শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, ‘ডেঙ্গুর কারণে প্রতিবছর আমরা অনেক প্রিয়জনকে হারাচ্ছি। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি। বাংলাদেশে যে সংখ্যাটি আছে সেটি কমিয়ে আনতে সবাইকে সচেতন হতে হবে। যেহেতু ডেঙ্গু একটি প্রতিরোধযোগ্য রোগ তাই সবাইকে দায়িত্ব নিতে হবে। এটিকে প্রতিরোধ করতে হবে। সামাজিকভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। যে জাতি যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে সে জাতি মশার সঙ্গে যুদ্ধ করতে পারবে না?’
লালমাটিয়া সরকারি মহিলা কলেজের অডিটোরিয়ামে আজ শনিবার ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে ডিএনসিসি আওতাধীন এলাকার সব স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ প্রধান শিক্ষকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ডেঙ্গু সচেতনতায় এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘সিটি করপোরেশন কিন্তু সবার বাড়িতে গিয়ে গিয়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে দিয়ে আসতে পারবে না। সিটি করপোরেশন সচেতন করতে পারে, বাইরে যেসব জায়গায় পানি জমে আছে, লার্ভা আছে সেখানে ওষুধ ছিটাতে পারে। কিন্তু যার যার বাসাবাড়ি, আঙিনা তাদের পরিষ্কার করতে হবে। নিজেদের জীবন বাঁচাতে সবাইকে সচেতন হতে হবে।’
শিক্ষকদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষকদের কথার অনেক দাম৷ আপনারা শিক্ষার্থীদের যা শিখাবেন সেটি তারা আত্মস্থ করে ফেলে। শিক্ষার্থীরা নিজেরা সেগুলো চর্চা করে এবং অন্যদেরও শেখাতে পারে। সচেতনতা বার্তা সম্বলিত লিফলেটগুলো আমরা আপনাদের দিয়ে দিব সেগুলো শিক্ষার্থীদের দিবেন। আপনারা অ্যাসেম্বলির সময় শিক্ষার্থীদের এ বিষয়ে জানাবেন। শিক্ষার্থীদের টিম করে করে স্কুল-েকলেজের আঙিনা পরিষ্কার করবে। কোথাও পানি জমে থাকলে সেগুলো ফেলে দেবে। এগুলো করার মাধ্যমে তাদের অভ্যাস গড়ে উঠবে। শিক্ষকরা সচেতন হলে যে কোনো সামাজিক আন্দোলন সফল হওয়া সম্ভব।’
ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষকরাই যে কোনো বার্তা ছড়িয়ে দিতে পারেন শিক্ষার্থীদের মধ্যে। বাবা-মার পরে শিক্ষকরাই শিশুদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষকরা সুন্দর সুস্থ সমাজ গঠনের কারিগর। আমি শিক্ষকদের আহ্বান করছি আজকে থেকেই শিক্ষার্থীদের মাঝে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সচেতনতা বার্তা ছড়িয়ে দিন। সুস্থতার জন্য সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।’
ওই সময় ডিএনসিসি মেয়র এডিসের প্রজননক্ষেত্র গাড়ির পরিত্যক্ত টায়ার, ডাবের খোসা, মাটির পাত্র, খাবারের প্যাকেট, অব্যবহৃত কমোড এগুলো দেখিয়ে উপস্থিত শিক্ষকদের সচেতন করেন।
মেয়র বলেন, ‘কি কি কারণে এডিস মশা জন্মায় সে বিষয়গুলো শিশুদের জানাতে হবে। এডিস মশার ভয়াবহতা সম্পর্কে শিশুদের জানাতে হবে। আমরা বিদেশে দেখেছি কিন্ডারগার্টেন, প্রাইমারি স্কুলের শিশুদের এডিস মশা নিধনে সচেতনতা শিক্ষা দেওয়া হয়। কারণ শিশুরাই বাসাবাড়িতে গিয়ে এটি এপ্লাই করবে। তারা বাবা-মা, দাদা-দাদি, নানা-নানিদের জানাবে বাসাবাড়ি পরিষ্কার রাখতে হবে, কোনোভাবেই পানি জমতে দেওয়া যাবে না। তারা সবাইকে জানাবে কিভাবে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
‘বিদেশের আদলে আমরা এরই মধ্যে এডিস নিয়ন্ত্রণে করণীয় বিষয়ে কার্টুন বই তৈরি করে ফেলেছি। বিদেশে দেখেছি শিশুরা কার্টুন একে, রং করে এডিস মশা সম্পর্কে, লার্ভা কীভাবে জন্মায় সে সম্পর্কে শিখতে পারে৷ আমরা ডিএনসিসি এলাকার স্কুলের শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণের জন্য এক লাখ বই ছাপানোর পরিকল্পনা নিয়েছি। তবে দেশের সব শিক্ষার্থীদের জন্য জাতীয়ভাবে পাঠ্যপুস্তকে যদি এই বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয় তাহলে এই শিক্ষাটা ছড়িয়ে যাবে সমগ্র দেশে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।’
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সবাইকে সচেতন হতে হবে উল্লেখ করে মেয়র বলেন, ‘বর্ষা মৌসুমে আজ বৃষ্টি, কাল রোদ। এমন রোদ বৃষ্টির ফলে এডিসের লার্ভা বেশি জন্মায়। কোনোভাবেই পানি জমতে দেওয়া যাবে না। সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর, কর্মকর্তা, মশক কর্মী সবাই মাঠে কাজ করছে। কিন্তু আপনাদের নিজেদের ঘরে, বাড়ির ছাদে পানি জমিয়ে রাখলে সেটির দায় আপনাদের নিতে হবে। ছাদে অব্যবহৃত কমোড, পাত্র, রঙের কৌটা, টায়ার এগুলো রেখে দিলে সেই দায় বাড়ির মালিক, অফিসের মালিক, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার কর্তৃপক্ষের নিতে হবে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের জন্য সবাইকে সচেতন হতে হবে।’
ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জোবায়দুর রহমানের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা-১৩ আসনের এমপি মো. সাদেক খান। আরও উপস্থিত ছিলেন—ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা, ডিএনসিসি মেয়রের উপদেষ্টা ও কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার, কাউন্সিলরবৃন্দ, আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাবৃন্দ ও ডিএনসিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।
মন্তব্য করুন