বাঁশ ও নারিকেলের খোসা দিয়ে বিভিন্ন নান্দনিক ডিজাইনের পণ্য তৈরি করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তরুণ রিকশাচালক জাহাঙ্গীর আলম। সংসার চালাতে রিকশা চালালেও হৃদয়ে লালন করেন শিল্প। জাহাঙ্গীর আলমের তৈরি এসব পণ্য নিত্য ব্যবহার্য থেকে শোপিস হিসেবে ব্যবহার করা যায়, যা দেখে সবার নজর কাড়ে। দেশের বাইরেও রপ্তানির লক্ষ্য নিয়ে রিকশা চালানোর পাশাপাশি কারুপণ্য তৈরি করছেন এই তরুণ।
ময়মনসিংহ সদর উপজেলার খাগডহর ইউনিয়নের মনতলা গ্রামের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম। একসময় তিনি দিনমজুরের কাজ করতেন। এখন রিকশা চালান, পাশাপাশি কারুপণ্য তৈরি করেন।
প্রথমে শখের বসে বাঁশ দিয়ে পণ্য তৈরি করা শুরু করলেও এখন বাণিজ্যিকভাবে কারুপণ্য তৈরি করছেন। তার কাজে সহযোগিতা করেন স্ত্রী জান্নাত আক্তার। ৯ বছর ও দুই বছর বয়সী দুই কন্যাসন্তান নিয়ে এই দম্পতির সংসার।
জাহাঙ্গীর আলম ২০০৮ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ার পর নানা পেশায় কাজ করেন। এখন সব পেশা পাল্টে ময়মনসিংহ নগরীতে এক দিন পরপর রিকশা চালাতে যান। সে কারণে যেদিন বাড়িতে বসে থাকেন, সেদিন ব্যস্ত হয়ে পড়েন কারুপণ্য তৈরিতে। বড় ভাইয়ের নির্মাণাধীন একটি ঘরেই আপাতত কারুপণ্য তৈরি করছেন।
ইলেকট্রিক্যাল গ্রাইন্ডিং মেশিন, ড্রিল মেশিনের ব্যবহার করে এসব পণ্য তৈরি করেন জাহাঙ্গীর আলম। প্লাস্টিক ও অ্যালুমিনিয়ামের জিনিসের পরিবর্তে ব্যবহারের জন্য পরিবেশবান্ধব পণ্য তৈরি করেন।
জাহাঙ্গীর আলমের বাড়িতে ঢুকতেই দেখা গেল একটি কক্ষে বসে বাঁশ ও নারিকেলের খোসা দিয়ে নান্দনিক কারুপণ্য তৈরি করছেন, পাশে দেখা গেল বিক্রির জন্য বানিয়ে রাখা হয়েছে বিভিন্ন ধরনের তৈজসপত্র। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের বাঁশের তৈরি মামপট, কলমদানি, ব্রাশ হোল্ডার, ফুলের টব, ওয়ালমেট, দেয়ালঘড়ি, কাপ, ল্যাম্প, চামচ, শোপিস, চায়ের কেটলি, পানির বোতল, ফুলদানি, মগ, জগ, ট্রেসহ কত কী।
জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী জান্নাত আক্তার বলেন, তার স্বামী অনেক শখ করে কাজটি করেন। এসব কারুপণ্য নিয়ে আরও বহুদূর যাওয়ার স্বপ্ন রয়েছে। এসব পণ্য আমার দুই কন্যাসন্তান নিয়ে মেলায়, পার্কে আমি বিক্রি করি। স্বামী রিকশা চালান, তিনি সময় দিতে পারেন না। এসব পণ্য স্থানীয় বাজারে বিক্রি করেন, তাতে তেমন দাম পান না। তাই অনলাইনে বিক্রির চিন্তা করছেন। সুযোগ হলে দেশের বাইরেও রপ্তানি করতে চান।
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বাড়িতে অলস বসে থাকার চেয়ে কিছু একটা করার চিন্তা থেকে কারুপণ্য তৈরি শুরু করেন। সেগুলো দেখে এলাকার মানুষ ভালো বলতে থাকেন, তখন তিনি আরও উৎসাহ পান। একসময় প্রতিটি বাড়িতেই বাঁশ ও নারিকেলের খোসার তৈরি জিনিসপত্রের ব্যবহার ছিল, চাহিদাও ছিল প্রচুর। বর্তমানে প্লাস্টিক পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় বাঁশের তৈরি নিত্যব্যবহার্য সামগ্রী হারিয়ে যেতে বসেছে।
তিনি আরও বলেন, এসব হস্ত ও কারুপণ্য দেশের বিভিন্ন এলাকায় ইন্টেরিয়র, এক্সটেরিয়র ডেকোরেশন, রেস্টুরেন্ট, অফিস, রিসোর্ট, পার্কসহ বিভিন্ন স্থাপনায় নান্দনিক ডেকোরেশন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। পাশাপাশি ঘর সাজাতেও এসব পণ্যের যথেষ্ট কদর রয়েছে, তাই এসব পণ্য বানাতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন।
তিনি বলেন, ইন্টারনেট ঘেঁটে নানা কলাকৌশল শেখেন। ঘুণপোকা ধরা থেকে রক্ষা পেতে ও টেকসই করতে এগুলো তৈরি করতে প্রথমে বাঁশ ও নারিকেলের খোসা কেটে প্রক্রিয়াকরণের জন্য রাসায়নিক উপকরণ দিতে হয়। ভিজিয়ে রেখে তা রোদে শুকানো হয়। এরপর পণ্য বানিয়ে সেগুলোয় বার্নিশ করেন। বর্তমানে ২৫ থেকে ৩০ ধরনের পণ্য বানান।
মন্তব্য করুন