দীর্ঘ ৩ বছর ধরে পাড়া ও বাজারে বিদ্যুতের খুঁটি, ক্যাবল, সঞ্চালন লাইন ও ট্রান্সফরমারসহ সবকিছু থাকলেও নেই শুধু আলো জ্বালানো ব্যবস্থা। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ এর বাস্তবায়ন হচ্ছে ধীরগতিতে। ২০২২ সাল থেকে অদ্যাবধি ঘরে কবে বিদ্যুতের আলো জ্বলবে তার জন্য অপেক্ষায় রয়েছেন এলাকাবাসী।
বান্দরবানে থানচি উপজেলার ২নং তিন্দু ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড পর্যটন এলাকা তিন্দু গ্রোপিংপাড়া ও বাজারের শতাধিক পরিবার ও ব্যবসায়ীদের আকুতি- কবে জ্বলবে আমাদের ঘরের বাতি, কবে আমরা পাব আলো।
শত বছরের পুরোনো তিন্দু গ্রোপিংপাড়া ও তিন্দু বাজারের ব্যবসায়ীদের জন্য ২০২১ সালে বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (বিপিডিবি) প্রকল্প বিভাগের অর্থায়নে বান্দরবানের থানচি উপজেলা সদর থেকে তিন্দু ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত প্রায় চার কোটি টাকা ব্যয়ে বৈদ্যুতিক খুঁটি ও সঞ্চালন লাইন ট্রান্সফরমারসহ স্থাপন করা হয়েছিল। একই সঙ্গে থানচি সদর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডে নাইন্দারীপাড়া ও বলিপাড়া ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডে বিদ্যামনিপাড়াতে ও স্থাপন করা হয়েছিল।
কিন্তু ওই সরকারি সংস্থা হতে দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার সংস্থা উল্লিখিত ২টি পাড়ায় প্রায় ২০০ পরিবারের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। তবে তিন্দু বাজার ও গ্রোপিংপাড়া, একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি উচ্চ বিদ্যালয়, একটি বিজিবি ক্যাম্পের বিদ্যুৎ সরবরাহের বিষয়ে ঠিকাদারি সংস্থা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বাস্তবায়ন কাজ সম্পাদন হয়েছে বলে এখনো চূড়ান্ত হস্তান্তর করেনি। এতে তিন্দু গ্রোপিংপাড়া, তিন্দু বাজার, তিন্দু গ্রোপিংপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তিন্দু গ্রোপিংপাড়া বেসরকারি উচ্চবিদ্যালয়, বিজিবি ক্যাম্পসমূহের খুঁটি, সঞ্চালন লাইন, ট্রাস্ফরমার থাকলেও ঘরে ঘরে মিটার ও সরবরাহ লাইন নেই। ফলে গত ৩ বছর ধরে তারা বিদ্যুৎ সংযোগ ও আলো জ্বালানো থেকে বঞ্চিত রয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তিন্দু গ্রোপিংপাড়া দোতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একই পাড়ায় একটু উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সঙ্গে বংড আলাংড়ং ছাত্রাবাসের প্রায় ৩০০ জন শিক্ষক কোমলমতি শিক্ষার্থীরা ও বিদ্যুৎ না পাওয়া গরমে ক্লাস করতে হচ্ছে।
তিন্দু বাজারে স্থানীয় ইউপি মেম্বার ক্রানিংঅং মারমা বলেন, বান্দরবানে বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী নেপচুন খিসা গত বছর আমাদের পাড়া পরিদর্শনে আসেন। এ সময় তিনি বলেছিলেন- শিগগিরই বাজার, পাড়া, ইউনিয়ন পরিষদ, বিজিবি ক্যাম্পের বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। কিন্তু তিন বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও জ্বলেনি বিদ্যুতের আলো।
তিন্দু গ্রোপিং পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক উচসিং মারমা বলেন, বিদ্যালয়ের প্রায় শতাধিক কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ক্লাসরুমে গরমে কষ্ট হচ্ছে। তাছাড়া শিক্ষকদের জুম মেটিং, ল্যাপটপ চালানো, ইন্টারনেট ব্যবহার অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
তিন্দু বাজারে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী অংশৈথুই মারমা ও মংসাইন মারমা বলেন- দুই বছর আগেই পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডে সোলার প্যানেল বিতরণের সময় বিদ্যুৎ দেবে বলে গ্রোপিংপাড়া, বাজার, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ইউনিয়ন পরিষদে সোলার প্যানেলের নামের তালিকা থেকে বাদ দিয়েছিল। আমাদের প্রায় আড়াইশ পরিবার দোকান ব্যবসায়ীরা অন্ধকারে বসবাস করছি।
যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (বিপিডিবি) বিতরণ বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী সবুজ ঘোষ বলেন, আমি নতুন আসছি। থানচি উপজেলায় যাওয়া হয়নি, তাই এ মুহূর্তে কিছু বলা সম্ভব নয়।
তবে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, প্রকল্প বিভাগ হতে বিতরণ বিভাগকে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ হস্তান্তর করা হয়নি এখনো। সুতরাং এখানে বিতরণ বিভাগের কোনো কাজ নেই। যেসব এলাকায় ট্রান্সফরমার রয়েছে, সেসব স্থানে আমরা মিটার বিতরণ ও বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ করে দিয়েছি। থানচি উপজেলা দুই ইউনিয়নের বর্তমানে এক হাজারেরও বেশি গ্রাহক আছে। মাসে প্রায় ২০ লাখ টাকা আয় হচ্ছে।
বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (বিপিডিবি) প্রকল্প বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ আমির হোসেনের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করলেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।
মন্তব্য করুন