কক্সবাজারে নারীর সামাজিক সুরক্ষা শক্তিশালীকরণবিষয়ক অ্যাডভোকেসি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৩ মে) দাতা সংস্থা OHK and OAU এর অর্থায়নে অক্সফ্যাম বাংলাদেশের কারিগরি সহায়তায় মুক্তি কক্সবাজার কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন “Crafting Future: Addressing Sustainable Livelihoods, Social Cohesion, and Gender Inequality through Integrated Community Led Action & Hope Illuminated Emergency Preparedness through Lighting” প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশে নারীর ভূমিকায় রূপান্তরমূলক পরিবর্তনের মাধ্যমে সামাজিক সুরক্ষা শক্তিশালীকরণ বিষয়ে এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
কর্মশালায় কক্সবাজারের স্থানীয় সরকার, জেলা প্রশাসন, জেলা পর্যায়ের সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ, এনজিও প্রতিনিধি, সাংবাদিক, সফল নারী উদ্যোক্তা এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।
উক্ত কর্মশালায় বিশেষ অতিথি ছিলেন, হেড অব ফিল্ড অফিস, অক্সফাম ইন বাংলাদেশ-কক্সবাজারের হেড অব ফিল্ড অফিস জোবায়দা আক্তার, কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী, কক্সবাজার উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির চেয়ারপার্সন জাহানারা ইসলাম, জাগো নারী উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক শিউলী শর্মা। এ ছাড়াও মুক্তি কক্সবাজারের পরিচালক মনিটিরিং অ্যান্ড ইভালুয়েশন খাইরুল ইসলাম, পরিচালক- মানবসম্পদ ও প্রশাসন সূজিত কুমার ভৌমিক, সেফগার্ডিং এবং পিএসইএ ফোকাল তনুশ্রী দাশ, অ্যাডভোকেসি অফিসার দিপা দেবনাথসহ অন্য কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
কর্মশালার সভাপতি মুক্তি, কক্সবাজারের প্রধান নির্বাহী বিমল চন্দ্র দে সরকার, উপস্থিত অতিথিবৃন্দ এবং অংশগ্রহণকারীদের ফুলেল শুভেচ্ছা এবং স্বাগত জানিয়ে বলেন, মুক্তি কক্সবাজার দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে নারীর ক্ষমতায়ন, নারীর অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তি ও সক্ষমতা বৃদ্ধিতে বৃত্তিমূলক ও কারিগরি প্রশিক্ষণ, নারী নেতৃত্বের বিকাশ এবং বিকল্প আয়ের সুযোগ তৈরিতে সহায়তা প্রদান করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় নারীদের গতানুগতিক সেলাই প্রশিক্ষণ, হ্যান্ডিক্রাফট প্রভৃতির পাশাপাশি মোটর ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ এবং নারীর উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন পূরণে সহায়তা প্রদান করে নারীকে উন্নয়নের মূলধারায় সম্পৃক্ত করতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চেম্বার সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী বলেন, নারীর ক্ষমতায়ন আমরা এখনো কাঙিক্ষত পর্যায়ে অর্জন করতে পারেনি। তিনি টেকসই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, অভীষ্ঠ লক্ষ্যমাত্রা ২০৪১ এর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নারীর অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তির জন্য নারীর সক্ষমতা বৃদ্ধি, মূলধন সরবরাহ এবং কার্যকর পরিকল্পনা প্রণয়নে সহযোগিতা প্রদান করাসহ স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের বাজার চাহিদা বিশ্লেষণ করে পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অক্সফাম ইন বাংলাদেশের কক্সবাজার অফিসের প্রধান জোবায়দা আক্তার বলেন, অক্সফাম নারীর ক্ষমতায়নে জীবিকায়ন, নেতৃত্ব, সামাজিক সুরক্ষা এবং পুরুষদের সম্পৃক্ত করে সমন্বিত এবং ঝুঁকি বিশ্লেষণ করে নিরাপদ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে। কক্সবাজারে নারীর অধিকতর কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং নারী নেতৃত্ব নিশ্চিত করতে স্থানীয় সরকার এবং প্রশাসনের সঙ্গে অক্সফাম ও মুক্তি কক্সবাজারের যৌথ নেটওয়ার্কিং ও অ্যাডভোকেসি সম্পর্কে আলোচনা করেন।
সফল নারী উদ্যোক্তাদের মধ্যে বুলবুল আক্তার এবং শাকিলা আক্তার বলেন, স্বামী হারিয়ে সন্তান ও পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে আমাদের আর্থিক অবস্থা ছিল খুবই নাজুক। এ সময় আমরা অক্সফাম এবং মুক্তি কক্সবাজার থেকে প্রশিক্ষণ, উপকরণ এবং আর্থিক সহায়তা পেয়ে আয়বর্ধনমূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত হই এবং বর্তমানে আমরা স্বাবলম্বী। আমরা এখন স্থানীয় বাজারে পণ্য বিক্রির পাশাপাশি কক্সবাজার এবং রপ্তানিকারকের সহায়তায় পাকিস্তানে টুপি সরবরাহ করছি। এ ছাড়াও আমরা স্থানীয় পর্যায়ে গ্রামীণ নারীদের সেলাই ও হ্যান্ডিক্রাফটের প্রশিক্ষণ প্রদান করে আসছি।
অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের কর্মকর্তা, উইমেন চেম্বার অব কমার্সের প্রতিনিধি, কক্সবাজার পৌরসভার কর্মকর্তা এবং সাংবাদিক নুপা আলম আলোচ্য বিষয়ের ওপর বক্তব্য রাখেন।
বিশেষ অতিথি শিউলী শর্মা এবং জাহানারা ইসলাম তাদের বক্তব্যে নারীর ক্ষমতায়নে নারীর নিজেকেই সামনে এগিয়ে আসা এবং নারীদের প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকতে নিজেদের দক্ষ ও যোগ্য করে গড়ে তুলে পণ্যের গুণগতমান নিশ্চিত করার দিক নির্দেশনা প্রদান করেন।
সমাপনী বক্তব্যে সংস্থার নির্বাহী প্রধান বলেন, মুক্তি কক্সবাজার এরইমধ্যে ২০০ উদ্যেক্তা তৈরি করেছে এবং সংস্থায় বর্তমানে ৭৩ শতাংশ নারী কর্মী কাজ করছে। তিনি নারীর ক্ষমতায়নে সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে নারীর টেকসই অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে সকল অংশগ্রহণকারীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান এবং সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে সভার কার্যক্রম সমাপ্ত করেন।
মন্তব্য করুন