সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারসহ বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে পাওয়া অভিযোগমতো বিদেশে পাচার করা অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য ১২টি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানকে নিযুক্ত করতে বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রশাসনিক ও আইনি সহায়তার জন্য এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ব্যাংকগুলো চুক্তি করবে।
রোববার (৬ অক্টোবর) বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের সভাপতিত্বে এক বৈঠকে বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের কর্মকর্তারা অংশ নেন। এ সময় এ নির্দেশনা দেন গভর্নর।
বৈঠকে অংশ নেওয়া ইসলামী বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী ওমর ফারুক খান বলেন, আন্তর্জাতিক ল ফার্ম ও অ্যাসেট রিকভারি প্রতিষ্ঠান (মোট ১২টি) এনগেজ করলে তারা টাকাগুলো বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করতে পারবে। কিছু ব্যাংক লিড ব্যাংক হিসেবে কাজ করবে; একাধিক ব্যাংক মিলে কনসোর্টিয়াম গঠন করা হবে এবং বাইরের কোম্পানিগুলোর সঙ্গে এগ্রিমেন্ট করা হবে। এরপর দেখা হবে সেই টাকা কীভাবে ডিপোজিট করা সম্ভব।
ওমর ফারুক আরও জানান, স্পেশাল সিআইডি (SPAR CID) প্রাথমিকভাবে মোট ১১টি স্থানীয় শিল্পগোষ্ঠীর নাম শনাক্ত করেছে। এনডিএ (গোপনীয়তার চুক্তি) করে আমরা স্টোলেন অ্যাসেট রিকভারি সংস্থাগুলোর সঙ্গে কাজ শুরু করব। কিছু মিনি এনবিএল এরই মধ্যে এসেছে এবং ইউসুবিল শতকরা এক-দুটি অ্যাডভান্স এসেছে। মূল উদ্দেশ্য হলো—বাংলাদেশ থেকে যেগুলো টাকা গিয়েছে সেগুলো রিকভার করা।
এবি ব্যাংকের এমডি মিজানুর রহমান বলেন, এ প্রকল্পে কোনো নির্দিষ্ট ব্যাংকের পরামর্শ নেওয়া হয়নি; এটি একটি ‘টোটাল ব্যাঙ্কিং’ কনসেপ্ট যেখানে বহু ব্যাংককে অন্তর্ভুক্ত করার ভাবনা ছিল। সভায় মোট প্রায় ৩০টি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করেছিল, যা প্রায় ৩০টি সংস্থার সঙ্গে আলাপচারিতার ইঙ্গিত দেয়।
পূবালী ব্যাংকের এমডি মোহাম্মদ আলী বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক মানি লন্ডারিং সংক্রান্ত প্রেক্ষাপটে ওই ১২টি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের কথা উল্লেখ করেছে; এসব প্রতিষ্ঠানকে এনডিএ করে ফরেন অ্যাসেট রিকভারি কাজ করতে বলা হবে।
প্রসঙ্গত, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের নাম ছাড়াও পাচারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তালিকায় রয়েছে বিভিন্ন গোষ্ঠী। এসব গোষ্ঠীর মাধ্যমে পাচার হওয়া অর্থের কিছু অংশ সুবিধাভোগী হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবারের সদস্যদের কাছে পৌঁছেছে বলে অভিযোগ আছে বলে জানা যায়।
পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারে আগে কাজ করা আন্তর্জাতিক চারটি সংস্থার নামও উল্লেখ করা হয়েছে—দ্য স্টোলেন অ্যাসেট রিকভারি (STAR), ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্টি-কোরাপশন কোঅর্ডিনেশন সেন্টার (IACCC), যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস (DOJ) এবং ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর অ্যাসেট রিকভারি (ICAR)। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব সংস্থা তথ্য আহরণে সফলতা পেয়েছে এবং এখন আইনি প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দেশ দিয়েছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো যেন অবিলম্বে ওই ১২টি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি সম্পন্ন করে।
মন্তব্য করুন