কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে ছেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়ায় বাবাকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। গত ৯ আগস্ট রাতে দুর্বৃত্তদের হামলায় গুরুতর আহত হন আন্দোলকারী কলেজ শিক্ষার্থী তামিমের বাবা মইনুল ইসলাম (৪২)।
বুধবার (২১ আগস্ট) সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা গেছেন।
নিহতের ছোট ভাই মোজ্জামেল হক বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, এ ঘটনায় বাদী হয়ে আমি মামলা করেছি। তিনি দাবি করেন, তামিম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে জড়িত থাকায় বাবার ওপর হামলা করা হয়েছে। একই দাবি করেছেন নিহতের পরিবারের অন্য সদস্যরাও। জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা।
নিহত মইনুল ইসলাম কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার মরিচা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বালিরদিয়ার গ্রামের গাজী প্রামানিকের ছেলে। তিনি ইজিবাইক চালক ছিলেন। একই সঙ্গে গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবসাও করতেন। কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র তার ছেলে তামিম।
এ ঘটনায় গত ১৩ আগস্ট ১৫ জনের নাম উল্লেখ করে দৌলতপুর থানায় মামলা করা হয়। আরও ৫-৭ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
এজাহারে উল্লেখিত আসামিরা হলেন- আলম মোল্লা (৪৮), ইউসুফ মোল্লা (৩৮), রাজিব মোল্লা (৩০), শিপুল মোল্লা (৩০), সবুজ মোল্লা (২৫), বক্কর মোল্লা (৫৬), টিপু মোল্লা (৪০), চঞ্চল মোল্লা (৩২), জাদু মোল্লা (৪২), টুকন মোল্লা (৩৮), সোহেল মোল্লা (৪০), জানবার মোল্লা, শামীম মোল্লা (২৫), শাকিল মন্ডল (৩২) ও কলম মোল্লা (৪০)।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে মইনুল ইসলামের ছেলে তামিম অংশ নেওয়ায় কারণে আসামিরা হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করে। গত ৯ আগস্ট রাত ১০টার দিকে মইনুল ইসলাম মোটরসাইকেল চালিয়ে গ্রামের বাজার থেকে নিজ বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হন। পথিমধ্যে তার ওপর হামলা করে গুরুতর আহত করেন আসামিরা। ধারালো রামদা, ধারালো চাপাতি, লোহার রড, লাঠি, বাটামসহ আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে তার হামলা চালিয়ে ডান হাত কনুইয়ের নিচ থেকে কেটে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। এছাড়াও বাম হাতসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। তার চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে ককটেল বিস্ফোরণ এবং ফাঁকা গুলি করে আসামিরা পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং চিকিৎসাধীন ছিলেন। সর্বশেষ তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে।
এ বিষয়ে নিহতের ছেলে তামিম জানান, তিনি প্রথম থেকেই কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নিচ্ছিলেন। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালানোর পর তিনি কুষ্টিয়া শহর থেকে গ্রামের বাড়িতে যান। বাড়িতে গিয়েও দৌলতপুরে শান্তি মিছিলে অংশগ্রহণ করেন। এসব দেখে তাদের গ্রামের আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকর্মী তাদের বাড়িতে গিয়ে তার বাবা মইনুল ইসলাম ও পরিবারের সদস্যদেরকে হত্যার হুমকি দেন।
তিনি আরও জানান, ৯ আগস্ট রাতে আওয়ামী লীগের ওইসব নেতাকর্মী ও তাদের লোকজন তার বাবা মইনুল ইসলামের ওপর হামলা করে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। গুরুতর অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ওইদিনই উপজেলা হাসপাতাল, সেখান থেকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, পরবর্তীতে নিয়ে আসা হয় ঢাকায় পঙ্গু হাসপাতালে। অবস্থার অবনতি দেখে ১৫ আগস্ট তাকে ঢাকা মেডিকেলে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার সকালে মারা গেছেন মইনুল ইসলাম।
দৌলতপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহাবুবুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে একটি মামলা হয়েছে। এখনো পর্যন্ত কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। আসামিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তাদের গ্রেপ্তার করার জন্য পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
মন্তব্য করুন