রাজশাহীর কাদিরগঞ্জে যৌথবাহিনীর অভিযানে গ্রেপ্তার আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের চাচাতো ভাই ও ডক্টর ইংলিশ কোচিংয়ের মালিক মুনতাসির আলম অনিন্দ্য ও তার দুই সহযোগীর ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
রোববার (১৭ আগস্ট) দুপুরে রাজশাহী মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মামুনুর রশিদ এই রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আদালয়ের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আলী আশরাফ জামান এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে গত শনিবার সেনা অভিযানে বিস্ফোরক, অস্ত্র ও মাদকদ্রব্যসহ তাদের আটক করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে রাতে নগরীর বোয়ালিয়া থানা পুলিশ বাদি হয়ে এই মামলা দায়ের করে। এই মামলায় রোববার দুপুরে তাদের আদালতে হাজির করা হয়।
আইনজীবী আলী আশরাফ জামান বলেন, সেনা অভিযানে আটকদের বিরুদ্ধে নগরীর বোয়ালিয়া থানায় পুলিশ বাদি হয়ে অস্ত্র, বিস্ফোরক ও মাকদ্রব্য আইনে একটি মামলায় তাদের আদালতে তোলা হয়। পুলিশ এই মামলায় গ্রেপ্তার প্রত্যেকের ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করে। তবে আদালত তিন জনকেই ৫ দিনের করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
উল্লেখ্য, দীর্ঘ ১ মাসের গোয়েন্দা নজরদারির ভিত্তিতে গত শুক্রবার রাত দেড়টার টার দিকে রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানাধীন দরিখরবোনা এলাকার ওই কোচিং সেন্টারে ৪০ ইস্ট বেঙ্গল (মেকানাইজড) এর একটি বিশেষ অভিযান শুরু করে। পরেরদিন শনিবার বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত চলা ওই অভিযানে ৩টি আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি, সামরিক মানের দুরবিন ও স্নাইপার স্কোপ, ৬টি দেশীয় অস্ত্র, বিদেশি ৭টি ধারালো ডেগার, ৫টি উন্নতমানের ওয়াকি-টকি সেট, একটি সামরিক মানের জিপিএস, একটি টিজার গান, বিভিন্ন দেশি ও বিদেশি কার্টিজ, বিপুল সংখ্যক অব্যবহৃত সিম কার্ড, বিস্ফোরক বোমা বানানোর সরঞ্জামাদি, ৬টি কম্পিউটার সেট, নগদ ৭ হাজার ৪৪৫ টাকা, বিভিন্ন দেশি-বিদেশি মদ ও ১১টি নাইট্রোজেন কার্টিজ (যেগুলো বিস্ফোরণের কাজে ব্যবহৃত তাজা সামগ্রী হওয়ায় বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট দ্বারা নিষ্ক্রিয় করা হয়) উদ্ধার করে। এ সময় এই তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়।
জানা গেছে, অনিন্দ্যের বাবা শফিউল আলম লাট্টু আওয়ামী লীগ নেতা এএইচএম খাইরুজ্জামান লিটনের চাচা। যদিও লাট্টু বিএনপি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এক সময় লাট্টু রাজশাহী মহানগর বিএনপির সহসভাপতি ছিলেন। এর আগে গ্রেফতার অনিন্দ্যের বিরুদ্ধে জঙ্গি সম্পর্কিত তার অভিযোগ রয়েছে। মূলত রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে জঙ্গি সম্পৃক্ততার মতো অভিযোগ ওঠার পরও অনিন্দ্য রেহাই পেয়ে যান বলে রয়েছে অভিযোগ।
জানা গেছে, ২০১৬ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক এএফএম রেজাউল করিম সিদ্দিকী হত্যাকাণ্ড ও একই বছরের জুলাইয়ে গুলশানের হোলি আর্টিজান হামলার ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে অনিন্দ্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছিল। তবে রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে তিনি ওই দুটি মামলা থেকে রেহাই পান।
এ দুটি মামলায় মৃত্যুদণ্ড পাওয়া জঙ্গি শরিফুল ইসলামও অনিন্দ্যের সঙ্গে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে পড়াশোনা করতেন। গ্রেপ্তারের পর শরিফুল গোয়েন্দাদের জানিয়েছিলেন, তিনি অনিন্দ্যের মাধ্যমেই আনসার-আল ইসলামে যোগ দিয়েছিলেন। অনিন্দ্য তাদের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান কালবেলাকে বলেন, অভিযানে অস্ত্র ও বিস্ফোরক উদ্ধারের ঘটনায় মামলা করা হয়েছে। তারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্রদের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল-সে সম্পর্কিত মামলাতেও তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হতে পারে।
জঙ্গি সম্পৃক্ততার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তাদের সাধারণ অপরাধী মনে হচ্ছে না। তাদের পরিকল্পনা কী ছিল এবং আর কারও সঙ্গে সম্পৃক্ততা আছে কি না, তা রিমান্ডে নিয়ে খতিয়ে দেখা হবে।’
মন্তব্য করুন