিছু সরকারপন্থি লোক তৎপর থাকেন। এগুলো সবই স্বাধীনচেতা গণতন্ত্রপরায়ণ সংবাদমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের কণ্ঠরোধ করার জন্য পত্রপত্রিকার আর্থিক সামর্থ্যকে খর্ব করে দেওয়ার সরকারি নীতি।’ নুরুল কবীর মনে করেন, বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমের নিরঙ্কুশ গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা কোনোকালেই ছিল না, এখনো নেই।

এখানে উল্লেখ করতে হয় যে, স্বৈরাচারী সরকারের সময় প্রথম আলো পত্রিকার সম্পাদক ও সাংবাদিক হয়রানির শিকার হন। সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম দুর্নীতির অনুসন্ধান করতে গিয়ে রাষ্ট্রীয় গোপন নথি সরানোর অভিযোগে গ্রেপ্তার হন। গ্রেপ্তারের আগে রোজিনা ইসলাম সংবাদ সংগ্রহে বাংলাদেশ সচিবালয়ে স্বাস্থ্য বিভাগে গেলে সরকারি কর্মকর্তারা তাকে পাঁচ ঘণ্টা আটক করে রাখে ও হেনস্তা করে। প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন জেলায় অসংখ্য মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়। ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধেও দেশের বিভিন্ন স্থানে মামলা দিয়ে হয়রানি করার একই পথ বেছে নেয় সরকার।

গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করা প্রসঙ্গে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক আলী রীয়াজ ভয়ের সংস্কৃতি গ্রন্থে বলেন, ‘স্বাধীনতার পর গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধী আইনের অভাব হয়নি। ১৯৭৩ সালে প্রিন্টিং অ্যান্ড পাবলিকেশন অ্যাক্টের মতো আইনও প্রণীত হয়েছে। সামরিক শাসনের সময় ফরমানের মাধ্যমেও গণমাধ্যমের ওপরে নিয়ন্ত্রণ চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। মিডিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ২০টি আইন সহজেই শনাক্ত করা যায়, যেগুলোর ভেতরে গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের উপাদান নিহিত আছে।’ অধ্যাপক রীয়াজ তার গ্রন্থে লিখেছেন, ‘ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে অভিযুক্ত এবং আটক ব্যক্তিদের প্রত্যেকের জন্য এই আইন এক বিভীষিকার জন্ম দেয়। সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজলের বিভীষিকা মনে হয় অন্তহীন। ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও একজন সংসদ সদস্য কাজলের বিরুদ্ধে এই আইনে মামলা দায়ের করার পরেই কাজল নিখোঁজ হয়ে যান ২০২০ সালের ১০ মার্চ। ৫৩ দিন গুম হয়ে থাকা কাজলকে পাওয়া যায় ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে। তাকে কেবল অবৈধ অনুপ্রবেশের মামলা মোকাবেলা করতে হচ্ছে তা নয়, ৯ মাস কারাগারে কাটাতে হয়েছে। তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের তিনটি মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।’

দেশের গণতন্ত্রের সঙ্গে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রশ্নটি জড়িত। গণতন্ত্র না থাকলে সংগত কারণেই গণমাধ্যমও মুক্ত ও স্বাধীনভাবে চলতে পারে না। দেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন যেমন স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত নিরঙ্কুশভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়নি, গণমাধ্যমের স্বাধীনতাও তেমনি এখনো স্থায়িত্ব পায়নি। এ অবস্থার অবসান হবে কি না, অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন সংস্কার কর্মসূচি এবং তার আলোকে আগামী নির্বাচনে গঠিত সরকার গণতন্ত্র সুপ্রতিষ্ঠিত করে কি না, তার ওপরই গণমাধ্যমের স্বাধীনতার বিষয়টি নির্ভর করছে।

লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও বিশ্লেষক

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

শুরু হচ্ছে ‘ফ্রাইডে নাইট উইথ জায়েদ খান’ 

আশ্বাসে বছর যায়, নদী গিলে খায় জীবনের সবটুকু

আবু সাঈদ হত্যায় মিলেছে ৩০ জনের সম্পৃক্ততা

পুরুষের বন্ধ্যত্ব বাড়াতে পারে যেসব খাবার

গণডাকাতি করে বোমা ফাটিয়ে পালাল ডাকাতরা

ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে যাচ্ছে আরও মুসলিম দেশ?

লতাপাতা দিয়ে ঢেকে রাখা হয় নারীর গলাকাটা মরদেহ

মাথায় গুলি ঠেকিয়ে প্রকাশ্যে বিপুল টাকা ছিনতাই

কমেছে স্বর্ণের দাম, কত টাকা ভরি আজ

স্ত্রী অল্পতেই রাগছেন? জেনে নিন বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ 

১০

টাঙ্গুয়ার হাওরে ৫ পর্যটকের কারাদণ্ড

১১

৪ স্কুলছাত্রীকে আটকে রেখে ধর্ষণের অভিযোগে শিক্ষক গ্রেপ্তার

১২

রোজা কবে শুরু হতে পারে, জানাল আমিরাত

১৩

‘মহান এই নায়ককে ক্ষমা করে দেওয়া উচিত’

১৪

ঢাকায় হালকা বৃষ্টির আভাস

১৫

পুকুরে দেখা মিলল কুমিরের

১৬

শিক্ষকের ভুলে পরীক্ষা দেওয়া হলো না দুই শিক্ষার্থীর

১৭

সন্ধ্যায় জানা যাবে পবিত্র আশুরার ছুটি কবে

১৮

দুই সপ্তাহ আগে যুক্তরাজ্যের যুদ্ধবিমান ভারতে নেমেছিল কেন

১৯

বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধাসহ চাকরি দিচ্ছে আকিজ গ্রুপ

২০
X