রাজশাহী ব্যুরো
প্রকাশ : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:৪১ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

বাবার লাশ নেওয়ার অপেক্ষায় মর্গের সামনে ৫ দিনের শিশু

৫ দিনের শিশুকন্যাকে নিয়ে হাসপাতালের মর্গের সামনে আব্দুল্লাহ আল মাসুদের স্ত্রী। ছবি : কালবেলা
৫ দিনের শিশুকন্যাকে নিয়ে হাসপাতালের মর্গের সামনে আব্দুল্লাহ আল মাসুদের স্ত্রী। ছবি : কালবেলা

পাঁচ দিনের শিশু ছোট্ট মাসুমা। সে জানে না বাবা আব্দুল্লাহ আল মাসুদ নৃশংসভাবে খুন হয়েছেন। রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৪টা। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল মর্গে মাসুদের লাশ নিতে আসেন স্বজনরা। এ সময় স্বজনদের আহাজারিতে হাসপাতালের মর্গ এলাকার বাতাস যেন একেবারে ভারি হয়ে ওঠে। মাসুদের লাশ নিতে মা বিউটি খাতুনের কোলে চড়ে হাসপাতাল মর্গে এসেছিল তার ৫ দিনের শিশুকন্যা মাসুমা। বাবার লাশ কাটা ঘরের সামনে ছোট্ট এই শিশুকে দেখে উপস্থিত কেউই যেন চোখের পানি ধরে রাখতে পারছিলেন না।

জানা যায়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ছাত্রলীগের সাবেক সহসম্পাদক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য আব্দুল্লাহ আল মাসুদ। ২০১৪ সালের ২৯ এপ্রিল দুর্বৃত্তদের নৃশংস হামলায় হারিয়েছেন নিজের ডান পা। ক্ষত-বিক্ষত হয়েছিল হাত, মাথাসহ পুরো শরীর। মৃত্যুঞ্জয়ী ছাত্রলীগের সাবেক এই নেতাকে আবার হামলার শিকার হয়েই প্রাণ দিতে হলো। শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) রাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বিনোদপুর বাজারে গণপিটুনিতে গুরুতর আহত হন তিনি। পরে নগরীর দুই থানা ঘুরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার রাত ১টার দিকে মাসুদ মারা যান।

রোববার বিকেল ৫টায় নিথর মাসুদকে বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সটি রাজশাহী থেকে তার গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার বিনোদপুরের পথে রওয়ানা দেয়। সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স গ্রামের বাড়িতে পৌঁছায়।

খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, ৫ দিন বয়সী ছোট্ট শিশু কন্যার জন্য দুধ আর প্রসূতি স্ত্রীর জন্য ওষুধ কিনতে শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বিনোদপুর বাজারে যায় মাসুদ। এ সময় গত ৫ আগস্ট রাজশাহীতে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার অভিযোগে একদল লোক লাঠিসোঁটা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তার ওপর হামলা চালায়। এ সময় সে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে তাকে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করা হয়। পরে তাকে গণপিটুনি দিয়ে প্রথমে মতিহার থানায় এবং পরবর্তীতে বোয়ালিয়া থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় সেনাবাহিনীর সহায়তায় তাকে রামেক হাসপাতালের ৩১ নং ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১টার দিকে তিনি মারা যান।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মাহমুদুল হাসান ফিরোজ বলেন, রাতে মাসুদকে হাসপাতলের জরুরি বিভাগে আনা হয়। তার শরীরের কয়েক জায়গাতে জখম ছিল। তার শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। হাসপাতালে ভর্তি করার পর রাতে মারা যান।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহাম্মদ জানান, আইনি প্রক্রিয়া শেষে নিহত মাসুদের মরদেহ বিকেলে তার পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে। এরপর পরিবার লাশ নিয়ে তার গ্রামের বাড়িতে চলে যায়।

ওসি মাসুদ পারভেজ বলেন, আব্দুল্লাহ আল মাসুদকে বিনোদপুরে মারধর করা হয়েছিল। এরপর একদল শিক্ষার্থী তাকে প্রথমে মতিহার, পরে বোয়ালিয়া থানায় নিয়ে যান। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে তার মৃত্যু হয়।

উল্লেখ্য, গত ৩ সেপ্টেম্বর মাসুদ কন্যা সন্তানের বাবা হন। এই খুশির খবরটি তিনি শনিবার সকালে নিজের ফেসবুক পেইজে জানিয়ে লেখেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ। সকল প্রশংসা মহান আল্লাহ তাআলার। গত ৩/৯/২০২৪ তারিখে কন্যা সন্তানের পিতা হয়েছি। মহান আল্লাহ তাআলার কাছে নেক হায়াত ও সুস্থতা কামনা করি। সকল আত্মীয়স্বজন, শুভাকাঙ্ক্ষী ও বন্ধু-বান্ধব এর কাছে আমার ও আমার মেয়ের জন্য দোয়া প্রার্থনা করছি।’

২০২১ সালের ৫ মে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ভিসি আব্দুস সোবহান ১৩৮ জনকে এডহকে নিয়োগ দিয়েছিলেন। ওই সময়ও মাসুদ নিয়োগপ্রাপ্ত হন। কিন্তু এ তালিকার কেউ শেষ পর্যন্ত যোগদান করতে না পারায় মাসুদ নিজের দুর্দশার কথা জানিয়ে একটি চাকরি চেয়ে ২০২২ সালের শেষের দিকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চিঠি লেখেন। এরপর ওই বছরের ৬ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক-৭ মীর তাফেয়া সিদ্দিকা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে পাঠানো চিঠিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সেকশন অফিসার পদে আব্দুল্লাহ আল মাসুদকে নিয়োগ দিতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করেন। সেই অনুযায়ী মাসুদকে উক্ত পদে এডহকভিত্তিকে চাকরি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। চাকরি করার সুবাদে তিনি পরিবার নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশ্ববর্তী বুধপাড়া এলাকায় থাকতেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

অজু করার সময় মারাত্মক এই ৭ ভুল হচ্ছে না তো? জেনে নিন এখনই

সংবিধানে রাষ্ট্রপতির আদেশ জারির কোনো বিধান নেই : সালাহউদ্দিন আহমদ

ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে কঠোর অবস্থানে সিরিয়া

আ.লী‌গের দুই নেতা আটক

নির্বাচনী প্রচারণায় যে দুই জিনিস ব্যবহার নিষিদ্ধ

‘সুযোগ’ পেলে জোটবদ্ধ নির্বাচন করতে আগ্রহী জাতীয় পার্টি

প্রথম সমাবর্তন না হলেও দ্বিতীয় সমাবর্তনের ফি দিতে বাধ্য করছে বুটেক্স

সড়কের পাশে জ্বালানি তেল বিক্রি সাময়িক বন্ধ থাকবে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা 

প্রশাসনের ৬ কর্মকর্তা পেলেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা

বিপিএলে দেখা যেতে পারে ওয়েলালাগে-উসমান খানকে

১০

প্রতিপক্ষের গুলিতে আহত ইমরানও মারা গেছে

১১

ভারতের তাজ চলচ্চিত্র উৎসবে ‘ঊনাদিত্য’

১২

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মিলল ছাত্রদল নেতার লাশ

১৩

‘বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ কেমন হবে সেই সিদ্ধান্ত জনগণের’

১৪

নতুন সংকটে ইরান, ভয়াবহ বিপর্যয়ের আশঙ্কা

১৫

আ.লীগের ৫ নেতা গ্রেপ্তার

১৬

মাইলফলক স্পর্শ করতে লিটনের দরকার ৭১ রান

১৭

আর্মি সার্ভিস কোরের সদস্যদের প্রস্তুত থাকার আহ্বান সেনাপ্রধানের

১৮

‘জুলাই সনদের বাইরে যে কোনো সিদ্ধান্তের দায় সরকারের’

১৯

কেউ কবরের পাশে দাঁড়ালে মৃত ব্যক্তি কি টের পান?

২০
X