বাবা মইরা গেছে। বাইতে আইসা কইছে যে ভালো লাগতেছে না, পানি দাও। এখন আমার বাবা নাইকা। আমরা কীভাবে চলমু? -এভাবেই তিন বছরের ছোট্ট মরিয়ম কথাগুলো বলছিল কালবেলা প্রতিনিধির কাছে।
গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ ঘোষণার পর সারা দেশে বিজয় মিছিল হয়। তারই ধারাবাহিকতায় সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলাতেও ওই দিন বিকেলে ছাত্র-জনতার বিজয় মিছিল হয়। এই বিজয় মিছিল শেষে বাড়িতে ফিরে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়েন ভ্যানচালক শিহাব উদ্দিন প্রামাণিক (৩০)।
নিহত শিহাব উদ্দিন উপজেলার জামতৈল গ্রামের সেলিম প্রামাণিকের ছেলে। পরিবারটিতে মা, অসুস্থ বাবা ছাড়াও স্ত্রী ময়না খাতুন এবং দুই মেয়ে মোরসালিনা (৭) ও মরিয়ম (৩) রয়েছেন।
শুক্রবার (২৩ আগস্ট) শিহাবের পরিবারের খোঁজ-খবর নিতে গেলে তার স্ত্রী ময়না খাতুন জানান, আমার স্বামী বিজয় মিছিল শেষে বাড়িতে এসে বলে আমার ভালো লাগছে না- এই বলে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। আমরা তাকে চিকিৎসা করার মতো সময় পাইনি। আমি এখন এই দুটি মেয়ে নিয়ে কীভাবে চলব। এদের পড়াশোনা, খাওয়া-দাওয়া কীভাবে করাব।
নিহত শিহাব উদ্দিনের মা ছামেনা খাতুন বলেন, কথা কতি কতি আমার বাবাটা মরে গেল। সংসারের অবস্থা ভালো না। বেটা চলে গেল। আমরা এখন কীভাবে চলমু। কেবা কইরা তার মেয়েদের পালমু, কেবা কইরা তার বউকে দেইখা রাখমু। আমরা এটা আর সহ্য করতে পারতেছি না। খুব অবস্থা খারাপের মধ্যে পড়ে গেছি। আমাদের খুবই সমস্যা। আমরা এখন না খেয়ে থাকছি। আমরা এখন ভাতই পাইতেছি না। আমাদের তো কেউই দেখার জন্য আসে নাই। কেউ কোনো খোঁজ-খবর নেয় নাই।
নিহতের প্রতিবেশী রুমা খাতুন বলেন, শিহাব খাইতো ভ্যান চালাইয়া। এই পরিবারের বড় ছেলেটাই মারা গেল। এই বাচ্চা দুইটা নিয়া চলার সামর্থ্য ওর মার নাই। মেয়ে দুইটা নিয়ে যেন বউটা ভালোভাবে চলতে পারে, বাঁচতে পারে আপনারা যদি এ রকম কিছু কইরা দেন তাহলে ভালো হয়।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহীন সুলতানা বলেন, বিষয়টি আপনার মাধ্যমে আমি জানতে পারলাম। আমি এ ব্যাপারে বিত্তবানদের পরিবারটির পাশে এসে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছি। পাশাপাশি আমাদের উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যতটুকু সহযোগিতা করা যায় করব। আপনি একটু ওনার ঠিকানাটা আমাকে দেন- আমি খোঁজ-খবর নিয়ে দেখছি কী করা যায়। তার স্ত্রীর জন্য একটা বিধবা ভাতার ব্যবস্থা করে দেওয়ার চেষ্টা করব।
মন্তব্য করুন