রবিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৫, ২০ আশ্বিন ১৪৩২
মো. নুরুল হক নয়ন, রায়গঞ্জ (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৯ আগস্ট ২০২৩, ০২:৫১ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

মহাভারতে উল্লেখিত রাজার মহল-মন্দিরের সন্ধান মিলল বাংলাদেশে

সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার ক্ষিরিতলা। ছবি : কালবেলা
সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার ক্ষিরিতলা। ছবি : কালবেলা

সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার ক্ষিরিতলায় হাজার বছরের প্রাচীন নগরীর সন্ধান পেয়েছে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। সেখানে মহাভারতে উল্লেখিত বিরাট রাজার মহল ও মন্দিরের ধ্বংসাবশেষের সন্ধান পাওয়া গেছে।

গবেষণা শেষে তাদের ধারণা, ৮০০ থেকে ১০০০ খ্রীষ্টাব্দের একটি সমৃদ্ধ নগরী ছিল এটি। আড়াই হাজার পূর্বে মহাভারতে বর্ণিত বিরাট রাজার প্রাসাদ ছিল এই অঞ্চলেই। সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার ধামাইনগর ইউনিয়নের খিরিতলা ও এর আশপাশের গ্রামগুলোতে অন্তত অর্ধ শতাধিক উঁচু ঢিবির সন্ধান পাওয়া যায়। যেগুলো বহু প্রাচীণ আমলের ইট দিয়ে তৈরি এক একটি মন্দির ছিল।

আরও পড়ুন : পেরুতে ৩ হাজার বছরের পুরোনো করিডরের সন্ধান

রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যায়ন বিভাগের শিক্ষক মো. রিফাত-উর-রহমানের তত্ববধানে ৩৮ জন শিক্ষার্থী এই খিরিতলা গ্রামের পরিত্যক্ত উঁচু ঢিবি ও এর আশপাশের ধ্বংস্তুপ নিয়ে প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপে অংশগ্রহণ করেন।

গবেষণা শেষে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যায়ন বিভাগের বর্তমান চেয়ারম্যান রিফাত উর রহমান বলেন, খিরিতলা গ্রামে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা ঢিবিটাকে স্থানীয়রা রাজার বাড়ি বলে অভিহিত করেন। ঢিবিতে প্রাচীন কালের ইট নির্মিত স্থাপনার ভগ্নাংশ দৃশ্যমান। ঢিবিসংলগ্ন কৃষি জমিতে হাঁটলে প্রচুর পরিমাণে মৃৎপাত্রের ভগ্নাংশ চোখে পড়ে। ঢিবিতে পাওয়া পোড়ামাটির চিত্রফলক দেখে ধারণা করা যায় এগুলি গুপ্ত পরবর্তী যুগের। এখানে গুপ্ত আমলের একটি মুদ্রাও পাওয়া যায়। এ থেকে অনুমিত হয় এ স্থানটি গুপ্ত কিংবা পাল আমলের একটি সমৃদ্ধ জনপদ। এখানে অবস্থিত প্রায় ৫০টি ঢিবির মধ্যে লুক্কায়িত আছে মন্দির এবং স্তপাদির ধ্বংসাবশেষ। পাল আমল পর্যন্ত গৌরবের সঙ্গেই হয়তো এই জনপদ টিকে ছিল।

তিনি আরও বলেন, ১৯৯০ সালে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ জেলা গেজেটীয়ার পাবনা’ সূত্র মতে নিমগাছি অতি প্রাচীন স্থান। এটিকে মহাভারতে বর্ণিত বিরাট রাজার শহর বলে অভিহিত করা হয়। প্রাচীন করতোয়া নদীর পশ্চিম তীরে প্রায় ৮ বর্গমাইল আয়তনের একটি নগরীর ধ্বংসাবশেষ রয়েছে এখানে।

দেশবরেণ্য প্রত্নতাত্ত্বিক আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়া ১৯৮৪ সালে তার বাঙলাদেশের প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ বইয়ে উল্লেখ করেছেন, মহাভারতে বর্ণিত মাৎস্য দেশের রাজা বিরাটের রাজপ্রাসাদ ছিল এ অঞ্চলে। নৃত্যশীলা, কীচক স্থান, বুরুজ ইত্যাদি নামে অন্যান্য ঢিবিগুলি পরিচিত। পাণ্ডবেরা অজ্ঞাতবাসে থাকাকালীন এখানে আশ্রয় গ্রহণ করেছিলেন। প্রমাণস্বরূপ একটি প্রাচীন বৃক্ষকে মহাভারতে বর্ণিত শমীবৃক্ষ ও একটি স্থানকে বিরাট রাজার গো-গৃহ বলে চিহ্নিত করা হয়।

রিফাত-উর-রহমান বলেন, এই ঢিবিসহ আশেপাশের গ্রামগুলোতে প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণার এখনো সুযোগ রয়েছে।

সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গন্জ উপজেলার অন্তর্গত ১ নম্বর ধামাইনগর ইউনিয়নের ক্ষিরিতলা গ্রামে অবস্হিত আন্চলীক নাম-বুরুজ/ডিপি। ঐতিহাসিক সমরিধ্যো বাণিজ্য নগরী (মহাভারত ও সোনা গাজীর ইতিহাস) হিসাবে ইতিহাস থেকে পাওয়া যায়। এ স্থান বিভিন্ন লোকোজ কাহিনী, গল্প, এলাকার প্রবীণ মুরব্বিদের মুখে মুখে শোনা যায়। এখনও বহু সাধকরা প্রতি বছর সাধনা করার জন্য এসে থাকেন। এটি সংস্কার করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন রায়গঞ্জ -তাড়াশের নির্বচিত প্রায়ত সাবেক এমপি ইসহাক হোসেন। ১৯৮৬ সালে ধামাইনগর ইউনিয়ন পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি। খাদ্যের বিনিময়ের কর্মসূচি ৫ সের (কেজি) করে গমের বিনিময়ে খননের কাজ শুরু করেন। কিছুদিন কাজ চলার পরে (লেবাররা খননের কাজ দু, একদিন করলেই বিভিন্ন অসুখ হত) পরে লেবার সংকটে তা বন্ধ হয়ে য়ায়।

লোক মুখে, ইতিহাস থেকে জানা যায়, তত্কালীন আমলের রায় বাহাদুর বিরাট রাজা বাণিজ্য ও নগরের বিভিন্ন কাজের জন্য আসতেন।

এই প্রসাদের (মহল) পাসেই অবস্থিত করতোয়া নদীতে নৌকযোগে এসে হাতির পিঠে চড়ে তার এ প্রসাদে (মহলে), মন্দিরে থাকতেন। এতটায় এ মহলের উচ্চতা ছিল, এর ছাদ থেকে পাশে অবস্থিত তাড়াশ উপজেলার সদরের নবরত্ন মন্দিরের ত্রিশূল দেখা যেতো। প্রায় ৪০/৫০টি মাটির ডিপি ছিল। এই প্রতিটি ডিপিতে একটি করে মন্দির ছিল। এর আশেপাশের জমিতে অনেক বড় বড় মাটির তৈরি ইট, অন্যান্য জিনিস পাওয়া যায়।

কালের বিবরর্তনে এই ঐতিহাসিক স্থান ধংসের পথে। বিরাট রাজার পরিবার, পরিজন, সৈন্য বাহিনী, হাতি, ঘোড়া ও সাংসারিক জীবনে ব্যবহার প্রয়োজনের জন্য অনেকগুলো পুকুর খনন করেন। (বিরাট রাজার বংশের, পরিবারের সদস্যদের নাম অনুসারে পুকুরগুলোর নামকরণ) যা আজও বিদ্যমান। প্রাতাপ দিঘী (২৫ একর) কাতলা দিঘী (১০ একর), ছোট রানি, বড় রানি শ্যামলী (৭ একর), রানী মায়াবতি (মায়া) পুকুর (২ একর), ঘোড়া মারা পুকুর (৬ একর) ও জোগী পুকুর (৫ একর)। এই জোগী পুকুর নিয়ে অনেক লোকোজ কাহিনী আছে।

এখনও প্রতি চাঁন রাতে মেলা বসে এখানে। মনের বাসনা, অসুখ ইত্যাদি বিষয়ে মানুষ এখনো (মানোসা) মানত করে থাকেন। বিরাট রাজার বানিজ্য নগরি অনুসারে এই ইউনিয়নের নাম করন ধামাইনগর। রানী মায়াবতী পুকুরে (মানোসা) মানত করলেই, বিভিন্ন প্রয়োজনীয় থালা বাসন, মিষ্টি, ক্ষির উঠে আসতো। আর এই ক্ষিরের জন্য এ গ্রামের নাম হয়ে যায় ক্ষিরতলা (লোকোজ কাহিনী)। এ ঐতিহাসিক স্থানটি রক্ষণাবেক্ষণ, সংস্কার করা অতীব জরুরি। প্রায় ১০ একর এ স্থানকে একটি পর্যটন এলাকায় হিসাবে গড়ে তোলার আহ্বান এলাকাবাসীর।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আ. লীগের সহসম্পাদক ব্যারিস্টার হাবিব গ্রেপ্তার

এক টাকারও অভিযোগ দিতে পারলে রাজনীতি থেকে ইস্তফা দিব : সারজিস

ঢাকা মহানগর আদালতে পরিচ্ছনতা অভিযান

উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে নারীসহ ফার্মাসিস্ট আটক

৮ দিন পর খাগড়াছড়িতে ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার

চাঁদা না দেওয়ায় ঠিকাদারকে ডেকে নিয়ে মারধর

মাউন্ট-সেশকোর গোলে ম্যানইউর স্বস্তির জয়

সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শিবু প্রসাদ গ্রেপ্তার

‘শহিদুল আলম ও গাজার পাশে আছি-থাকব’

রেবতী মহাজন বাড়ির বিজয়া সম্মিলনী

১০

জামায়াত ধর্মের জন্য ক্ষতিকর : আমিনুল হক

১১

এভারেস্ট বেজ ক‍্যাম্প সামিট ৮ বাংলাদেশির

১২

তারেক রহমানের ৩১ দফায় দেশের উন্নয়নের কর্মপরিকল্পনা : আবু বকর সিদ্দিক

১৩

মানবাধিকার কর্মীদের আটকের ঘটনা কলঙ্কজনক অধ্যায় : মুহিউদ্দীন রাব্বানী

১৪

শিয়ালের কামড়ে মেম্বারসহ আহত ১১

১৫

কাশফুলের গালিচায় মোড়া বরিশালের বিসিক

১৬

উপ-সহকারীর ভরসায় চলছে ২০ শয্যার হাসপাতাল

১৭

মার্কিন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার বৈঠক 

১৮

নদীর স্রোতে তলিয়ে গেল ৩ বোন

১৯

‘ভারতের মানচিত্রও মুছে যাবে’, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হুঁশিয়ারি

২০
X