সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:৩৪ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

‘নয় বিঘা জমি গ্যাছে, এহন বাড়িটাও গিলতে শুরু করেছে’

যমুনার ভাঙনে সব বিলীন হচ্ছে একের পর এক বসতভিটা। ছবি : কালবেলা
যমুনার ভাঙনে সব বিলীন হচ্ছে একের পর এক বসতভিটা। ছবি : কালবেলা

‘নয় বিঘা জমি আছিল, কয়েক বছর ধইর‌্যা যমুনার ভাঙনে সব বিলীন অইয়্যা গ্যাছে। এহন বাড়িডাও গিলতে শুরু করেছে রাক্ষসী যমুনা। কয়েকদিন ধইর‌্যা ভাঙনে বাড়ির সিকি অংশ বিলীন অইয়া গ্যাছে।’

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার কৈজুরী ইউনিয়নের হাঁট পাচিল গ্রামের ৬৫ বছর বয়সী কৃষক ময়নাল সরদার এভাবেই নিজের নিঃস্ব হওয়ার গল্প বলছিলেন।

তিনি বলেন, ‘পালের গরুবাছুর বেইচা খাইয়্যা শ্যাষ করছি, এহন আমি নিঃস্ব, ভাত পাওয়াই কঠিন। বাড়িটা চইলে গেইলে মাইনসের দ্বারে যাইয়া থাকা লাইগবো।’

শুধু ময়নাল সরদার নয়, ভাঙনের মুখে রয়েছে ওই এলাকার আরও শতাধিক বসতবাড়ি। এদের মধ্যে অনেকেই বসতঘরসহ জিনিসপত্র সরিয়ে নিরাপদ দূরত্বে নিয়ে গেছেন।

মাসখানেক আগে কোবাদ মাস্টার নামে মধ্যবিত্ত কৃষকের দোতলা ভবন তার চোখের সামনেই নদীতে বিলীন হয়েছে। নদীগর্ভে চলে গেছে তার বিশাল গরুর খামারটিও।

ফজিলা খাতুন নামে এক বিধবা বলেন, আগে হাঁট পাচিল গ্রামে তার বাড়ি ছিল। চার বছর আগে সেটা ভেঙে যায়। এরপর বাঁধের ওপর আশ্রয় নেয়। পরে স্বামীর চড়ায় জমি ছিল নিজস্ব জমিতে মাটি ফেলে বাড়ি করে। সেই বাড়িটিও নদীগর্ভে যাওয়ার পথে।

জানা যায়, বর্ষা মৌসুম শেষ হয়েছে অনেক আগেই। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে কমছে যমুনার পানি। পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে নদীটির পশ্চিম তীরে ভাঙন চলছে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে কখনো মৃদু কখনো বা তীব্র ভাঙনে একের পর এক বিলীন হচ্ছে বসতবাড়ি ও ফসলি জমি। ভাঙন হুমকিতে রয়েছে কবরস্থান, মসজিদসহ বিভিন্ন স্থাপনা।

হাট পাঁচিলের পাশাপাশি একই উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নের সৈয়দপুর, পাকড়তলাতেও একইভাবে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। গত একমাসে ধারাবাহিক ভাঙনে ৭শর বেশি বসতবাড়ি, কয়েকশ বিঘা কৃষিজমি, রাস্তাঘাট ও ব্যক্তিগত স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বিপুল আবাদি জমি নদীগর্ভে চলে যাওয়ায় শত শত পরিবার এখন ভূমিহীন।

এদিকে ২০২২ সালে শুরু হওয়া পাউবোর নদী তীর সংরক্ষণ বাঁধ নির্মাণকাজে গাফিলতির কারণে এ অঞ্চলটি ভাঙনের হাত থেকে মুক্তি পাচ্ছে না বলে দাবি ভুক্তভোগীদের।

নদী তীরবর্তী বাসিন্দাদের দাবি, আমরা কোনো সাহায্য চাই না। তাড়াতাড়ি আমাদের বাঁধ নির্মাণ করে আমাদের বাড়িঘরগুলো ভাঙন থেকে রক্ষা করা হোক।

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোখলেসুর রহমান বলেন, ওই এলাকায় নদী তীর সংরক্ষণ বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। যমুনায় পানির স্রোত বেশি থাকায় কাজ বন্ধ আছে। এক মাসের মধ্যে কাজ শুরু হবে। ভাঙনরোধে আমরা আপাতত সেখানে কিছু জিওব্যাগ ডাম্পিং করেছি। এখন ভাঙনের তীব্রতা কিছুটা কমে এসেছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

‘কেউ তো জানে’ আসছে এনটিভির পর্দায়

মসজিদুল হারামে এ সপ্তাহে জুমা পড়াবেন শায়খ সুদাইস

৬ বছরেও শেষ হয়নি কাজ, আশ্রয়কেন্দ্র এখন মাদকসেবীদের আখড়া

জার্সিতে নাম পাল্টালেন হলান্ড

ডিবি কার্যালয়ে লতিফ সিদ্দিকী

ছাত্র সংসদ নির্বাচনে সেনাবাহিনীর সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ নেই : আইএসপিআর

আগামী সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা ইসির 

২০ মাসের ব্যবধানে পানিতে দুই ভাইয়ের মৃত্যু, বাকরুদ্ধ পরিবার

হঠাৎ মিষ্টি খেতে মন চায়, এটা কীসের ইঙ্গিত?

ভারতের হয়ে খেলার আশা ছেড়ে দিয়েছেন শামি

১০

যথাযথ প্রক্রিয়ায় পুশইন করা হচ্ছে, দাবি বিএসএফ ডিজির 

১১

সিজারের ৬ মাস পর পেট থেকে বের করা হলো গজ

১২

৫ দিন কোথায় কেমন বৃষ্টি থাকবে, জানাল আবহাওয়া অফিস

১৩

জাকসু নির্বাচনের প্যানেল ঘোষণা করল ছাত্রদল

১৪

পাকিস্তানের পাঞ্জাবে ভয়াবহ বন্যায় মৃত্যু ১৫

১৫

১৭ কোটি টাকার জীবনরক্ষাকারী ওষুধ এনে প্রশংসায় ভাসছেন ইন্টার্ন চিকিৎসক 

১৬

গয়েশ্বরের বিরুদ্ধে দুদকের মামলার রায় ৪ সেপ্টেম্বর

১৭

আজ আনুষ্ঠানিক ঘোষণা  / ইসির রোডম্যাপে যত পরিকল্পনা   

১৮

প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ

১৯

‘ভারতে পরমাণু হামলা চালাও, ট্রাম্পকে হত্যা করো’ লেখা বন্দুক দিয়ে হামলা

২০
X