‘ট্রেনের ভিতর একজন লোক পুড়ে মরে আছে দেখছেন, তিনি অনেক রিকোয়েস্ট করছেন আমারে বাঁচাও, আমারে বাঁচাও। উনার বউ-বাচ্চাও ট্রেনে ছিল। কিন্তু আমরা তাকে বাঁচাতে পারিনি। আমরা অনেক চেষ্টা করেছি, কিন্তু কিছুই করতে পারিনি।’
ছল ছল চোখে কথাগুলো বলছিলেন বেনাপোল এক্সপ্রেসের আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে আসা প্রত্যক্ষদর্শী ফারুক হোসেন।
তিনি বলেন, আমরা এলাকাবাসী, যখন আগুন লেগেছে দৌড়ে এসেছি। যার কাছে যতটুকু পানি ছিল আমরা সেভাবে চেষ্টা করেছি, কিছুই করতে পারিনি। অনেক মানুষ আমার চোখের সামনে মারা গেছে। এলাকাবাসী সবাই মিলে অনেক চেষ্টা করছি, কিন্তু তাদের উদ্ধার করতে পারিনি। আমাদের কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি নেই।
তিনি আরও বলেন, ফায়ার সার্ভিস আগুন লাগার ১ ঘণ্টা পরে আসছে। আগে আসলে হয়তো আরও কিছু মানুষের প্রাণ বাঁচানো যেত। এত বড় আগুন, আমাদের কিছুই করার ছিল না।
শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) রাত ৯টার দিকে বেনাপোল এক্সপ্রেসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। ফায়ার সার্ভিসের ৮টি ইউনিটের চেষ্টায় রাত ১০টা ১০ মিনিটের দিকে আগুনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে আসে। এ ঘটনায় এখনো পর্যন্ত চারজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
এদিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসায় ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারী দল ট্রেনের ভেতরে প্রবেশ করেছে। মরদেহ নেওয়ার জন্য সাদা ব্যাগ বগির ভেতরে নেওয়া হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, কমলাপুরে প্রবেশের সময় একটি কামরায় আগুন দেয় নাশকতাকারীরা। এতে যাত্রীরা যে-যেভাবে পারেন কামরা থেকে বেরিয়ে আসেন। এ সময় এক যুবক আগুনে আটকা পড়েন। তিনি বেশ কিছুক্ষণ আগুনের ভেতরেই দৌড়-ঝাঁপ করে বাঁচার চেষ্টা চালান। তবে শেষ পর্যন্ত আর পারেননি।
আগুন যেভাবে ছড়িয়ে পড়ে ট্রেনের পুরো বগিতে ট্রেন থেকে নেমে আসা এক যাত্রী জানান, আমরা ওই যুবককে বাঁচানোর চেষ্টা করেছি। এক পর্যায়ে সে একটি জানালার পাশে এসে অক্সিজেন নিয়ে শক্তি সংগ্রহ করে বের হওয়ার চেষ্টা চালায়। আমরাও তাকে বের করে নিয়ে আসতে বাইরে থেকে টানতে থাকি। তবে তার একটি পা দগ্ধ হওয়ায় সে পরিপূর্ণ শক্তি প্রয়োগ করতে পারেনি। এছাড়া ট্রেনের জানালাটাও অর্ধেক বন্ধ থাকায়, তাকে আর বের করা সম্ভব হয়নি।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা তালহা বিন জসিম সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ট্রেনে আগুনের ঘটনায় ৮টি ইউনিট কাজ করছে ঘটনাস্থলে। এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ভেতরে যাত্রী আটকে থাকার আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে আমাদের কাজ চলমান রয়েছে। এই মুহূর্তে এর চেয়ে বেশি তথ্য নেই আমাদের কাছে।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, বেনাপোল এক্সপ্রেস (৭৯৫) দুপুর ১টায় বেনাপোল থেকে ছেড়ে আসে। ট্রেনটির ঢাকায় পৌঁছার কথা রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে। এর মধ্যে গোপীবাগে পৌঁছালে আগুনের ঘটনা ঘটে।
মন্তব্য করুন