চট্টগ্রামে একটি পরিত্যক্ত একতলা ঘর থেকে মো. আসাদুজ্জামান আসিফ (২২) ও মোহাম্মদ আহাদ (২১) নামে দুই জঙ্গি সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৭ এর একটি দল।
এ সময় তাদের কাছ থেকে একাধিক জিহাদি বইসহ অন্যান্য আলামত উদ্ধার করা হয়।
র্যাবের দাবি, জঙ্গিরা যোগাযোগে ‘বিপ’ অ্যাপে সক্রিয়।
শুক্রবার (১৪ জুন) চট্টগ্রামের কর্ণফুলী থানাধীন শিকলবাহা ইউনিয়ন এলাকার একটি পরিত্যক্ত একতলা ঘর থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। সেখানে তারা মিটিং করছিল।
গ্রেপ্তার আসাদুজ্জামান আসিফের বাড়ি পঞ্চগড় এবং মোহাম্মদ আহাদের বাড়ি পাবনায়।
র্যাব জানায়, গত ২৩ মে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-৩ এর একটি অভিযানিক দল গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর গুলিস্তান ও সাইনবোর্ড এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ‘আনসার আল ইসলাম’ এর ৩ শীর্ষ স্থানীয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
তারা আফগানিস্তানে তালেবানের উত্থানে উদ্বুদ্ধ হয়ে আল কায়েদা মতাদর্শের জঙ্গি সংগঠন ‘আনসার আল ইসলাম’ এ যোগদান করেন। কিন্তু র্যাবসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানের ফলে আনসার আল ইসলামের কার্যক্রম প্রায় স্তিমিত হয়ে পড়লে আনসার আল ইসলামের নামে নতুন সদস্য সংগ্রহসহ কার্যক্রম পরিচালনা এবং চলমান রাখার জন্য গ্রেপ্তারকৃতরা আনসার আল ইসলাম মতাদর্শী ‘শাহাদাত’ নামে নতুন একটি জঙ্গি সংগঠন তৈরি করে নতুন সদস্য সংগ্রহসহ দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকে।
এই সংগঠনের সদস্য সংখ্যা শতাধিক। যোগাযোগের জন্য তারা ব্যবহার করে End To End Encrypted বিভিন্ন মেসেঞ্জার এবং মোবাইল অ্যাপ। ‘বিপ’ নামে একটি মোবাইল অ্যাপ তাদের কাছে বর্তমানে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ও প্রধান যোগাযোগমাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
র্যাব-৭ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) মো. শরীফ উল আলম বলেন, এ সংগঠনের প্রধান লক্ষ্য শিক্ষিত ও উগ্র উঠতি বয়সীদের আকৃষ্ট করে দেশ বিরোধিতার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা উক্ত সংগঠনের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছে।
তিনি আরও বলেন, তারা বিভিন্ন সময় অনলাইনে বিভিন্ন উগ্রবাদী নেতাদের উসকানিমূলক বক্তব্য শুনে ও দেখে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে এবং ওই সংগঠনে যোগদান করে। পরবর্তীতে তারা ‘আনসার আল ইসলাম’ এর মতাদর্শে পরিচালিত নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘শাহাদাত’ গ্রুপের নামে সদস্য সংগ্রহ ও দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করছিল।
‘তাদের মূল উদ্দেশ্য হলো বাংলাদেশে ইসলামি খেলাফত প্রতিষ্ঠা করা। সংগঠনের সদস্যদের তারা বিভিন্ন উগ্রবাদী পুস্তিকা, মুসলমানদের ওপর নির্যাতন ও উগ্রবাদী নেতাদের বক্তব্যের ভিডিও সরবরাহ করত।’
‘এ ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে তারা মসজিদ, বাসা বা বিভিন্ন স্থানে সদস্যদের নিয়ে গোপন সভা পরিচালনা করত এবং সংগঠনের সদস্যদের শারীরিক প্রশিক্ষণ প্রদান করত। তারা বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিশেষত চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, যশোর, সাতক্ষীরাসহ ঢাকার আশপাশের বিভিন্ন এলাকাকে প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য নির্ধারণ করেছে বলে জানা যায়।’
মো. শরীফ উল আলম জানান, গ্রেপ্তাররা তাদের গ্রুপকে আরও শক্তিশালী করার জন্য সমমনা উগ্রবাদী জঙ্গি সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে তাদের সুসম্পর্ক রয়েছে বলে জানায়। গ্রেপ্তাররা তাদের তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষার স্বার্থে নতুন গোপনীয় অ্যাপসের মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষা করত এবং সংগঠনের সকল প্রকার নির্দেশনা এই অ্যাপসের মাধ্যমে প্রদান করত বলে জানা যায়।
পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে তাদের কর্ণফুলী থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
মন্তব্য করুন