চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের এসএসসি পরীক্ষায় ব্যতিক্রমী সাফল্য পেয়েছে নাসিরাবাদ সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নিবিড় কর্মকার। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে অংশ নিয়ে সে পেয়েছে ১৩০০ নম্বরের মধ্যে ১২৮৫, যা এ বছরের সেরা ফলাফলের মধ্যে অন্যতম। বোর্ড থেকে সেরা শিক্ষার্থীদের কোনো তালিকা করা না হলেও অনেকের মতে এটা সর্বোচ্চ নম্বর।
নগরীর আন্দরকিল্লা এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করে নিবিড়ের পরিবার। বাবা জীবন কর্মকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন, মা রিপা রায় গৃহিণী। পড়ালেখার পাশাপাশি নিবিড়ের আঁকাআঁকির হাতও চমৎকার। বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে পেয়েছে অনেক পুরস্কার।
নিবিড়ের বাবা জীবন কর্মকার কালবেলাকে বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য আনন্দের সংবাদ। প্রতিটি মা-বাবাই এমন সাফল্য প্রত্যাশা করে। নিবিড় স্কুলের টেস্ট পরীক্ষায় বেশ ভালো করেছিল। তখন শ্রেণি শিক্ষক ডেকে বলেছিলেন-নাসিরাবাদ স্কুলের ইতিহাসে এমন নম্বর কেউ কখনো পায়নি। তখনই বুঝেছিলাম, ওর ভালো কিছু হবে।
শুধু স্কুল নয়, বিভিন্ন কোচিং সেন্টারের মডেল টেস্টেও অংশ নিয়েছে নিবিড়। বাবা জানান, চট্টগ্রামের প্রায় সব ভালো স্কুলের ছাত্ররা এসব কোচিংয়ে থাকে। সেখানেও নিবিড় প্রথম-দ্বিতীয় হতো। তখন আমরা নিশ্চিত ছিলাম, সে বোর্ডে ২/৪ জনের মধ্যে নিজের জায়গা করে নেবে।
তবে সাফল্যের পেছনে কোনো ‘চাপের’ কাহিনি নেই। জীবন কর্মকার বলেন, ওকে কখনোই জোর করিনি। ও নিজের মতো করে পড়ত। কখনো পড়ত, কখনো গেম খেলত। এমনকি পরীক্ষার সময়ও মোবাইল গেম খেলেছে। আমরা শুধু পাশে থেকেছি।
নিবিড় কালবেলাকে জানায়, দিনে গড়ে ছয় থেকে সাত ঘণ্টা পড়ত। তবে পড়াশোনার সময়টা ছিল একেবারে মনোযোগী। তার ভাষায়, ‘সময় যতই কম হোক, আমি যখন পড়তাম মন দিয়েই পড়তাম।’
নিবিড়ের মা রিপা রায় বলেন, ওর ওপর কখনোই চাপ দিইনি। বরং ও যেভাবে নিজে আগ্রহ দেখিয়েছে, আমরা কেবল সঙ্গ দিয়েছি। লেখাপড়ার পাশাপাশি রচনা প্রতিযোগিতা, অলিম্পিয়াড- সব কিছুতেই ছিল ওর অংশগ্রহণ।
নিবিড়ের এমন সাফল্যে বেশ উচ্ছ্বসিত তার বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও। তাই তো ফলাফল ঘোষণার ফুল নিয়ে নিজেদের সেরা ছাত্রকে অভিনন্দন জানাতে ছুটে গেছেন নিবিড়ের বাসায়। শিক্ষকরা জানান, নিবিড়ের মতো মনোযোগী শিক্ষার্থী খুব কমই পাওয়া যায়।
প্রধান শিক্ষক আবদুর রহমান জানান, ও খুবই ভদ্র, দায়িত্বশীল। আমরা তাকে নিয়ে বেশ আশাবাদী।
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক পারভেজ সাজ্জাদ চৌধুরী কালবেলাকে জানান, এ বছর আলাদা করে কোনো মেধাতালিকা তৈরি করা হয়নি। তবে নিবিড়ের ফল নিঃসন্দেহে অসাধারণ।
নিবিড়ের স্বপ্ন এখন ইঞ্জিনিয়ারিং। তার চাওয়া, ‘ভবিষ্যতে এমন কিছু করব, যাতে মানুষের উপকারে আসতে পারি।’
মন্তব্য করুন