চট্টগ্রাম নগরীতে ডাকাত চক্রের সদস্যরা পাল্টাচ্ছে নিত্য নতুন কৌশল। দেশ ছাপিয়ে বিদেশেও তৈরি করেছে নেটওয়ার্ক। সেখান থেকে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে বিদেশফেরত প্রবাসীদের সম্পর্কে জানান দেওয়া হয়।
পরে দেশে থাকা চক্রের সদস্যরা পিছু নেয় প্রবাসীদের। বন্দর নগরীতে এমন চক্রের সাত সদস্যকে গ্রেপ্তার করার পর এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) নগর পুলিশের পশ্চিম বিভাগের উপ-কমিশনার হোসাইন মোহাম্মদ কবির ভূঁইয়া এ তথ্য জানিয়েছেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মোহাম্মদ সামসু উদ্দিন গত ২১ জুলাই দুবাই থেকে চট্টগ্রাম শাহ-আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে ফিরে একটি সিএনজি ভাড়া করেন। হালিশহর থানার সাগরপাড় লিংক রোড বারুনীঘাটস্থ ডগিরখাল ব্রিজের কাছে পৌঁছালে একটি কালো রঙের মাইক্রোবাস সিএনজি গাড়িটিকে চাপা দিয়ে থামিয়ে দেয়। মাইক্রোবাস থেকে নেমে আসা ৩ জন ডাকাত বিদেশ থেকে নিয়ে আসা তার স্বর্ণালংকার, মোবাইল ফোন, নগদ টাকা ও অন্যান্য মালামাল জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেয়। যেসব মালামালের মূল্য আনুমানিক ১৯ লাখ ৮২ হাজার টাকা। পরে ২৩ জুলাই হালিশহর থানায় তিনি একটি মামলা করেন।
হালিশহর থানার ওসি জাকির হোসেন কালবেলাকে বলেন, গোপন তথ্য চট্টগ্রামের একটি চক্রের কাছে পাঠান দুবাইতে থাকা আরেক সদস্য। বিমানবন্দরে নামতেই শুরু হয় অনুসরণ। সুযোগ বুঝে নির্জন জায়গায় পৌঁছতেই লুটে নেওয়া হয় ওই প্রবাসীর কাছে থাকা মূল্যবান মালামাল। ওইসব মালামাল বিক্রি করতেন একটি দোকানে। সেই অর্থ ভাগাভাগি করে নিতেন চক্রের সদস্যরা। সম্প্রতি এই চক্রের শিকার হন মোহাম্মদ সামসু উদ্দিন নামে এক দুবাইপ্রবাসী। তার করা মামলার পর নড়েচড়ে বসে নগর পুলিশ। অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয় চক্রের ৭ সদস্যকে। উদ্ধার করা হয় লুট করা মালামালও।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন— মো. মনির উদ্দিন (৩৩), সৈয়দ মজিবুল হক (৪৭), মো. আলীম হাওলাদার জাবেদ (৩২), মো. হাসান (৩০), মো. রুবেল (২৭), মো. সুমন (২৬) ও মো. ইমরান মাহামুদুল প্রকাশ ইমন (২৫)।
উপ-কমিশনার হোসাইন মোহাম্মদ কবির ভূঁইয়া জানান, প্রথমেই মাইক্রোবাসের নম্বর দিয়ে মালিকানা যাচাই করে গাড়িটি নগরের পাঁচলাইশ থানা এলাকা থেকে জব্দ করা হয়। এরপর গত ২৩ জুলাই নগর ও জেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ঘটনার সঙ্গে জড়িত ৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার সৈয়দ মজিবুল হকের বরাত দিয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা আরও জানান, মজিবুল দুবাই প্রবাসী ফয়সালের কাছ থেকে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে বিদেশ হতে আগত যাত্রীদের আগমনের তারিখ, যাত্রীদের ছবিসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে। এরপর পরিকল্পনা করে আসামি মনির অন্য আসামিদেরকে নিয়ে দেশে আসা যাত্রীদের ডাকাতি করে। লুটের মালামালের একটি অংশ তারা মজিবুলকে দেয়।
‘আসামিরা জিজ্ঞাসাবাদে লুণ্ঠিত মালামালের বিষয়ে একে অন্যের উপর দোষ চাপিয়ে দিচ্ছিল’ উল্লেখ করে ডিসি কবির জানান, গত ৫ আগস্ট আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তারা জানায়, মামলার ঘটনার পর আসামি আলীম হাওলাদার জাবেদ, মো. হাসান ও পলাতক আসামি সাদ্দাম ও রাসেল চান্দগাঁও থানাধীন পাঠানিয়া গোদা এলাকার একটি দোকানে ছিনতাইকৃত স্বর্ণালংকার বিক্রি করে। পরে টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয়। সেই তথ্যের ভিত্তিতে ওই এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৫ ভরি ১১ আনা স্বর্ণ এবং দুটি দামি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। এছাড়াও সেসময় পলাতক আসামি ইমন ও সুমনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
মন্তব্য করুন