‘জীবে প্রেম করে যেইজন, সেইজন সেবিছে ঈশ্বর’- এই কথাটি ফলেছে যেন চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. নুর উদ্দিন রাশেদের হাতে। পরপর তিন দিন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসে শরীরে ক্ষত নিয়ে একটি বানর। কিন্তু প্রথম যেদিন বানরটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসেছিল ওইদিন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানান। প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা কেউ আসেননি আহত বানরটিকে সেবা দিতে।
প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা জানান, আমাদের দায়িত্ব চিকিৎসা দেওয়ার, উদ্ধারের দায়িত্ব আমাদের নয়। বন বিভাগের কর্মকর্তারা বানরটিকে উদ্ধার করবে।
অন্যদিকে বন বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, একটি বন্যপ্রাণী যদি সাধারণ মানুষের ক্ষতি করে তাহলে সেটির দায়িত্ব বন কর্মকর্তাদের। কিন্তু বানরটি কারও ক্ষতি করছে না। চিকিৎসার জন্যই হাসপাতালের দ্বারে দ্বারে বানরটি ঘুরছে।
তৃতীয় দিনের মতো সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টার দিকে বানরটি পুনরায় আসে হাসপাতালের বারান্দায়। আবারও প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বানরটিকে ছেড়ে দেওয়া হয়। দুপুর দেড়টার দিকে চট্টগ্রাম থেকে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের একটি টিম মেডিকেলের ভেতর থেকে বানরটিকে উদ্ধার করেন। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বেশ কয়েক দিন ধরে খাদ্যের সন্ধানে একটি বানর লোকালয়ে এসে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরপাক খাচ্ছিল। কিন্তু দুদিন আগে বানরটি বৈদ্যুতিক শক লেগে শরীর পুড়ে যায়। একপর্যায়ে পুড়ে যাওয়া বানরের শরীরে পচন ধরে। শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে বানরটি সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান ফটকে শরীরে ক্ষত নিয়ে বসে থাকতে দেখে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পক্ষ থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।
এ ব্যাপারে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা তাহমিনা আরজুর সঙ্গে কথা বললে তিনি কালবেলাকে বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে বানরের বিষয়টি জানালে আমি বন বিভাগের কর্মকর্তাকে অনুরোধ জানিয়েছি বানরটিকে ধরে দেওয়ার জন্য। কিন্তু তারা বানরটি ধরে দেননি।
এ ছাড়াও তিনি আরও বলেন, বনের পশুপাখির মালিক বন বিভাগের কর্মকর্তারা। তারা চাইলে আমি খুব সহজেই বানরটিকে চিকিৎসা দিতে পারতাম।
উপকূলীয় বন বিভাগের সীতাকুণ্ড রেঞ্জ কর্মকর্তা কামাল হোসেন কালবেলাকে বলেন, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে একটি ভ্রাম্যমাণ গাড়ি দেওয়া আছে যেন দ্রুত যে কোনো প্রাণীর চিকিৎসা দেওয়া যায়। কোনো বন্য পশুপাখি যদি সাধারণ জনগণের ক্ষতি করে তাহলে অবশেষে আমরা উদ্ধার করতাম। কিন্তু বানরটি তো কারো ক্ষতি করতেছে না।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা নুর উদ্দিন রাশেদ কালবেলাকে বলেন, রোববার বানরটিকে ক্ষত অবস্থায় মেডিকেলে বারান্দায় পড়ে থাকতে দেখে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানাই। কিন্তু তারা কেউ এলেন না। পরে বানরটিকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হলে বানরটি বনের দিকে চলে যায়। তৃতীয় দিনের মতো আজকেও হাসপাতালের বারান্দায় এসেছিল বানরটি। আবারও বানরটিকে চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে দুপুর দেড়টার দিকে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের একটি টিম বানরটিকে উদ্ধার করেন। পাহাড়ে খাদ্যের অভাবের কারণে লোকালয়ে নেমে আসছে বনের বিভিন্ন পশুপাখি।
সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কে এম রফিকুল ইসলাম কালবেলাকে জানান, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিভাগের একটি টিম বানরটিকে উদ্ধার করে উন্নত চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায়।
মন্তব্য করুন