শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:০৮ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর বৈষম্য অবসানে ১২ দফা দাবি

বাংলাদেশ দলিত ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠী অধিকার আন্দোলন (বিডিইআরএম) ও নাগরিক উদ্যোগের আয়োজনে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ছবি : কালবেলা
বাংলাদেশ দলিত ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠী অধিকার আন্দোলন (বিডিইআরএম) ও নাগরিক উদ্যোগের আয়োজনে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ছবি : কালবেলা

বাংলাদেশ দলিত ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর প্রতি বিদ্যমান সব ধরনের বৈষম্য অবসানে ১২ দফা দাবি জানিয়েছে দলিত ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠী অধিকার আন্দোলন (বিডিইআরএম) ও নাগরিক উদ্যোগ এবং আরও অন্যান্য নাগরিক সংগঠন। দীর্ঘদিন ধরে তারা বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে আসছে।

শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর শাহবাগে দলিত ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর প্রতি বিদ্যমান সব ধরনের বৈষম্য অবসানের দাবিতে বাংলাদেশ দলিত ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠী অধিকার আন্দোলন (বিডিইআরএম) ও নাগরিক উদ্যোগের আয়োজনে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বিডিইআরএমের সভাপতি উত্তম কুমার ভক্ত।

বিডিইআরএম সাধারণ সম্পাদক শিপন কুমার রবিদাসের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন- বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান লিপন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য লুনা নূর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জোবাইদা নাসরীন কণা, নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী ও বিডিইআরএমের প্রধান উপদেষ্টা মানবাধিকারকর্মী জাকির হোসেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির নেতা দীপায়ন খীসা, দলিত নারী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মনি রানী দাস, বিডিইআরএম ঢাকা জেলা কমিটির সভাপতি গগণ লাল, বিডিইআরএম কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক তামান্না সিং বাড়াইক, বাংলাদেশ দলিত হিউম্যান রাইটসের (বিডিএইচআর) সভাপতি বি. দয়ানন্দ, মিরনজিল্লা হরিজন কলোনির উচ্ছেদের শিকার ভুক্তভোগী পূজা রানী দাস প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, জন্ম ও পেশাগত কারণে বাংলাদেশে প্রায় ৭৫ লাখ দলিত জনগোষ্ঠী প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরনের বৈষম্যের শিকার। শিক্ষা, সামাজিক মর্যাদা, লিঙ্গ সমতা এবং সমঅধিকার ভোগের দিক দিয়ে এই জনগোষ্ঠী একেবারেই অনগ্রসর। বাংলাদেশের সংবিধানে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ নির্বিশেষে সব নাগরিকের সমান অধিকারের কথা উল্লেখ করা হলেও জাত-পাতভেদে বৈষম্যমূলক আচরণ বিদ্যমান আছে দেশের বিভিন্ন পেশাভিত্তিক ও ক্ষুদ্র জাতি-গোষ্ঠীর ওপর। সুনির্দিষ্ট কোনো বিধি-বিধান না থাকায় ভুক্তভোগী ব্যক্তির পক্ষে আদালতের আশ্রয় গ্রহণ করা কঠিন।

এই প্রেক্ষাপটে ‘বৈষম্য বিলোপ আইন-২০১৪’ শিরোনামে আইনটির খসড়া প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় বিডিইআরএম ও নাগরিক উদ্যোগ শুরু থেকেই মানবাধিকার কমিশন এবং আইন কমিশনের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করেছে। নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে বিগত এক দশকের দাবির প্রেক্ষিতে ৫ এপ্রিল ২০২২-এ জাতীয় সংসদে ‘বৈষম্য বিরোধী বিল-২০২২’ উত্থাপন করা হয়। আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পর্যায়ে তৎকালীন সরকার সুনির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি প্রদান করলেও অজ্ঞাত কারণবশত বাংলাদেশে বৈষম্যের শিকার একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠীর দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষিত এই আইনটি আলোর মুখ দেখেনি। এমতাবস্থায়, বাংলাদেশকে একটি বৈষম্যহীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার অংশ হিসেবে প্রস্তাবিত ‘বৈষম্য বিলোপ আইন’ দ্রুত প্রণয়ন হওয়া অত্যন্ত জরুরি।

বক্তারা আরও বলেন, দেশের দলিত জনগোষ্ঠীর প্রতি অস্পৃশ্যতার চর্চার পাশাপাশি পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের বেতন বৈষম্য, স্বাস্থ্যঝুঁকি, অপ্রতুল বাজেট বরাদ্দ, সঠিক পরিসংখ্যান না থাকা, আবাসন সংকট, উচ্ছেদ আতঙ্ক ইত্যাদি বৈষম্য এখনো বিদ্যমান। এই সময়ে দেশে বৈষম্যের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতা সোচ্চার, তখন আমরা দলিত ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠীও আমাদের প্রতি চলমান বৈষম্যের অবসান চাই।

১২ দফা দাবির মধ্যে ‘বৈষম্য বিরোধী বিল-২০২২’ সংশোধন করে অবিলম্বে পাস করা, পুনর্বাসন ছাড়া দলিত কলোনি/পল্লী উচ্ছেদ না করা, জনপরিসরে দলিতদের প্রবেশাধিকারে বাধা প্রদানকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা। দলিত জনগোষ্ঠীর সঠিক সংখ্যা নির্ধারণের জন্য জরুরিভিত্তিতে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা, সব পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের চাকরি স্থায়িত্বকরণসহ সুনির্দিষ্ট পে-স্কেল দেওয়া, ‘সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি’র আওতায় দলিতদের জন্য বাজেট বরাদ্দ বাড়ানো। দলিতদের প্রতি বৈষম্য নিরসনে বিভিন্ন পর্যায়ে ‘সংরক্ষণ নীতি’ প্রবর্তন করা, পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের পেশাগত স্বাস্থ্যঝুঁকি নিরসনে সুরক্ষা উপকরণ সরবরাহ নিশ্চিত করা, ‘কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোনো নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন না করা। সংবিধানের এই ধারার পূর্ণ বাস্তবায়ন করা। ভূমিহীন দলিত জনগোষ্ঠীর জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে খাসজমির বন্দোবস্ত করা। সব পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের জন্য মহানগর ও পৌরসভায় আবাসনের ব্যবস্থা করা। স্থানীয় সরকার থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত বিভিন্ন কমিটিতে দলিত জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ইরাকের সরকার গঠনে বিদেশি হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে সতর্ক করল যুক্তরাষ্ট্র

লেবাননে ইসরায়েলি ড্রোন হামলা

আগামী সপ্তাহের মধ্যে ইউক্রেনকে শান্তি পরিকল্পনা মানতে হবে: ট্রাম্প

ভেড়ামারায় দুর্বৃত্তের গুলিতে গরু ব্যবসায়ী নিহত

রুয়েট প্রাক্তন ছাত্রদল অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি তুষার, সম্পাদক হাবীব

ভূমিকম্পে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে ৪১ জন আহত

ক্যারিয়ার শেষে কত উইকেট চান জানালেন তাইজুল

 ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করতে রাজউকের তাৎক্ষণিক পরিদর্শন

মেসিকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে যা বললেন ফ্লিক

গৌহাটি টেস্টের আগে ভারত শিবিরে দুঃসংবাদ

১০

শনিবার বিদ্যুৎ থাকবে না যেসব এলাকায়

১১

এই প্রজন্মে অন্ধ আনুগত্য, ভাই পলিটিক্স চলবে না : শিবির সভাপতি

১২

নাটকীয় জয়ের পরও নিজের ভুলে হতবাক আকবর

১৩

স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান : প্রধান উপদেষ্টা

১৪

নিউমার্কেট এলাকায় শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ 

১৫

ভূমিকম্পে ছেলের পর এবার চিকিৎসাধীন বাবার মৃত্যু

১৬

তারেক রহমানের জন্মদিনে ৫ হাজার মানুষকে উপহার দিলেন যুবদল নেতা

১৭

জামায়াতের নাড়িপোতা পাকিস্তানে : মাহমুদ হাসান 

১৮

ঐক্যবদ্ধভাবে পরস্পরের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান গণসংহতির

১৯

তারেক রহমান : ইতিহাসের অগ্নিপথ পেরিয়ে জাতির প্রত্যাশার শিখরে

২০
X