বুধবার, ২৮ মে ২০২৫, ১৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
এ জেড ভূঁইয়া আনাস
প্রকাশ : ২২ জানুয়ারি ২০২৪, ০৯:১৭ পিএম
আপডেট : ২২ জানুয়ারি ২০২৪, ০৯:২৯ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
অধিক মুনাফা

বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ কমিয়ে বন্ডে মনোযোগ ব্যাংকের

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

বৈশ্বিক অস্থিরতা ও ব্যাংক খাতের তারল্য সংকটের মধ্যেই সরকারি বিল বন্ডে বিনিয়োগ বেড়েছে। ব্যাংকগুলো বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ না করে অধিক মুনাফার আসায় বিনিয়োগ বাড়িয়েছে সরকারি বিল বন্ডে। এতে বছরের ব্যবধানে সরকারি বিল বন্ডে বিনিয়োগ বেড়েছে ১ লাখ কোটি টাকার বেশি। যদিও বর্তমানে দৈনিক চাহিদা মেটাতেই হিমশিম খাচ্ছে অনেক ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের জুন শেষে সরকারি বিল বন্ডে মোট বিনিয়োগের স্থিতি ৪ লাখ ৮৯ হাজার ৭৬৩ কোটি টাকা। আগের বছরের একই সময়ে এই বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৮৯ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে সরকারি ট্রেজারি বিল-বন্ডে বিনিয়োগ বেড়েছে ১ লাখ ৪৬৫ কোটি টাকা।

তথ্য বলছে, ২০২৩ সালের জুন শেষে সরকারি ট্রেজারি বিলে বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২৩ হাজার ৬৮০ টাকা। আগের বছরের একই সময়ে ট্রেজারি বিলে বিনিয়োগ ছিল ৭৭ হাজার ২৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ এই খাতে বিনিয়োগ বেড়েছে ৪৬ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা।

আর ২০২৩ সালের জুনে ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগের পরিমাণ ৩ লাখ ৬৬ হাজার ৮২ কোটি টাকা। আগের বছরের একই সময়ে বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ১২ হাজার ২৭৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ বিনিয়োগ বেড়েছে ৫৩ হাজার ৮০৮ কোটি টাকা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর কালবেলাকে বলেন, বেসরকারি খাতের বিনিয়োগে ঝুঁকি রয়েছে। এজন্য ব্যাংকগুলো সেখানে বিনিয়োগ কমিয়ে অধিক মুনাফার আসায় সরকারি বিল বন্ডে বিনিয়োগ করছে। এটার সাময়িক অসুবিধা রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকও মূল্যস্ফীতির নিয়ন্ত্রণে বাজার থেকে টাকার সরবরাহ কমাতে চায়। এমন পরিস্থিতিতে বিল-বন্ডে বিনিয়োগ বাড়া সমস্যা নয়। তবে যদি ডলার সংকট দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং মূল্যস্ফীতির লাগাম টানা না যায় তাহলে দীর্ঘ মেয়াদে দেশের কর্মসংস্থানের ওপর এটি সমস্যা তৈরি করবে। যদিও বাংলাদেশের হাতে এখন টাকার সরবরাহ কমানোর বিকল্প নেই।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের জুন শেষে ৯১ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের সুদহার ছিল ৬ দশমিক ৯৫ শতাংশ, ১৮২ দিন মেয়াদি বিলে ৭ দশমিক ২৫ এবং ৩৬৪ দিন মেয়াদি বিলের মুনাফা ছিল শতকরা ৮ দশমিক ৩০ টাকা। অন্যদিকে দুই বছর মেয়াদি বন্ডে সুদের হার ছিল ৮ দশমিক ১৬ শতাংশ, পাঁচ বছর মেয়াদি ৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ, ১০ বছর মেয়াদি ৮ দশমিক ৬০ শতাংশ, ১৫ বছর মেয়াদি ৮ দশমিক ৬৫ এবং ২০ বছর মেয়াদি বন্ডের সুদের হার ছিল ৮ দশমিক ৮০ শতাংশ।

রাষ্ট্রীয় খরচ মেটাতে সরকার বিভিন্ন সময় দেশের নাগরিক বা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ঋণ নেয়। এর বিপরীতে তাদের নামে ট্রেজারি বিল ও বন্ড ইস্যু করা হয়। একে সরকারি সিকিউরিটিজও বলা হয়। তিন মাস থেকে সর্বোচ্চ এক বছরের জন্য নেওয়া ঋণকে ট্রেজারি বিল ও এক বছর থেকে বিশ বছর পর্যন্ত নেওয়া ঋণকে ট্রেজারি বন্ড বলা হয়। তরল সম্পদ হলো, নগদ টাকা ও খুব সহজে বিনিময়যোগ্য উপাদান। এর মধ্যে বিল-বন্ড অন্যতম। তথ্যমতে, মোট তরল সম্পদের ৭০ শতাংশই বিল ও বন্ড হিসেবে গচ্ছিত থাকে।

সূত্র জানায়, এ মুহূর্তে ২৪টি প্রাইমারি ডিলার (পিডি) ও ২৪টি নন প্রাইমারি ডিলার (নন-পিডি) ব্যাংক রয়েছে দেশে। তবে বিল ও বন্ডে পিডি ব্যাংকের বিনিয়োগ সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেট ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্টের তথ্যমতে, এ খাতে মোট বিনিয়োগের ৩৬ দশমিক ৬২ শতাংশই পিডি ব্যাংকের সম্পদ। ২৪ দশমিক ৯৫ শতাংশ নন-পিডি, ২৬ দশমিক ৭৩ শতাংশ বাংলাদেশ ব্যাংক, ৩ দশমিক ৯০ শতাংশ লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি, শূন্য দশমিক ২৩ শতাংশ ব্যক্তিগত ও বাকি অংশ অন্যান্য খাতের বিনিয়োগ।

পিডি ব্যাংকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিল ও বন্ড কিনেছে ব্র্যাক ব্যাংক। পর্যায়ক্রমে এর পরেই রয়েছে মধুমতি, সাউথবাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স, স্ট্যার্ন্ডার্ড চার্টার্ড, এনসিসি, ইস্টার্ন, মিডল্যান্ড, রুপালি, সিটি, এমটিবি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংকগুলোর হাতে সিআরআর ও এসএলআর রাখার পর চলতি বছরের নভেম্বর শেষে অতিরিক্ত তারল্য কমে ১ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে, যা এক মাস আগে অর্থাৎ অক্টোবর শেষে ছিল ১ লাখ ৫৯ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক মাসে অতিরিক্ত তারল্য কমেছে ১৮ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা। গত জুলাই শেষে অতিরিক্ত তারল্য ছিল ১ লাখ ৮১ হাজার কোটি টাকা।

সরকারি হিসাব অনুযায়ী, দেশে মূল্যস্ফীতির হার ৯ দশমিক ৪১ শতাংশ। বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান এই হার ১০ এর চেয়ে বেশি। মূল্যস্ফীতির সরাসরি প্রভাব পড়েছে সাধারণ মানুষের জীবনে, সৃষ্টি হয়েছে সংকট। ফলে ব্যাংক থেকে টাকা ওঠানোর প্রবণতা বেড়েছে আমানতকারীদের মধ্যে। সাধারণ আমানতকারীরা ব্যাংক থেকে টাকা তুললেও ব্যাংকে নতুন করে তেমন একটা জমা করছে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি, স্বল্প সুদহার ও ব্যাংক খাতের নেতিবাচক খবরের কারণে মানুষের হাতে নগদ অর্থ বেড়েছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির ফলে মানুষের জিনিসপত্র কিনতে আগের চেয়ে বেশি টাকা লাগছে। তাই মানুষ টাকা হাতে রাখছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

‘শেখ হাসিনা দুপুরের খাবারও খেয়ে যেতে পারেনি’

কী সিদ্ধান্ত নিলেন, জাতিকে জানান : রাশেদ খাঁন

জুলাই আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসার খোঁজ নিল ডিএমপি কমিশনারের প্রতিনিধি দল

দেশের আকাশে চক্কর দিয়ে গেল ভারতের তিনটি ড্রোন

দ্রুত ডাকসুর ঘোষণা না আসলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি শিবিরের

অগ্রণী ব্যাংক ও ব্রাকনেটের মধ্যে প্রযুক্তি সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরিত

সচিবালয়ে প্রবেশে বাধা অনাকাঙ্ক্ষিত : ইউট্যাব

সাবেক ভূমিমন্ত্রীকে বাসায় পাঠিয়ে দিল পুলিশ

আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার ঘোষণা চরমোনাই পীরের

আর কোনো তালবাহানা নয়, ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন দিতে হবে : খোকন

১০

পুরোনো ভুল থেকে শিখতে চান লিটন

১১

নারীর স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের ঘটনায় মহিলা পরিষদের উদ্বেগ 

১২

সম্মেলন ছাড়াই লক্ষ্মীপুরে ছাত্রদলের ১০ কমিটি

১৩

আলোচনা সভায় বক্তারা / ১০ মাসেও সরকারের মনের কথা বোঝা যাচ্ছে না

১৪

রাজশাহীতে পরিত্যক্ত ‘রকেট লঞ্চার’ উদ্ধার

১৫

সুব্রত বাইনকে গ্রেপ্তারের পর সেনা সদরের বার্তা

১৬

বগুড়ায় মিডিয়া কাপ ক্রিকেটে চ্যাম্পিয়ন শহীদ শিমুল একাদশ

১৭

সুব্রত বাইনের উত্থান কীভাবে

১৮

রাবিতে এটিএম আজহারের মুক্তির প্রতিবাদে বামপন্থি ছাত্রসংগঠনের মশাল মিছিলে হামলা

১৯

ভারতীয় পুশইনের ক্ষেত্রে নীরব অন্তর্বর্তী সরকার : ১২ দলীয় জোট

২০
X