চেনা তারকাকেও ডাকা যায় নতুন নামে। অভিনেত্রী মিতুকে কবি, সোহানাকে যোগী আর ভাবনাকে চিত্রকর ভাবলে ক্ষতি কী! তারকাদের ভেতরে নতুন আলোর সন্ধান করেছেন শিবলী আহমেদ-
‘কবিতার আশ্রয়ে বাঁচি’
‘কালো বর্ণে কখনো আনন্দ মেশাই, কখনো আবার তাতে যাতনা মিশিয়ে উগরে দিই সাদা কাগজে। লোকে সেটাকেই কবিতা বলে’—কবিতার প্রশ্নে এমন উত্তরই দিলেন চিত্রনায়িকা জাহারা মিতু। ঝলমলে পর্দার বাইরে তিনি একজন কবি। পাথরে যেমন আগুন লুকিয়ে থাকে, মিতুর কবিতায় ঠিক সেভাবেই সুপ্ত থাকে প্রেম ও বিচ্ছেদের অনুভূতি। অভিনেত্রীর ভাষ্য, প্রতিটি মানুষের জীবনের অনুভূতিই ভিন্ন। সেই অনুভূতিই হলো কাব্যের বিষয়বস্তু। পাঠকের সঙ্গে খুব সহজেই বোঝাপড়া ঘটে তার কবিতার। কবি মিতুও মনে করেন, কবির তৃতীয় চোখ শক্তিশালী হলে তিনি পাঠকের অনুভূতিও বুঝতে পারেন। কবিতাকে আশ্রয় করেই বেঁচে থাকতে চান এই অভিনেত্রী। কালবেলার আজকের আয়োজনে পাঠককে একটি কবিতা উপহার দিয়েছেন জাহারা মিতু।
পরিক্রমা
তোমার যৌবন যখন অন্য কারো নামে
প্রতিটি সূর্যাস্ত এবং সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে
তখন একটু একটু করে বুড়িয়ে যাচ্ছি আমি।
চাতক পাখির মতন চেয়ে অদূর ভবিষ্যৎ পানে
অপেক্ষা করছি হয়তো কোনো একদিন
দরজার কড়া নাড়বে এক জোড়া বৃদ্ধ হাত!
মোটা ফ্রেমের চশমার আড়ালে অস্পষ্ট এক তুমি।
কম্পনরত কণ্ঠস্বরে ফোকলা দাঁতের আড়ালেই বলবে,
“জানি, সব ছেড়ে আসতে বড্ড দেরি হয়ে গেলো!!
এখনও আমায় ভালোবাসো তো? ঠিক আগেরই মতন?
যদি নাও বাসো, ক্ষতি নেই। আমি তো বরাবরই স্বার্থপর।
আবারো এসেছি নিজ স্বার্থে। এবার না হয় আমিই ভালোবাসি।”
জীবনের অব্যক্ত সব হিসাব মিলিয়ে সেদিন আমি বুঝবো,
ভালোবাসতে বাসতে অজান্তেই কতোটা ঘৃণা করেছি তোমায়।
এতোদিনের অপেক্ষাও হয়তো নিজেকে জেতানোর জন্যেই,
ফিরতে যে তোমায় হতোই!!
আমার থেকে কখনোই তোমায় কেউ বেশি ভালোবাসতে পারেনি,
আমার থেকে কখনোই তোমায় কেউ ভালো রাখতে পারেনি,
কপালের সবটুকু পেয়ে যাবার পরও সেদিন অতৃপ্ত তুমি।
তোমার ফিরে আসা তাই মূল্যহীন,
যেমন সেই বয়সে মূল্যহীন ঘরজুড়ে ছুটে বেড়ানো
হাসতে থাকা আমার লাল টুকটুকে বউ সাজার ইচ্ছা।
রবিঠাকুরের “একলা চলো” নীতি বুকে নিয়ে জীবনের সায়াহ্নে
এসে যখন নিজ এপিটাফের মুদ্রণ খোঁজায় ব্যস্ত আমি
সে বয়সে আমার কাছে প্রেম হলো আদিখ্যেতা, বিলাসিতা।।
(সংক্ষেপিত)
রঙের ভাবনা তুলির ভাবনা
নাচে ও অভিনয়ে আশনা হাবিব ভাবনার মুনশিয়ানা প্রমাণিত। এবার প্রতিভা ছড়াচ্ছেন ক্যানভাসে। রং-তুলির আঁচড়ে জানিয়ে দিচ্ছেন নিজের নতুন পরিচয়। নিজের আঁকা কিছু ছবি পাঠকের মনের কাছাকাছি পাঠিয়েছেন কালবেলার মাধ্যমে।
ভাবনা ব্যক্ত করেছেন নিজের ‘সৃজন ভাবনা’। বলেছেন, আমরা যখন পেইন্টিং দেখি অথবা কবিতা শুনি, তখন সেটিকে নিজর মতো করে নিই। শিল্পকর্মের ব্যাখ্যা দেওয়াকে আমি ঠিক মনে করি না। কারণ আমি যেই ছবিটা এঁকেছি, সেটা মানুষ কীভাবে নেবে, তা নিতান্তই মানুষের ব্যাপার।
এ অভিনেত্রী আরও বললেন, ‘একটি ছবিকে মানুষ নানানভাবে ব্যাখ্যা করতে পারেন। ওই জায়গা থেকে আমার মনে হয় না যে একজন আর্টিস্ট হিসেবে পেইন্টিংয়ের ব্যাখ্যা দেওয়া আমার কর্তব্য। আমি মনের কোন ভাব মিশিয়ে ছবি এঁকেছি, সেটা আমি ব্যক্ত করতে চাই না।’
‘ইয়োগার সমুদ্রে নিজেকে সমর্পণ করেছি’
‘আমি কখনো জিমে যাইনি’—অভিনেত্রী সোহানা সাবার মুখে এ কথা শুনলে চমকে যাওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। বড় পর্দায় এ তারকাকে বরাবরই বেশ স্লিম দেখে অভ্যস্ত দর্শকরা। তাছাড়া নায়িকাদের ‘ফিট বডি’ মানেই যে জিমে গিয়ে ঘাম ঝরানো, এ আর নতুন কী! কিন্তু সোহানা সাবা অস্বীকার করলেন সেটাকেই। ভারী যন্ত্র তুলে কসরত করা তার ধাঁচে সয় না।
ছোটবেলা থেকে নাচ শেখাই হয়তো সোহানার এ পাফেক্ট ফিটনেসের কারণ। কিন্তু তাতেও অভিনেত্রীর ‘না’! জানালেন, তার ফিটনেসের পেছনে আছে ইয়োগা। মানে যোগব্যায়াম আরকি। তবে ‘যোগব্যায়াম’ শব্দটা যতটা হালকা করে বলা হলো, সোহানার কাছে বিষয়টা কিন্তু মোটেও সামান্য নয়। এ ব্যায়ামের আসন, প্রাণায়াম ও ধ্যানের সঙ্গে তার ১৬ বছরের মিতালি! সোশ্যাল মিডিয়ায় যারা সোহানার ওপর চোখ রাখেন, তারা মাঝেমধ্যেই তার এ ধরনের ব্যায়ামের ছবি দেখতে পান। অভিনয়ের পাশাপাশি এ ইয়োগাই এখন তার সব চৈতন্যজুড়ে আছে!
২০০৭ সালের কথা, কেবল যোগসাধনা শুরু করেছেন সোহানা। তখন এ বিষয়ে তার এতটা আগ্রহ ছিল না। সময়ের আবর্তে এর গভীরে গিয়ে ইয়োগাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে নিয়েছেন এ অভিনেত্রী! এমনকি ‘ইয়োগিস (yogis) নামে একটি প্রতিষ্ঠানও চালু করবেন এ মাসে। তিনিই হবেন সেটির প্রশিক্ষক। তবে মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর ‘মাস্টারি’ করা তার একমাত্র উদ্দেশ্য নয়। নিজের জন্যও এটি জরুরি। বললেন, ভুলভাবে যোগব্যায়াম করলে হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সোশ্যাল মিডিয়ার বদৌলতে তার নিউজ ফিডে অনেক যোগচর্চাকারীর ভিডিও আসে। কিন্তু সেখানে তিনি কিছু ভুল দেখতে পান। ইয়োগা নিয়ে ছোট-বড় নানান কোর্স করা হয়েছে সোহানার। তাই এ বিষয়ের সূক্ষ্ম ত্রুটিও তার চোখ এড়ায় না। ইয়োগায় ‘তিল-সম’ ভুলে ‘তাল-সম’ ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে—এমন সতর্কবার্তাই দিলেন মধ্যবর্তিনী সিরিয়ালে অভিনয় করে প্রশংসা কুড়িয়ে নেওয়া এ অভিনেত্রী।
নিজের প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান ইয়োগিসে তালিম দেবেন সোহানা নিজেই। ইয়োগার প্রকারভেদের প্রশ্নে তিনি এ বিষয়ে তার জানাশোনার ঝাঁপি উপুড় করে দিয়ে বললেন, আমি ‘ঋষি কেশ’-এ গিয়ে উপলব্ধি করতে পারলাম ইয়োগা মূলত একটি গভীর সমুদ্র! সেখানে ডুব দিলে উঠে আসা সম্ভব নয়। আমি সেই গভীর সমুদ্রে নিজেকে সমর্পণ করলাম। এরপরই ঝেড়ে কাশলেন। বললেন, ‘ইয়োগা বলতে আমরা শুধু শারীরিক কসরতকেই চিনি ও জানি। কিন্তু এর আছে আরও তিনটি পার্ট। সেই তিনের একটি হলো শারীরিক কসরত তথা আসন। বাকি দুটি হলো—প্রাণায়াম ও ধ্যান। প্রাণায়াম হলো শ্বাস-প্রশ্বাসের অনুশীলন। শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ যথাযথভাবে নিশ্চিত করার জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ। ধ্যানের গুরুত্বও অসীম। ১০ মিনিট ইয়োগা করলেও এই তিনের সমন্বয় বেশ জরুরি। আলাদাভাবে শুধু আসন কিংবা প্রাণায়াম অথবা ধ্যান করলে কিন্তু পারফেক্ট ব্যালান্স হবে না। এই তিনটি মিলেই ইয়োগার টোটাল একটা পার্ট। একটা ফুল সার্কেল হবে। ইয়োগা সমুদ্রে—আসন, প্রাণায়াম ও ধ্যান যেন উপসমুদ্র!’
সোহানা বলেন, ‘আমার শারীরিক গঠন দেখে অনেকে ভাবেন—আমি হয়তো জিমে গিয়েছি। কিন্তু আমি কখনোই কোনোদিন একবারের জন্যও জিমে ঢুকিনি। ইনস্ট্রুমেন্ট নিয়ে ব্যায়াম করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি না। ওসব নিয়ে একবার ব্যায়াম করলে আজীবনই করে যেতে হবে বলে আমার ধারণা। এতে শরীরের ফ্ল্যাক্সিবিলিটি অনেকটা রিজিট হয়ে যায়, লিমিটেড হয়ে যায়। ব্যায়ামের ক্ষেত্রে আমি ফ্রি হ্যান্ডকেই প্রায়োরিটি দিই।’
নিজের শৈশবের স্মৃতি টেনে বললেন, ‘খুব ছোটবেলা থেকে ক্ল্যাসিকাল ডান্স শিখি। তাই আমার কাছে ফিজিক্যাল ফ্ল্যাক্সিবিলিটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। সম্প্রতি উপলব্ধি করেছি, এত বছর আমি নাচ করলেও আমার ফ্ল্যাক্সিবিলিটি লিমিটেশন ছিল। ইয়োগার মাধ্যমে ধীরে ধীরে সেই জটগুলো খুলছে।’
যোগব্যায়ামের রয়েছে ব্যাধি উপশম গুণও। সোহানার মতে, শরীরের ছোটখাটো ব্যথাসহ নানান বালাই ইয়োগার মাধ্যমে দূর করা যায়। দৈহিক ও মানসিক যেসব সমস্যা চোখের সামনে দেখা যায় না, ওসব দূর করার পন্থা হতে পারে যোগব্যায়াম।
অভিনেত্রীর মতে, ‘ইয়োগার মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন সমস্যার প্রায় ৮০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এর মাধ্যমে কিছু রোগ সারানো যায়, আবার রোগ প্রতিরোধও হয়।’ যোগব্যায়ামের মানসিক উপকারিতার ফিরিস্তিও মেলে ধরেছেন তিনি। বললেন, ‘যে কোনো ধরনের শারীরিক কসরত মনকে প্রশান্ত করে। কসরত করলে আমরা আমাদের দেহটাকে বাইরে থেকে তৃতীয় নয়নে দেখতে পারি; তখন বুঝতে পারি শরীরে কী কী সমস্যা ছিল। প্রাণায়াম ও ধ্যানের মাধ্যমে মনকে শিথিল ও শান্ত করতে পারি।’
পরিশেষে জানালেন, তার প্রতিষ্ঠিত yogis-এর ‘এস’ বর্ণটি ‘সোহানা সাবা’র প্রতিনিধিত্ব করে। এই প্রতিষ্ঠানে ইয়োগার তালিম দেওয়ার পাশাপাশি ইয়োগা করতে যা কিছু লাগে, বিশেষ করে কাপড়চোপড়, সেগুলোর একটি ব্র্যান্ড দাঁড় করাচ্ছেন তিনি।
ইয়োগা যে তার রক্তে মিশে গেছে, তা বোঝা গেল সোহানার আবেগমিশ্রিত কিছু কথামালায়। বললেন, ‘সাইকোলজিক্যাল যে ব্যাপারগুলো, তাতে আমার ভীষণ আগ্রহ। আমি সেটা বোঝার রসদ পাই ইয়োগার মাধ্যমে। একটা শক্তি পাই। আমি ইয়োগা করছি, করে যেতে চাই। আমি ইয়োগিসের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রশিক্ষক—আমার এ পরিচয়টি খুব আনন্দের সঙ্গে প্রকাশ করতে চাই।’
মন্তব্য করুন