টানা ৪০ দিন বন্ধ থাকার পর খুলেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান কার্যালয় নগর ভবনের দরজা। সীমিত পরিসরে শুরু হয়েছে সেবা কার্যক্রম।
সোমবার (২৩ জুন) খুলে দেওয়ার পর ভিড় করেন সেবা প্রত্যাশীরা। তবে তখনো তালাবদ্ধ ছিল ডিএসসিসির প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়া এবং প্রকৌশল বিভাগের অফিস। সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ নগরবাসীর কষ্ট লাঘবে আগামী শুক্র ও শনিবার ডিএসসিসির সব বিভাগ আর কার্যালয় খোলা রাখতে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। অন্যদিকে আন্দোলনও চলছে। নগরভবন ঘুরে এই চিত্র দেখা গেছে।
বাসাবো থেকে আসা মানসুরা খাতুন বলেন, ‘নগর ভবনের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় বাবার চিকিৎসার অনুদান তুলতে পারছিলাম না। আজ আবার আবেদন করলাম। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কয়েক দিনের মধ্যে টাকা পাবো। এখন কিছুটা স্বস্তি লাগছে।’ এমন স্বস্তির গল্প মিলেছে অনেকের মুখে। আংশিকভাবে সেবা চালু হওয়ায় কিছুটা প্রাণ ফিরে পেয়েছে নগর ভবন।
বকশীবাজারের বাসিন্দা ইকবালুর তরফদার বলেন, ছেলের জন্মনিবন্ধন করতে এসেছিলাম। খুব দ্রুতই হয়ে গেল। স্বস্তি লাগছে।
শুক্রাবাদের আয়েশা বেগম বলেন, হোল্ডিং ট্যাক্স দিতে এসেছি। এর আগে তিনবার ফিরে গেছি। এবার শেষ পর্যন্ত দিতে পেরে ভালো লাগছে।
গত ১৪ মে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের সমর্থকরা ‘ঢাকাবাসী’ ব্যানারে আন্দোলন শুরু করেন। পরদিন তালা ঝুলে নগর ভবনের গেটে, বন্ধ হয়ে যায় সব ধরনের সেবা। ৪০ দিন আন্দোলনের পর গত রোববার আন্দোলনের সমন্বয়ক সাবেক সচিব মশিউর রহমান ডিএসসিসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজে ফেরার আহ্বান জানান। এরপর গতকাল সকাল ৯টার দিকে আন্দোলনকারীরা নগর ভবনের মূল ফটকসহ অধিকাংশ দরজা খুলে দেয়। কর্মকর্তারা ধীরে ধীরে আসতে শুরু করেন।
করপোরেশনের কয়েকজন কর্মকর্তা কালবেলাকে জানান, তারা নিজ নিজ বিভাগে কাজ শুরু করেছেন। যদিও অধিকাংশ বিভাগ এখনো পূর্ণ প্রস্তুত নয়, তবু জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনসহ জরুরি কিছু সেবা চালু হয়েছে। তবে কর্মকর্তাদের কণ্ঠে হতাশাও ছিল।
তারা বলেন, ৪০ দিনের জমে থাকা কাজ তারা ১৫ দিনেই রাত–দিনে শেষ করতে পারবেন। তবে প্রশাসকের কার্যালয় বন্ধ থাকায় অনেক প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। আবার করপোরেশনের প্রধান নির্বাহি কর্মকর্তা জিল্লুর রহমানকে বদলি করা হয়েছে। তার স্থলে আরেকজন এসেছে, তার কাজ বুঝতে সময় লাগবে। এতে কর্মকর্তাদের ইচ্ছা থাকলেও কাজের গতি বাড়বে না।
ডিএসসিসির প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো মনিরুজ্জামান বলেন, মে-জুন মাসে করপোরেশনের রাজস্বের একটা বড় অংশ আদায় হয়। তবে দীর্ঘদিন নগরভবন বন্ধ থাকায় তাতে একটু ভাটা পড়েছে। তাই আগামী শুক্র ও শনিবার রাজস্ব বিভাগ খোলা থাকবে।
জনসংযোগ কর্মকর্তা রাসেল রহমান বলেন, অনেকদিন করপোরেশন বন্ধ ছিল। নগরবাসীর জরুরি সেবা দিতে আগামী শুক্র আর শনিবারও করপোরেশনের সব অফিস খোলা থাকবে।
ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জিল্লুর রহমান কালবেলাকে জানান, নগর ভবন বন্ধ থাকলেও মশক নিয়ন্ত্রণ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মতো সেবা চালু ছিল। সেবা পেতে আসা অনেকেই খানিকটা স্বস্তির কথা জানান।
সূত্র জানায়, নগর ভবনের বাইরে ডিএসসিসির আটটি আঞ্চলিক কার্যালয়ও খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে প্রকৌশলীরা এখনো কাজে যোগ দেননি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রকৌশলী জানান, সকালে অফিস এলাকায় এসেছিলাম। কিন্তু কী করব বুঝতে না পেরে চলে গেছি।
এদিকে আন্দোলনও অব্যাহত ছিল। সকাল ১১টার পর থেকে নগর ভবনের মূল ফটকে জড়ো হতে থাকেন ইশরাক হোসেনের সমর্থকরা। এর আগে সকালে বিভিন্ন ওয়ার্ড ও থানার দিক থেকে মিছিল করে তারা সেখানে আসেন। নগর ভবনের সিঁড়িতে বসে তারা স্লোগান দেন এবং স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়ার পদত্যাগ দাবি করেন।
মন্তব্য করুন