শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:৩৪ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

‘নয় বিঘা জমি গ্যাছে, এহন বাড়িটাও গিলতে শুরু করেছে’

যমুনার ভাঙনে সব বিলীন হচ্ছে একের পর এক বসতভিটা। ছবি : কালবেলা
যমুনার ভাঙনে সব বিলীন হচ্ছে একের পর এক বসতভিটা। ছবি : কালবেলা

‘নয় বিঘা জমি আছিল, কয়েক বছর ধইর‌্যা যমুনার ভাঙনে সব বিলীন অইয়্যা গ্যাছে। এহন বাড়িডাও গিলতে শুরু করেছে রাক্ষসী যমুনা। কয়েকদিন ধইর‌্যা ভাঙনে বাড়ির সিকি অংশ বিলীন অইয়া গ্যাছে।’

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার কৈজুরী ইউনিয়নের হাঁট পাচিল গ্রামের ৬৫ বছর বয়সী কৃষক ময়নাল সরদার এভাবেই নিজের নিঃস্ব হওয়ার গল্প বলছিলেন।

তিনি বলেন, ‘পালের গরুবাছুর বেইচা খাইয়্যা শ্যাষ করছি, এহন আমি নিঃস্ব, ভাত পাওয়াই কঠিন। বাড়িটা চইলে গেইলে মাইনসের দ্বারে যাইয়া থাকা লাইগবো।’

শুধু ময়নাল সরদার নয়, ভাঙনের মুখে রয়েছে ওই এলাকার আরও শতাধিক বসতবাড়ি। এদের মধ্যে অনেকেই বসতঘরসহ জিনিসপত্র সরিয়ে নিরাপদ দূরত্বে নিয়ে গেছেন।

মাসখানেক আগে কোবাদ মাস্টার নামে মধ্যবিত্ত কৃষকের দোতলা ভবন তার চোখের সামনেই নদীতে বিলীন হয়েছে। নদীগর্ভে চলে গেছে তার বিশাল গরুর খামারটিও।

ফজিলা খাতুন নামে এক বিধবা বলেন, আগে হাঁট পাচিল গ্রামে তার বাড়ি ছিল। চার বছর আগে সেটা ভেঙে যায়। এরপর বাঁধের ওপর আশ্রয় নেয়। পরে স্বামীর চড়ায় জমি ছিল নিজস্ব জমিতে মাটি ফেলে বাড়ি করে। সেই বাড়িটিও নদীগর্ভে যাওয়ার পথে।

জানা যায়, বর্ষা মৌসুম শেষ হয়েছে অনেক আগেই। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে কমছে যমুনার পানি। পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে নদীটির পশ্চিম তীরে ভাঙন চলছে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে কখনো মৃদু কখনো বা তীব্র ভাঙনে একের পর এক বিলীন হচ্ছে বসতবাড়ি ও ফসলি জমি। ভাঙন হুমকিতে রয়েছে কবরস্থান, মসজিদসহ বিভিন্ন স্থাপনা।

হাট পাঁচিলের পাশাপাশি একই উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নের সৈয়দপুর, পাকড়তলাতেও একইভাবে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। গত একমাসে ধারাবাহিক ভাঙনে ৭শর বেশি বসতবাড়ি, কয়েকশ বিঘা কৃষিজমি, রাস্তাঘাট ও ব্যক্তিগত স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বিপুল আবাদি জমি নদীগর্ভে চলে যাওয়ায় শত শত পরিবার এখন ভূমিহীন।

এদিকে ২০২২ সালে শুরু হওয়া পাউবোর নদী তীর সংরক্ষণ বাঁধ নির্মাণকাজে গাফিলতির কারণে এ অঞ্চলটি ভাঙনের হাত থেকে মুক্তি পাচ্ছে না বলে দাবি ভুক্তভোগীদের।

নদী তীরবর্তী বাসিন্দাদের দাবি, আমরা কোনো সাহায্য চাই না। তাড়াতাড়ি আমাদের বাঁধ নির্মাণ করে আমাদের বাড়িঘরগুলো ভাঙন থেকে রক্ষা করা হোক।

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোখলেসুর রহমান বলেন, ওই এলাকায় নদী তীর সংরক্ষণ বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। যমুনায় পানির স্রোত বেশি থাকায় কাজ বন্ধ আছে। এক মাসের মধ্যে কাজ শুরু হবে। ভাঙনরোধে আমরা আপাতত সেখানে কিছু জিওব্যাগ ডাম্পিং করেছি। এখন ভাঙনের তীব্রতা কিছুটা কমে এসেছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ৪২ জনকে স্ট্যান্ড রিলিজ

 ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ‘তুই’ বলায় তুমুল সংঘর্ষ, শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা বর্জন

আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের বিকল্প নেই : গণতন্ত্র মঞ্চ 

চার দেশে বন্যায় ১৫০০ মৃত্যুর পর নতুন আতঙ্ক

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ স্থগিত

শাহজালালে ‘এয়ারপোর্ট মিনি ফায়ার এক্সারসাইজ-২০২৫’ সম্পন্ন

বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম

ইউএনও হলেন লাক্স সুন্দরী সোহানিয়া

তারেক রহমানের ৩১ দফায় বদলে যাবে শরীয়তপুর : নুরুদ্দিন আহাম্মেদ অপু

এরশাদ-হাসিনা কারও সঙ্গেই আপস করেননি খালেদা জিয়া : মিল্লাত

১০

মান্নাকে ইসলামী ব্যাংকের চূড়ান্ত নোটিশ, আইনি ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি

১১

সব দল ইসলামের পতাকাতলে সমবেত হবে ইনশাআল্লাহ : অধ্যাপক মুজিবুর

১২

মনোনয়নের খবর শুনে উচ্ছ্বাস, কিছুক্ষণ পর বিএনপি নেতার মৃত্যু

১৩

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে হত্যা / সাবেক বিচারপতি-হুইপসহ ১৫৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট

১৪

ইসলামের বিষয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে : ধর্ম উপদেষ্টা

১৫

ববি উপাচার্য দপ্তরে ‘মুলা’ ঝুলিয়ে প্রতীকী প্রতিবাদ

১৬

ধেয়ে আসছে তীব্র শীত, দফায় দফায় শৈত্যপ্রবাহ

১৭

‘বাকসু’ নিজেদের রাখতে বিএম কলেজ শিক্ষার্থীদের হুঁশিয়ারি

১৮

নিবন্ধন পেতে যাচ্ছে ২ রাজনৈতিক দল

১৯

বেওয়ারিশ কুকুরের প্রতি সামিনের ‘অদ্ভুত’ ভালোবাসা

২০
X