কোটা সংস্কার আন্দোলন ও আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশে চলমান কারফিউ থাকায় পর্যটক শূন্য হয়ে পড়েছে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার টাংগুয়ার হাওর, নীলাদ্রী লেক, শিমুল বাগান, যাদুকাটা নদী ও বারেক টিলাসহ সব পর্যটনস্পট। এ এলাকায় পর্যটকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সময় হচ্ছে বর্ষা মৌসুম। বর্ষায় ছুটির দিনগুলোতে হাজার হাজার পর্যটকের পদচারণায় মুখরিত হয় পর্যটনস্পটগুলো।
তবে এ বছর বর্ষার শুরুতে পরপর কয়েক দফায় বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় নৌকা বুকিং করেও আসতে পারেননি দর্শনার্থীরা। চলমান কারফিউর আগে কিছু সংখ্যক পর্যটক এলেও কারফিউর কারণে আটকা পড়ে কয়েকটি পর্যটক টিম। পরে কারফিউ শিথিল হলে বিভিন্ন কৌশলে নিজ ঠিকানায় পৌঁছান তারা।
টাংগুয়ার হাওরসহ তাহিরপুরের পর্যটনস্পটগুলোকে কেন্দ্র করে পাঁচ শতাধিক নৌকা বা হাউজবোটের ব্যবস্থা রয়েছে। এসব হাউজবোটে প্রায় দুই হাজার মাঝি ও শ্রমিক কাজ করেন। এ বছর বর্ষার শুরু থেকে বন্যা ও চলমান পরিস্থিতিতে পর্যটক না আসায় বিপাকে পড়েছেন এই এলাকার পর্যটকবাহী নৌকা বা হাউজবোট মালিক ও শ্রমিকরা। বর্ষার ছয় মাসের মধ্যে এমন পরিস্থিতিতে তিন মাস পার হয়েছে। ফলে অতি কষ্টে পরিবার নিয়ে দিন পার করছেন তারা।
হাউজবোটের মাঝি জুয়েল ও হেলাল মিয়া জানান, এই বছর বর্ষার শুরু থেকেই পাহাড়ি ঢল আর অতিবৃষ্টির কারণে হাওর ও নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে আমাদের এলাকার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এতে পর্যটকরা আসার কথা থাকলেও রাস্তায় পানি থাকায় বুকিং বাতিল করেন। দফায় দফায় বন্যার পর এখন কারফিউর কারণে পর্যটকরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। বর্তমানে কোনো আয়-রুজি নেই। সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি।
তরঙ্গ বিলাশ হাউজবোটের মাঝি জানে আলম বলেন, গত সপ্তাহ থেকে আজ শুক্রবার পর্যন্ত ৫টি ভাড়া হয়েছিল কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতির কারণে সব ভাড়া বাতিল হয়েছে। এর আগে ফাঁকে ফাঁকে কয়েকটি পর্যটক টিম নিয়ে গেছি। তবে বন্যা ও আন্দোলনের কারণে এবার সবার আয়-রুজির অবস্থা খারাপ।
হাউজবোট মালিক ফয়সাল হাওড়ী বলেন, লাখ লাখ টাকা খরচ করে দুটি হাউজবোট তৈরি করেছি লাভের আশায়। তবে এবার বন্যা ও কারফিউর কারণে পর্যটকরা আসতে বারবার বাধাগ্রস্ত হয়েছেন। বর্ষায় ছয় মাস হাউজবোটে পর্যটন ব্যবসার মৌসুম। কিন্তু তিন মাস চলে গেছে বিভিন্ন দুর্যোগ ও দেশের আন্দোলনের কারণে। বাকি তিন মাস যদি পর্যটকরা আসেন তাহলে কিছু ব্যবসা হতে পারে।
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আলমগীর খোকন বলেন, বর্ষায় ছয় মাস এ এলাকা পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হয়। তবে এবার পরপর তিনবার বন্যা ও বর্তমান কারফিউ পরিস্থিতির কারণে পর্যটক না আসায় এই উপজেলার হাউজবোট মালিক, শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের মারাত্মক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। সামনে যদি কোনো রকম দুর্যোগ না হয় আর পর্যটকরা আসেন তাহলে একটু স্বস্তি আসবে তাদের।