শুক্রবার রাতে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে এক ব্যক্তি ফোন দিয়ে জানান, সেন্ট্রাল রোডের ৭৭ নম্বর বাসায় এক গৃহকর্মীকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। সেই ফোনের পর কলাবাগান থানার পুলিশ রাত ১টার দিকে সেই বাসায় যায়। কিন্তু সঠিক ফ্ল্যাট নম্বর না জানায় গভীর রাতে ফিরে যান তারা। এরপর শুক্রবার সকালে গিয়ে ফ্ল্যাট শনাক্ত করে পুলিশ। সাততলা ভবনের দ্বিতীয় তলায় (ই-১) নম্বরের সেই ফ্ল্যাটটি তালা মারা ছিল। এরপর তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে দেখা যায় বিছানায় পড়ে আছে শিশু গৃহকর্মীর লাশ। উদ্ধারের পর লাশটি দুপুরে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
কলাবাগান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) বিজন দাস কালবেলাকে বলেন, গতকাল রাতে ৯৯৯ এর মাধ্যমে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি কল করে ওই ভবনে গৃহকর্মীর লাশ থাকার তথ্য দেয়। কিন্তু মধ্যরাতে রাতে গিয়ে ওই ভবনের ৪৪টি ফ্ল্যাটের বাসিন্দাদের ডাকা সম্ভব ছিল না। তাই সকাল ৭টার দিকে আমরা আবারও যাই। পরে বাসার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ম্যানেজারের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে ৭টি বাসায় নক করা হয়। পরবর্তীতে দ্বিতীয় তলায় ই-১ এ নক করা হলে কেউ গেট খুলছিল না। ওই বাসায় সাথী পারভীন নামে এক নারী ও তার সন্তান থাকে। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে কেউ গেট না খোলায় আমরা থানার ওসি ও বাসার মালিক সমিতির কমিটির উপস্থিতিতে দরজা ভেঙে বিছানায় গৃহকর্মীর লাশ দেখতে পাই। নিহতের শরীরে বিভিন্ন আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। পরবর্তীতে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি শেষে নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
তথ্য দেওয়া নাম্বারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নম্বরটি এখন বন্ধ আছে। এই তথ্য সংগ্রহ করার চেষ্টা করছি।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, গত ২৪ আগস্ট সকাল ৯টা ৪ মিনিটে নিজের শিশু সন্তানকে নিয়ে হেঁটে বের হয়ে যান সাথী পারভিন। এর ৫ মিনিট পর ৯টা ৯ মিনিটে আবারও ফিরে আসেন। পরবর্তীতে ৮ মিনিট পরে বের হয়ে যান। এরপর আর তিনি ফেরেননি।
ভবনের ম্যানেজার মফিজুর রহমান কালবেলাকে বলেন, ২০১৬ সাল থেকে সাথী ও তার স্বামী ডাক্তার শহীদুল হক রাহাত এখানে বসবাস করত। কিন্তু তার স্বামীর সঙ্গে দ্বন্দ্ব হওয়ায় তাকে ডিভোর্স দিয়ে দেন এবং ফ্ল্যাটটি বিক্রি করে দেন। তবে সাথী আক্তার নিজেকে ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন পরিচয় দিয়ে এই ফ্ল্যাটে থাকতেন। সে সবার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করত। এমন কি আমাদেরও মারধর করেছেন। ২০২০ সাল থেকে সার্ভিস চার্জ দেন না। এখন পর্যন্ত মালিক সমিতি তার কাছে ১ লাখ ৭৪ হাজার টাকা পায়। সে কারো কথা শুনত না। ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন পরিচয় দিয়ে আতঙ্ক ছড়াত।
ভবনের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাথির গ্রামের বাড়ি পাবনা সদরে। নিহত গৃহকর্মীও তারই এলাকার। তবে তার নাম পরিচয় জানা যায় নি৷ সাথী ও ডাক্তার শহীদুলের দ্বিতীয় বিয়ে। তবে বর্তমানে তারা আলাদা থাকেন। এ ঘরে তিন বছরের একটি মেয়ে রয়েছে। তাদের ডিভোর্সের বিষয়ে পারিবারিক আদালতে একটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে।
এ বিষয়ে ওসি সাইফুল ইসলাম বলেন, মেয়েটিকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। তার শরীরের অনেক আঘাত পাওয়া গেছে। মেয়েটির পরিচয় পাওয়া যায়নি। বয়স সাত আটের মতো হবে। বাসাটিতে থাকতেন সাথী আক্তার নামে এক মহিলা। ডিভোর্সী এ মহিলা এর আগেও এ শিশুটিকে মারধর করতো। প্রতিবেশিরা মারধরের কথা পুলিশ জানিয়েছে। মেয়েটিকে হত্যা করে ২৪ তারিখ সকালে সাথী আক্তার তার বাচ্চাসহ বাসা থেকে বের হয়ে যান। সিসিটিভি ফুটেজে তাই দেখা গেছে। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
মন্তব্য করুন