জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি নির্বাচনের দাবিতে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্যোগে সমাবেশ ও র্যালি অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (১২ জুলাই) দুপুর সাড়ে ৩টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শুরু হওয়া এই আয়োজনে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত নারী নেত্রীরা অংশ নেন।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম। সমাবেশে বক্তব্য দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু, আন্দোলন সম্পাদক ও বেলাবো জেলা শাখার সভাপতি রাবেয়া খাতুন শান্তি, প্রশিক্ষণ, গবেষণা ও পাঠাগার উপ-পরিষদ সদস্য এবং নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি রীনা আহমেদ, ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক রেহানা ইউনূস, কেন্দ্রীয় সদস্য ও টঙ্গী জেলা শাখার সভাপতি আনোয়ারা বেগম, এবং নারী শ্রমিক কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক ও জাতীয় পরিষদ সদস্য সাহিদা পারভীন শিখা।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সংগঠনের অ্যাডভোকেসি ও নেটওয়ার্কিং পরিচালক জনা গোস্বামী।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি নির্বাচনের ব্যবস্থা চালু করা আবশ্যক। তাদের মূল দাবি হলো, মনোনয়নপ্রাপ্ত নয়, ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত নারীরাই যেন সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেন।
সভাপতির বক্তব্যে ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের জন্য আমাদের সংগ্রাম ১৯৭২ সাল থেকে শুরু হয়েছিল। এখন সময় এসেছে সংসদে নারীর যথার্থ প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার। গণতন্ত্রে কাউকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাওয়া যায় না। তাই সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে নারীর এক-তৃতীয়াংশ আসনে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকেও নারী নেতৃত্ব গঠনে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
মালেকা বানু তার বক্তব্যে সংরক্ষিত আসনে সরাসরি নির্বাচনকে ‘বহুদিনের দাবি’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, মনোনয়নের মাধ্যমে সংসদে আসা নারীরা রাজনৈতিকভাবে স্বাধীনতা পান না। রাজনৈতিক দলগুলোকে শুধু প্রতিশ্রুতি দিলেই হবে না, বাস্তবায়নের দিকেও নজর দিতে হবে।
রাবেয়া খাতুন শান্তি নারীর সিদ্ধান্ত গ্রহণের সক্ষমতাকে নারী আন্দোলনের অর্জন আখ্যায়িত করে সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে এক-তৃতীয়াংশ আসন পূরণের গুরুত্ব তুলে ধরেন।
রীনা আহমেদ নারী সংসদ সদস্যদের ‘নীরবতা’ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং ইশতেহার অনুযায়ী কাজ বাস্তবায়নে তাদের সক্রিয় ভূমিকার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন। তিনি সরকারকে সরাসরি নির্বাচনের দাবির বিষয়টি জোরালোভাবে তুলে ধরার আহ্বান জানান।
রেহানা ইউনূস বলেন, গত ৫৫ বছরে নারীর রাজনৈতিক অগ্রগতি সন্তোষজনক নয়। তিনি কার্যক্ষম নেতৃত্ব গঠনের জন্য সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমেই নারীকে প্রতিষ্ঠা দেওয়ার কথা বলেন।
আনোয়ারা বেগম তৃণমূল পর্যায়ে নারী নেতৃত্ব গড়ে তোলার ওপর জোর দেন, যা নারী ক্ষমতায়নের মূল ভিত্তি বলে তিনি উল্লেখ করেন।
সাহিদা পারভীন শিখা এই দাবিকে ‘নারী-পুরুষের বিরুদ্ধতা নয়, গণতন্ত্রের প্রশ্ন’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, সংরক্ষিত আসনে মনোনয়ন নয়, সরাসরি নির্বাচনই গণতন্ত্রকে পরিপূর্ণ করবে।
সমাবেশ শেষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে পল্টন মোড় পর্যন্ত একটি বর্ণাঢ্য র্যালি অনুষ্ঠিত হয়। এতে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয়, মহানগর, নারায়ণগঞ্জ, টঙ্গী ও বেলাবো শাখার নেতৃবৃন্দ ছাড়াও গণসাক্ষরতা অভিযান, কর্মজীবী নারী, নারী শ্রমিক কেন্দ্রের প্রতিনিধি, কর্মকর্তা এবং গণমাধ্যমকর্মীরা অংশগ্রহণ করেন।
মন্তব্য করুন