বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে গুলিতে ঝাঁজরা হন মো. কারিমুল ইসলাম (২১)। তার শরীর থেকে ২৮টি বের করা হলেও এখনো ৬টি গুলি বয়ে বেড়াচ্ছেন। ডান চোখের নিচে, মাথা ও গলায় গুলির যন্ত্রণায় কাতর কারিমুল। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছে না তার পরিবার। কারিমুলের বাড়ি নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের কুবুরীয়াকান্দা গ্রামে।
তার বাবা কৃষক মো. মঞ্জু মিয়া। গত ৩ আগস্ট ঢাকার রামপুরা এলাকায় আন্দোলনের সময় ছররা গুলিতে গুরুতর আহত হন তিনি। পরে কয়েকজন তাকে রামপুরা বেটার লাইফ হসপিটালে নিয়ে যান। সেখানে তার শরীর পরীক্ষা করে ৩৪টি গুলি দেখতে পান চিকিৎসকরা।
এ সময় সেখানে ১৭টি গুলি বের করেন চিকিৎসক। পরে কিছুটা সুস্থ হলে কলমাকান্দা নিজ গ্রামে চলে আসেন। পরে কলমাকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও নেত্রকোনা মিশন হাসপাতাল মিলিয়ে আরও ১১টি গুলি বের করেন। এখনো তার শরীরে ৬টি গুলি রয়েছে।
গুলিবিদ্ধ কারিমুল ইসলামের বাড়িতে গিয়ে জানা গেছে, গত রোববার সকালে নেত্রকোনা মিশন হাসপাতালে আরও তিনটি গুলি বের করে দুপুর ২টায় বাড়ি ফিরেছেন। ছোটবেলা থেকে হাফেজ হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে ঢাকার রামপুরা এলাকার একটি কওমি মাদ্রাসায় ভর্তি হয় কারিমুল। এখন তিনি ওই মাদ্রাসার মিজান বিভাগের ছাত্র। কিন্তু বর্তমানে গুলিবিদ্ধ হয়ে কষ্টে দিন কাটছে তার।
চিকিৎসার অভাবে আরও ৬টি গুলি বহন করছেন তিনি। ছেলের অবস্থা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন বাবা মঞ্জু মিয়া। তিনি বলেন, ঘটনার দিন ছেলে কারিমুলের গুলি লাগে। হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে ২৮টি গুলি বের করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সঞ্চয় করা সব টাকা দিয়ে ছেলের চিকিৎসা করেছি। চিকিৎসা করে সব টাকা শেষ। এখন তো সংসার চালানোই কঠিন, ছেলের চিকিৎসা করব কীভাবে? কারিমুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, আন্দোলনে নামার কিছুক্ষণ পর ওইদিন বিকেল ৩টার দিকে পুলিশ গুলি করতে শুরু করে। তখন আমার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় গুলি লাগে। মুহূর্তের মধ্যে অজ্ঞান হয়ে যায়।
জ্ঞান ফিরলে নিজেকে হাসপাতালে দেখতে পাই। এখনো মাথা, গলা ও ডান চোখের নিচে গুলি আছে। কিন্তু টাকার অভাবে গুলি বের করতে পারছি না। আমার পরিবারের লোকজন এ নিয়ে চিন্তায় আছেন।
মন্তব্য করুন