দৈনিক কালবেলায় গত ১৩ মার্চ তুরাগ থানাধীন দিয়াবাড়ি পুলিশ ফাঁড়ির কয়েকজন কর্মকর্তার দুর্নীতি ও অনিয়ম নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করা হয়। সংবাদটি আমলে নিয়ে শুক্রবার (১৫ মার্চ) দিয়াবাড়ি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক টি.এম, আল আমিন এবং এএসআই মো. ওয়াসিমকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
সাময়িক বরখাস্তের বিষয়টি কালবেলাকে নিশ্চিত করেছেন উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. শাহজাহান। এছাড়াও সাময়িক বরখাস্ত করা অফিস অর্ডারের চিঠি এসেছে কালবেলার হাতে।
উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. শাহজাহান স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ১৩ মার্চ ‘দৈনিক কালবেলা’ পত্রিকায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, ঢাকার উত্তরা বিভাগের দিয়াবাড়ী পুলিশ ফাঁড়িতে কর্মরত ফাঁড়ির ইনচার্জ, এসআই (নিরস্ত্র) টি.এম, আল আমিন এবং এএসআই (নিরস্ত্র) ওয়াসিম দ্বয়ের ছবি সম্বলিত ‘ধরে নিয়ে কিস্তিতে ঘুষ নেয় পুলিশ, আতঙ্কে মানুষ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন ফলাও করে প্রচার করা হয়। যা বিভিন্ন অনলাইনেও ছড়িয়ে পড়ে। প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়- সোর্সের মাধ্যমে বিভিন্ন অটোরিকশা/ইজিবাইকের গ্যারেজ, লেগুনা ও অটোস্ট্যান্ড এবং ফুটপাত থেকে টাকা তোলা, জনৈক মো. জাবেদকে মাদকের মামলার ভয় দেখিয়ে ২ কিস্তিতে ২০ হাজার টাকা গ্রহণ, জনৈক নূরুল হোসেনের বাড়ির ড্রেনের কাজ বন্ধ করে দিয়ে পরে ১০ হাজার টাকা নিয়ে কাজ করতে দেওয়া, বাদালদি জামে মসজিদের সামনে ওয়াজ মাহফিল চলাকালে বাসার পাশে বসা জনৈক বাবু (১৫) ও তার বন্ধু আলামিন (১৬) নামে ২ জনকে ধরে নিয়ে ৬ হাজার টাকা করে ১২ হাজার টাকা নেওয়া, সাইফুদ্দিন সুন্দরি নামে এ ছেলেকে ধরে ২ লাখ টাকা দাবি করে না পেয়ে ২০০ পিস ট্যাপেন্টাডল ট্যাবলেট দিয়ে মামলা দেওয়া, লোকজনকে চেক করে সঙ্গে থাকা টাকা হাতিয়ে নেওয়া, মাদক পেয়েও অটোরিকশা চালক জনৈক রাজীবকে টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়া, ‘ঘুষ নির্ধারণে আদালত বসান আইসি আলামিন, আদায় করেন এএসআই ওয়াসিম’, বাউনিয়া সিভিল এভিয়েশন রুমে লোকজন ধরে নিয়ে বিচার করাসহ বিভিন্ন ধরনের অভিযোগের বর্ণনা করা হয়েছে।
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, বর্ণিত পুলিশ সদস্যদের এহেন কর্মকাণ্ডে জনসম্মুখে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ তথা বাংলাদেশ পুলিশের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে এবং জনমনে পুলিশ বাহিনী সম্পর্কে বিরূপ ধারণার সৃষ্টি হয়েছে। তাদের এহেন আচরণ কর্তব্যে অবহেলা ও শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজ করা এবং অসদাচরণের শামিল হওয়ায় এসআই (নিরস্ত্র) টি.এম. আল আমিন, ইনচার্জ, দিয়াবাড়ী পুলিশ ফাঁড়ি এবং একই ফাঁড়িতে কর্মরত এএসআই (নিরস্ত্র) ওয়াসিমকে ১৫ মার্চ থেকে চাকরি হতে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো।
এর আগে সংবাদটি আমলে নিয়ে ওইদিনই তাৎক্ষণিক ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উত্তরা বিভাগ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। এর পরদিন বৃহস্পতিবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে ডিএমপি কমিশনার স্বাক্ষরিত আরও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটিকে ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন ও সত্যতা যাচাই করে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে দায়-দায়িত্ব নির্ধারণপূর্বক মতামতসহ বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেন ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান।
মন্তব্য করুন