এসএসসি পাস করে চট্টগ্রামে চাকরি খুঁজছিলেন এক যুবক। ‘এনএসআই কর্মকর্তা’ বলে পরিচয় দেওয়া এক নারীর সঙ্গে তার পরিচয় হয়। যুবকটি ধরেই নিয়েছিলেন, তার হয়ত কপাল খুলে গেছে। কারণ ওই নারী তাকে এনএসআইতে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেন। তবে এটি ছিল ফাঁদ। সেই ফাঁদে পা দিয়ে ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকা খোয়া গেল যুবকের। আশ্রয় নিলেন র্যাবের দুয়ারে। অবশেষে স্বামীসহ র্যাবের হাতেই ধরা পড়ল সেই নারী।
শুক্রবার (২৪ মে) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে র্যাব-৭।
এর আগে, বুধবার (২২ মে) সীতাকুণ্ড থানার প্রেমতলা কলেজ রোড এলাকায় অভিযান চালিয়ে ওই নারীকে এবং তার স্বামীকে বাড়বকুণ্ড এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-৭-এর একটি দল। এ সময় ৯৬০ পিস ইয়াবা বড়ি উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তাররা হলেন, মমতাজ বেগম (৩৪) ও তার স্বামী মুজিবুর রহমান (৪৬)।
র্যাব জানায়, গ্রামের সহজ-সরল মানুষকে এনএসআই-তে সোর্স, ওয়াচার কনস্টেবল, ফিল্ড অফিসারসহ বিভিন্ন পদে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ফাঁদে ফেলতেন এই দুজন। চাকরি দেওয়ার কথা বলে লোকজনের কাছ থেকে তারা মোটা অঙ্কের টাকা নিতেন। পরে খোঁজ নিলে জানা যায়, মমতাজ কখনোই এনএসআইতে ছিলেন না।
জানা যায়, এসএসসি পাস করার পর থেকে চাকরি খুঁজছিলেন মঞ্জুর আলম। ২০২১ সালে ভাগ্নীর বিয়েতে মমতাজ বেগমের সঙ্গে পরিচয় হয়। মমতাজ নিজেকে ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন, এনএসআইয়ের উপ-পরিচালক হিসেবে পরিচয় দেন। এ সময় মুঞ্জুর আলমকে এনএসআইয়ের ফিল্ড অফিসার পদে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দেওয়ার প্রস্তাব দেয়। প্রলোভনে পা দিয়ে মুঞ্জুর তার বোন জামাই, মামা এবং বন্ধুকেও এই ফাঁদে ফেলে। একই বছরের ২২ নভেম্বর মুঞ্জুর আলম ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকা, তার মামা একরাম হোসেন ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা, বন্ধু নয়ন ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা এবং তার বোন জামাই ১২ লাখ টাকা মোট ৩৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা মমতাজ বেগমকে দেয়। ২ বছর ৬ মাস পর এনএসআইয়ের সার্কুলার হলেও মমতাজ বেগম তাদেরকে চাকরি দিতে ব্যর্থ হয়। পরে খোঁজ নিয়ে তারা জানতে পারে যে মমতাজ বেগম প্রতারণা করেছেন। এনএসআইয়ে তিনি কখনো ছিলেন না। এরপর টাকা ফেরত চাইলে মমতাজ বেগম ও তার স্বামী তাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। নিরুপায় হয়ে র্যাব-৭ এর আশ্রয় নেন তারা। বিষয়টি আমলে নিয়ে র্যাব ও জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা (এনএসআই) প্রতারক চক্রকে ধরতে মাঠে নামে।
র্যাব-৭ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম) মো. শরীফ-উল-আলম কালবেলাকে বলেন, মমতাজ ও তার স্বামী এনএসআইয়ের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তার পরিচয় দিয়ে পরস্পর যোগসাজশে চাকরি প্রার্থীদের চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণামূলকভাবে টাকা গ্রহণ করে আত্মসাৎ করে আসছে। এ ছাড়া মমতাজ বেগম দীর্ঘদিন ধরে মাদকদ্রব্য ইয়াবা বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহ করে খুচরা বিক্রয় করে আসছিল। গ্রেপ্তারদের সীতাকুণ্ড থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা।
মন্তব্য করুন