কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ০২ জুন ২০২৫, ০৫:৩৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

বাংলাদেশে নারী উদ্যোক্তাদের ডিজিটাল ক্ষমতায়নে মাস্টারকার্ড ও শপআপের ‘পড়শি’ প্রকল্প

গেটস ফাউন্ডেশনের সহায়তায় ‘পড়শি’ শীর্ষক একটি নতুন প্রকল্প চালু। ছবি : কালবেলা
গেটস ফাউন্ডেশনের সহায়তায় ‘পড়শি’ শীর্ষক একটি নতুন প্রকল্প চালু। ছবি : কালবেলা

নারী ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ডিজিটাল দক্ষতা ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম দিয়ে সহায়তা করতে ‘মাস্টারকার্ড সেন্টার ফর ইনক্লুসিভ গ্রোথ’ ও কমার্স প্ল্যাটফর্ম ‘শপআপ’ সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করছে।

সোমবার (০২ জুন) এ উদ্যোগের আওতায় গেটস ফাউন্ডেশনের সহায়তায় ‘পড়শি’ শীর্ষক একটি নতুন প্রকল্প চালু করা হয়েছে। প্রকল্পটি মাস্টারকার্ডের বৈশ্বিক ‘স্ট্রাইভ’ উদ্যোগের অংশ, যার উদ্দেশ্য ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ডিজিটাল রূপান্তর এবং দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করা।

এ প্রকল্পের লক্ষ্য হলো ১,৬০০ জন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর দক্ষতা বৃদ্ধি এবং তাদের এমনভাবে সহায়তা করা, যাতে তারা সহজেই নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের (এফএমসিজি) সরবরাহ ব্যবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত হতে পারেন। এ উদ্যোগের ফলে প্রায় ৪০ শতাংশ ব্যবসায়ী নিয়মিতভাবে শপআপ অ্যাপ ব্যবহার করে পণ্য ডেলিভারি দিতে পারবেন।

মাস্টারকার্ড সেন্টার ফর ইনক্লুসিভ গ্রোথ, সোশ্যাল ইমপ্যাক্টের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট সুভাষিনী চন্দ্রন বলেন, ‘শক্তিশালী ও সুস্থ সমাজ গঠনে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ উদ্যোগের মাধ্যমে নারী উদ্যোক্তারা বেশি আয় করতে পারবেন এবং আজকের ডিজিটাল অর্থনীতির যুগে আরও টেকসই, প্রতিযোগিতামূলক ও সফল হতে পারবেন।’

বাংলাদেশে অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হলো ছোট, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা (এমএসএমই)। দেশের মোট জিডিপির ২৫ শতাংশ এ খাতটির অবদান রয়েছে, আর মোট কর্মসংস্থানের ৮৭ শতাংশ মানুষ কাজ করছেন এই খাতে। তবে এ ব্যবসাগুলো প্রায় ২ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারের আর্থিক ঘাটতির পাশাপাশি অনানুষ্ঠানিক কাঠামো ও চাকরির স্থায়িত্বের অভাবসহ নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি।

যদিও নিবন্ধিত এমএসএমই-এর মাত্র ৭ দশমিক ২ শতাংশ নারী নেতৃত্বে পরিচালিত হয়, যার বেশিরভাগই খুব ছোট আকারের; তবুও আরও অনেক নারী অনানুষ্ঠানিকভাবে ব্যবসা চালান। এসব ব্যবসা অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে; তারা পণ্য ও সেবা প্রদান করে এবং বিশেষ করে অন্য নারীদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে।

মাস্টারকার্ড বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল বলেন, ‘বাংলাদেশে নারীদের নেতৃত্বে পরিচালিত ক্ষুদ্র ব্যবসাগুলোর উন্নয়নে সহায়তা করলে যে অর্থনৈতিক সম্ভাবনা তৈরি হয় এবং এর ইতিবাচক প্রভাব সমাজে ছড়িয়ে পড়ে- মাস্টারকার্ড সেটা ভালোভাবে উপলব্ধি করে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই ব্যবসাগুলোর আকার ছোট হলেও তারা স্থানীয় অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যায় এবং অন্য নারীদের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করে। তাদের প্রয়োজন সঠিক প্রযুক্তি, দক্ষতা ও আর্থিক সচেতনতা, যা তাদের ব্যবসাকে এগিয়ে নিতে সহায়তা করবে।’

গেটস ফাউন্ডেশনের উইমেন্স ইকোনমিক এমপাওয়ারমেন্টের সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার এমি পেনিংটন বলেন, ‘বাজারে প্রবেশ ও ডিজিটাল ব্যবহারে নারী-পুরুষের বৈষম্য কমানো অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের জন্য খুবই জরুরি। নারীরা যখন পূর্ণভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে, তখন পুরো সমাজ ও অর্থনীতি উপকৃত হয়।’

মিল, ব্র্যান্ড ও প্রস্তুতকারকদের সঙ্গে শপআপ পাড়ার ছোট দোকানগুলোর সঙ্গে সংযোগ তৈরি করে, যাতে তারা সহজেই নিয়মিত ও বৈচিত্র্যময় খাবার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ পায়। শপআপের মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা স্থানীয় মানুষের অর্ডার গ্রহণ ও পরিচালনা করতে পারেন এবং সাশ্রয়ী দামে পণ্য সরাসরি গ্রাহকের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে পারেন। বর্তমানে, দেশের লাখ লাখ গ্রামীণ পরিবার এই ডিজিটালভাবে যুক্ত ব্যবসায়ীদের নেটওয়ার্ক থেকে উপকৃত হচ্ছেন।

ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদেরকে ডিজিটাল দক্ষতা, ঘরে ঘরে বিক্রয় এবং আর্থিক সচেতনতা নিয়ে নিবিড় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তারা শুধু ব্যবসা চালানোর সক্ষমতা অর্জন করবেন না, বরং আয়, সঞ্চয় এবং পুনঃবিনিয়োগ পরিচালনার মতো অর্থনৈতিক সক্ষমতাও গড়ে তুলবেন, অনেকের জন্য যা জীবনে প্রথমবারের মতো হবে।

শপআপের প্রেসিডেন্ট মামুন রশীদ বলেন, ‘পড়শি শুধু একটি প্রকল্প নয়, বরং এটি গ্রামীণ নারীদের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার ধরণটাই বদলে দেওয়ার একটি প্রচেষ্টা। এই উদ্যোগ যেভাবে নারীদের সক্ষমতা তুলে ধরছে এবং পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীতে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা গড়ে তুলছে, তা দেখে আমরা দারুণ আশাবাদী।’

একজন মাইক্রো রিটেইলার মাসে গড়ে প্রায় ১০,০০০ টাকা (প্রায় ৮২ ডলার) আয় করতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। শপআপের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের হার দিন দিন বাড়ছে। ইতোমধ্যে অনেক নারী উদ্যোক্তা জানিয়েছেন, তাদের পারিবারিক আয় বেড়েছে। কেউ কেউ এই বাড়তি আয়ে সন্তানের স্কুল ফি, চিকিৎসার খরচ কিংবা ঘরের খাবারের মান উন্নত করতে সক্ষম হচ্ছেন।

রংপুরের নারী উদ্যোক্তা শাহিনা বলেন, “পড়শি টিম যখন আমাকে বলল ‘তুমি পারবে’, আমি সেটা বিশ্বাস করি। মাত্র এক মাসেই আমি ৬,০০০ টাকা আয় করি। এখন আমার নিজের দোকান আছে, আর জীবনে প্রথমবারের মতো আমি আত্মবিশ্বাস নিয়ে সামনে এগোচ্ছি।”

এই প্রকল্পে নারীদের লাস্ট-মাইল ডেলিভারির (গ্রাহকের বাসা পর্যন্ত পণ্য পৌঁছানো) কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। এর ফলে স্থানীয় সরবরাহ ব্যবস্থাও আরও মজবুত হচ্ছে, আর নারীদের ব্যবসা আরও দ্রুত বাড়ছে ও ডিজিটাল হচ্ছে।

মাস্টারকার্ড স্ট্রাইভ হলো মাস্টারকার্ড সেন্টার ফর ইনক্লুসিভ গ্রোথ পরিচালিত একটি আন্তর্জাতিক সমাজসেবামূলক কর্মসূচি। এই উদ্যোগ বর্তমানে ৪৫টিরও বেশি দেশে চলছে এবং লক্ষ্য হচ্ছে ১.৮ কোটি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীকে ডিজিটাল প্রযুক্তি, মূলধনের সুবিধা, নেটওয়ার্ক ও দক্ষতা দিয়ে সহায়তা করা। বাংলাদেশে এই ‘স্ট্রাইভ’ প্রকল্পটি ক্যারিবুর মাধ্যমে বাস্তবায়ন করছে মাস্টারকার্ড।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

পার্ল হারবারের আদলে ভয়াবহ হামলায় বড় বিপদে রাশিয়া

জি-৭ এ আমন্ত্রণ না পেয়ে ঘরে-বাইরে বিপদে মোদি

ফরিদপুরে মাহিন্দ্রায় বাসের ধাক্কা, নিহত বেড়ে ৫

লুটপাটের জন্য বরাদ্দ ৪৬ হাজার কোটি টাকা আটকে দিল সরকার

ঢাকায় বৃষ্টি নিয়ে যে বার্তা দিল আবহাওয়া অফিস

এবার ছিনতাইয়ের কবলে মুক্তিযোদ্ধা দম্পতি

ফিরতি ঈদযাত্রায় আজ মিলবে ১৪ জুনের টিকিট 

ছাগলের মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে চোরের এ কেমন কাণ্ড

সিরিয়া-ইসরায়েল পাল্টাপাল্টি হামলা

ভুল করে পাঠানো মেইল ফেরত আনবেন যেভাবে 

১০

কুমিল্লায় বিদেশি পিস্তলসহ হাতেনাতে তিন যুবক গ্রেপ্তার

১১

আজ থেকে শুরু হজের আনুষ্ঠানিকতা

১২

সাতসকালে সড়কে ঝরল ৪ প্রাণ

১৩

দুপুরের মধ্যে ঢাকাসহ ১২ জেলায় ঝড়ের শঙ্কা 

১৪

স্কুলমাঠে হাট বসানো সেই বিএনপি নেত্রীকে সেনাবাহিনীর তলব

১৫

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সিলিন্ডারবাহী ট্রাকে আগুন, ভয়াবহ বিস্ফোরণ

১৬

০৪ জুন : কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

১৭

০৪ জুন : আজকের নামাজের সময়সূচি

১৮

দেশে শৃঙ্খলা ফেরাতে দ্রুত নির্বাচন দিন : উবায়দুল্লাহ ফারুক

১৯

গার্মেন্টসকর্মী থেকে প্রেসিডেন্ট

২০
X