শিবলী আহমেদ
প্রকাশ : ০৫ নভেম্বর ২০২৩, ০৫:১৭ এএম
আপডেট : ০৫ নভেম্বর ২০২৩, ১১:১৬ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

আমার পথচলার মূল চালিকাশক্তি সততা ও পরিশ্রম

আজমেরী হক বাঁধন। ছবি: সংগৃহীত
আজমেরী হক বাঁধন। ছবি: সংগৃহীত

সততা ও পরিশ্রমের মিশেলে গড়ে ওঠা একজন অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন। প্রশংসায় গা ভাসিয়ে নিজের অস্তিত্ব ভোলেন না; গঠনমূলক সমালোচনা গ্রহণেও প্রস্তুত তিনি। বাঁধন তার কাজ, জীবনদর্শন, আনন্দ ও যাপিত জীবনের কিছু ফিরিস্তি ভাগ করেছেন কালবেলায়। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শিবলী আহমেদ

পরিবর্তিত এক বাঁধন আপনি। এই বদলের মূল চালিকাশক্তি কী? জেদ, নাকি পুরোটাই ভাগ্য?

বাঁধন : দুটির একটিও সঠিক নয়। জেদ একেবারেই না; ভাগ্য কিছুটা তো আছেই। আমার পরিবর্তন ও পথচলার মূল চালিকাশক্তি—সততা, পরিশ্রম ও আমার নিয়ত। আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি, জীবনে কী হবে কিংবা আপনি কী রেজাল্ট পাবেন, সেটা আসলে আপনার নিয়তের ওপর নির্ভরশীল। নিয়তের ওপর আমার সব সময় ভরসা ছিল। মনে হয় এটাই আমার সবচেয়ে বড় শক্তি; তারপর অবশ্যই আমার সততা ও পরিশ্রম।

সুসময়ে বন্ধু বাড়ে। যাদের একসময় ডেকেও পাননি, তারা কি এখন কাছে এসে আপন হতে চাইছে?

বাঁধন : ওই অর্থে বন্ধু বাড়ছে না, আমার বন্ধু কমছে। যে কোনো সম্পর্ককে আগে যেভাবে বিশ্লেষণ করতাম, যেভাবে দেখতাম, সেটার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। সেই সংজ্ঞা ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হয়েছে। আপনি যখন সাফল্য পাবেন, যখন ভালো থাকবেন, তখন আপনার আশপাশের সবাই আপনাকে ভালো বলবে, আপনার সব মুভমেন্ট ও ডিসিশনকে তারা অ্যাপ্রেশিয়েট করবে। এটা সবার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। যে বিষয়গুলো বেশিরভাগ জায়গায় সমাদৃত, তেমন কিছু যখন কেউ না করে, তখন তাকে সাপোর্ট করার মানুষ খুব কম থাকে। আমার ক্ষেত্রে যেটা হয়েছে, জীবনের ৯০ শতাংশ সময়ে শুনেছি—আমি যা করছি তা ঠিক করছি না। এটা শুনতে শুনতেই আমার বড় হওয়া। আমি যখন যে পদক্ষেপ নিয়েছি, সেটা যেহেতু সমাজের তথাকথিত অন্য মানুষের চিন্তার সঙ্গে মিলছে না, তাই প্রথমে সবাই এক ধরনের ডিফেন্সিভ মুডে থাকেন। এ ব্যাপারে আমি কাউকে দোষ দিচ্ছি না; এটা নিজেদের বাঁচানোর একটি প্রক্রিয়া। কঠিন সময়েও আমি কিছু মানুষকে পাশে পেয়েছি। তাদের কাছে কৃতজ্ঞ।

প্রশংসা অনেক সময় প্রতিভাবিনাশী। প্রশংসা আপনার অভিনয় দক্ষতার ওপর প্রভাব ফেলবে না তো?

বাঁধন : আমি আমার জীবনে অ্যাপ্রিসিয়েশন কম পেয়েছি। অভিনয় একদমই পারি না, সেটা শুনে শুনেই এত বছর পার করেছি। প্রশংসা আমাকে এক ধরনের ভালোলাগা দেয়; কিন্তু খুব বেশি প্রশংসায় যে আমি একেবারে উদ্বেলিত হয়ে গা ভাসিয়ে নিজের অস্তিত্বকে ভুলে যাই, সেটা নয়। আমি ‘এশিয়া প্যাসিফিক স্ক্রিন অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছি; পুরো এশিয়ার মধ্যে বেস্ট অ্যাকট্রেস অ্যাওয়ার্ড পেয়েছি, সেটাকে ছাপিয়ে তো আমার এখনো কোনো অর্জন হয়নি। আমি ভীষণভাবে শিক্ষিত ও সেনসেটিভ। আমার চারপাশের অবস্থান, আমার সামাজিক অবস্থান এবং নিজের অবস্থান, সবকিছুর ব্যাপারে খুবই সচেতন আমি।

নিজের অভিনয় দক্ষতা বাড়াতে আপনি কী কী করে থাকেন?

বাঁধন : থিয়েটার আমার ব্যাকগ্রাউন্ড নয়, তাই ওই ধরনের কোনো প্র্যাকটিস আমি জানি না যে কী করা যায়। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়, একজন অভিনয়শিল্পীর সবার আগে অবজারভ করার ক্ষমতা থাকা উচিত। আমি ফিল্ম দেখি, বই পড়ি, নতুন নতুন জিনিস শেখার চেষ্টা করি। অভিনয়ের বিভিন্ন রকম মাস্টার ক্লাস আছে, যেগুলো ইউটিউবে পাওয়া যায়। আমি সেগুলো দেখার চেষ্টা করি। বড় বড় ডিরেক্টর কীভাবে একজন অভিনয়শিল্পীর সঙ্গে ডিল করতে চান, সেটা জানার চেষ্টা করি। যে অভিনেত্রী আমার পছন্দ, তারা কীভাবে একটা ক্যারেক্টারকে ধারণ করেন, সেটা জানার চেষ্টা করি। আমার নিজের ক্যারেক্টারগুলোকে অ্যানালাইসিসের চেষ্টা করি।

আপনাকে ঘিরে কিছু সমালোচনা রয়েছে। ‘সমালোচক-দর্শকের’ গুরুত্ব আপনার কাছে কতটা?

বাঁধন : যারা আমার কাজের গঠনমূলক সমালোচনা করে থাকেন, সেই আলোচনাকে সাদরে গ্রহণ করতে একেবারেই প্রস্তুত আমি। সমালোচনার বিষয়টিকে আপনি যদি ‘ক্রিটিসিজম’ অর্থে বোঝান, সেটা যদি গঠনমূলক ক্রিটিসিজম হয়, সেটা সমালোচনা নয়। আপনি যেটাকে ইঙ্গিত করছেন, সেটা হচ্ছে একেবারে হেইট স্পিচ, হেইট সেনটেন্স, হেইট কমেন্টস। সেটা তো আসলে যার যার ব্যক্তিগত ব্যাপার। এটা তার মনন ও শিক্ষার ওপর নির্ভর করে। সেটার ওপর তো আমার হাত নেই। যারা অকথ্য ভাষায় বাজে মন্তব্য করেন, তাদের ব্যাপারে আমার কিছু বলার নেই। সমালোচনা এক জিনিস আর মানুষকে অহেতুক অকথ্য ভাষায় যে কোনো রকমের স্টেটমেন্ট দেওয়া একেবারেই আলাদা বিষয়।

বলিউডের সঙ্গে ঢালিউডের আচরণ, কাজ, পরিবেশ ও কমিটমেন্টের কোনো পার্থক্য আপনার চোখে পড়েছে কি?

বাঁধন : বিশাল ভরদ্বাজ যে মাপের ডিরেক্টর এবং টাবু যেই মাপের অভিনেত্রী, তাদের দুজনের সান্নিধ্যে গিয়ে আমি যেটা দেখেছি—তারা মাটির সঙ্গে মিশে থাকা মানুষ। তারা এত বড় হওয়ার পেছনে মূল কারণ তাদের সততা, ডেডিকেশন ও মানবিক হয়ে ওঠা। কাজের পরিবেশ খুব স্বাভাবিকভাবে আলাদা। কারণ টাকা এখানে সম্পৃক্ত। বাজেট ওদের বেশি, ওদের মার্কেট অনেক বড়। তাই ওদের সঙ্গে আমাদের পার্থক্য তো হবেই, তাই না? আর কমিটমেন্টের বিষয়টাও টাকার সঙ্গে রিলেটেড অলমোস্ট। এমনিতেও সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে আমাদের প্রেক্ষাপটটা আলাদা। আমরা কিন্তু খুব বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত জাতি। যেহেতু দুর্নীতিটা সমাজের একটা ব্যাধি, সেটা মিডিয়াতেও আছে। সেই হিসাব যদি করি, তাহলে এখানে প্রচুর কথার গরমিল থাকে। কথার গরমিলের সঙ্গে রিলেটেড হয় তাদের কমিটমেন্ট, তাদের প্রফেশনালিজম, সবকিছু। সেখানে ঘাটতি কিছু আছে।

আপনার জীবনের সবচেয়ে বড় আনন্দ কী?

বাঁধন : আমার জীবনের সবচেয়ে বড় আনন্দ—আমি নিজেকে মানুষ হিসেবে আবিষ্কার করতে শুরু করেছি। আমি জেনেছি মানুষ হিসেবে আমি এ পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে পারি। আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের মুহূর্ত হচ্ছে, যে মুহূর্তে আমি আমার বাচ্চাকে জন্ম দিয়েছি। ওই মুহূর্ত ছাপিয়ে জীবনে এখনো কোনো মুহূর্ত আসতে পারেনি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মানবপাচারবিরোধী পদক্ষেপ জোরদার করেছে বাংলাদেশ : মার্কিন রিপোর্ট

নৌকাডুবিতে নিখোঁজ দুই শিশুর মরদেহ উদ্ধার

ঘুমের মধ্যে মুখ থেকে লালা পড়া কীসের লক্ষণ?

ভারত নিয়ে বিস্ফোরক তথ্য দিলেন মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি

‘বাংলাদেশ-চীনের জনগণের বন্ধুত্ব আরও দৃঢ় হয়েছে’

রাত ১টার মধ্যে ঝড়-বজ্রবৃষ্টি হতে পারে যেসব অঞ্চলে

চাঁদাবাজদের ছাড়িয়ে নিতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের ওপর হামলা

৭ অক্টোবর বছরের প্রথম সুপারমুন, বাংলাদেশ থেকে দেখা যাবে কি?

বিপিএল থেকে সরে দাঁড়াতে পারে ফরচুন বরিশাল

ইরানের হামলার ভয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে থাকতে চান ইসরায়েলি রাজনীতিক

১০

ইয়ারফোন কানে না দিলে কাজে মন বসে না? অজান্তেই যে ক্ষতি করছেন

১১

ট্রাম্পের গাজা পরিকল্পনা ও যুদ্ধবিরতি নিয়ে পাকিস্তানের বার্তা

১২

অস্ট্রেলিয়া সিরিজের জন্য চমক রেখে ভারতীয় দল ঘোষণা

১৩

যশোরে এক দিনে কাঁচা মরিচ কেজিতে বাড়ল ১৭০ টাকা

১৪

গাজায় হামলা বন্ধে ট্রাম্পের আহ্বানের পরই বোমা ফেলল ইসরায়েল

১৫

সচিবালয়ে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ

১৬

নির্বাচন বিলম্বিত হলে ফ্যাসিবাদের উৎপত্তি হবে: সালাহউদ্দিন

১৭

ক্যারিবীয়দের উড়িয়ে তিন দিনেই ভারতের টেস্ট জয়

১৮

ডুবে যাওয়া জাহাজ থেকে মিলল ১২ কোটি টাকার সোনা-রুপার মুদ্রা

১৯

বিদ্যুৎস্পর্শে প্রাণ গেল জামায়াত নেতার

২০
X