সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ৩২তম ওয়ার্ল্ড পিকচার কনটেস্ট-এ মোস্তাফিজ একাডেমি অব ফাইন আর্টস (MAFA)-এর শিক্ষার্থীরা সম্মানজনক ৮টি পুরস্কার অর্জন করেছে। জাপানের খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠান IE-NO-HIKARI Association আয়োজিত আন্তর্জাতিক এই প্রতিযোগিতায় এ বছর ৬৮টি দেশ ও অঞ্চল থেকে মোট ১১,৪৭৯টি চিত্রকর্ম জমা পড়ে। তন্মধ্যে মাত্র ২০০টি চিত্রকর্মকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়। গর্বের বিষয়, এর মধ্যে MAFA-এর ৮ শিক্ষার্থী পুরস্কৃত হয়েছেন। যাদের ২ জন গোল্ড, ৪ জন সিলভার এবং ২ জন ব্রোঞ্জ পদক পেয়েছেন। উক্ত অর্জনের মধ্য দিয়ে MAFA-এর সৃজনশীল চর্চার গৌরব গাঁথা প্রকাশের পাশাপাশি ক্ষুদে আঁকিয়েদের অত্যন্ত গুরুত্ববহুল এই অর্জনের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল হয়েছে বলা চলে।
উক্ত অর্জনের স্বীকৃতি স্বরূপ গত ২ মে ২০২৫ তাং MAFA এর লালমাটিয়া শাখায় এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের পুরস্কৃত করা হয়। যেখানে MAFA এর প্রতিষ্ঠাতা বরেণ্য চিত্রশিল্পী অধ্যাপক মোস্তাফিজুল হক শিক্ষার্থীদের হাতে শুভেচ্ছা উপহার তুলে দেন। অনুষ্ঠানে MAFA-এর সব শিক্ষক ও অভিভাবকরা উপস্থিত ছিলেন।
পুরস্কারপ্রাপ্তদের শুভেচ্ছা উপহার প্রদান করে অধ্যাপক মোস্তাফিজুল হক বলেন, এই সাফল্য কেবল আমাদের শিক্ষার্থীদের নয়, এটি সমগ্র দেশের অর্জন। আমাদের শিশু-কিশোররা আন্তর্জাতিক পর্যায়েও প্রতিযোগিতা করে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে এটাই বড় প্রাপ্তি।
বিশ্বব্যাপী ৬ থেকে ১৫ বছর বয়সী শিশুদের অংশগ্রহণে আয়োজিত এই প্রতিযোগিতাটি ১৯৯৩ সাল থেকে প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এর লক্ষ্য হচ্ছে শিল্পের মাধ্যমে শিশুদের মধ্যে আন্তঃসাংস্কৃতিক বন্ধন, বন্ধুত্ব ও পারস্পরিক বোঝাপড়া সৃষ্টি করা।
প্রতিযোগিতার বিচারক প্যানেলে ছিলেন জাপানের টোকিও-ভিত্তিক The National Museum of Modern Art-এর মহাপরিচালক, Tokzo Universitz of the Arts Ges Universitz of the Sacred Heart-এর অধ্যাপকসহ বিভিন্ন খ্যাতিমান শিল্প-শিক্ষাবিদ ও শিল্পচর্চায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিত্বরা।
MAFA বিগত অনেক বছর ধরেই এই প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে আসছে এবং প্রতি বছরই আন্তর্জাতিক সম্মান অর্জন করে চলেছে। প্রতিষ্ঠানটির ধারাবাহিক এই সাফল্যের পেছনে রয়েছেন শিশু-কিশোরদের শিল্প শিক্ষায় বাংলাদেশের পথিকৃৎ, বরেণ্য চিত্রশিল্পী অধ্যাপক মোস্তাফিজুল হকের দূরদর্শী নেতৃত্ব তথা অবদান। চিত্রশিল্পে অনবদ্য ভূমিকা, বিশেষ করে চিত্রাঙ্কনে শিশুদের আগ্রহ তৈরি ও তাদের সৃজনশীল মনোবিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার স্বীকৃতি স্বরূপ মহাত্মা গান্ধী আন্তর্জাতিক শান্তি পুরস্কার-২০২৩ অর্জনকারী এই শিল্পী বাংলাদেশের বিশিষ্ট শিশু চিত্রাঙ্কন বিশেষজ্ঞ। বরেণ্য এই শিল্পী ১৯৭৫ থেকে প্রায় অর্ধশতক ধরে বাংলাদেশের কোমলমতি শিশুদের সৃজনশীল ও মানবিক নাগরিক হিসাবে গড়ে তোলার জন্য নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। শিশুদের মানবিক ও সৃজনশীলতা বিকাশের লক্ষ্যে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন শিশুদের মনস্তাত্ত্বিক গবেষণা কেন্দ্র সেন্টার ফর চাইল্ড ক্রিয়েটিভিটি, আজিমপুর লেডিস ক্লাব চিত্রাঙ্কন বিভাগ, বাংলাদেশ শিশু একাডেমি'র চিত্রাঙ্কন বিভাগ, প্রভাতি আর্ট স্কুল, ‘শান্ত-মারিয়াম একাডেমি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি এবং 'মোস্তাফিজ একাডেমি অব ফাইন আর্টস’ (মাফা) প্রভৃতি। তিনি বাংলাদেশের প্রথম ডিজাইন, আর্ট ও সাংস্কৃতিক বিশেষায়িত শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি'র বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান।
MAFA কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের এই অসাধারণ সাফল্যে জড়িত সব অংশগ্রহণকারী, অভিভাবক, শিক্ষক ও শুভানুধ্যায়ীদের আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও অভিনন্দন জানায়। প্রতিষ্ঠানটি ভবিষ্যতেও শিশুদের সৃজনশীলতাকে লালন ও উৎকর্ষ সাধনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
মন্তব্য করুন