বানারীপাড়া (বরিশাল) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৪২ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

কন্যাসন্তানের মুখ দেখে যেতে পারেননি আন্দোলনে নিহত রনি

রনির নবজাতক মেয়েকে কোলে নিয়ে স্বজনরা, ইনসেটে রনি। ছবি: কালবেলা
রনির নবজাতক মেয়েকে কোলে নিয়ে স্বজনরা, ইনসেটে রনি। ছবি: কালবেলা

সন্তানের মুখে বাবা ডাক শোনার আফসোস নিয়েই না ফেরার দেশে চলে গেলেন আল-আমিন রনি। নবজাতক কন্যারও বাবার মুখ দেখা হলো না। বাবার আদর-সোহাগ ছাড়াই বেড়ে উঠবে সে। বড় হয়ে একদিন জানবে তার বাবা দেশের জন্যই জীবন বিলিয়ে দিলেন।

গত ১৯ জুলাই বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে রাজধানীর মহাখালীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সৃষ্ট সংঘর্ষে গুলিতে নিহত হন আল-আমিন রনি (২৪)।

সোমবার (৪ নভেম্বর) সকালে বানারীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সিজারিয়ান অপারেশেনের (অস্ত্রোপচারের) মাধ্যমে ফুটফুটে কন্যাসন্তানের জন্ম দেন রনির স্ত্রী মিম আক্তার (১৯)। সন্তান যখন পৃথিবীর আলো দেখল, তখন মিমের শোক বেড়ে হয় দ্বিগুণ। চোখের পানিতে ভেসে যায় বুক।

বানারীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. ফকরুল ইসলাম মৃধা বলেন, প্রসূতি তার তত্ত্বাবধানে রয়েছেন। মা-মেয়ে উভয়ই সুস্থ আছেন।

আল-আমিন রনির বাড়ি বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার সলিয়াবাকপুর ইউনিয়নের পূর্ব বেতাল গ্রামে। তিনি রাজধানীর মহাখালীর মাল্টিব্র্যান্ড ওয়ার্কশপে কাজ করতেন। তার বাবা দুলাল হাওলাদার মারা গেছেন করোনাকালে। মা মেরিনা বেগম, অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী মিম ও ছোট ভাই রহিমকে নিয়ে ঢাকার মহাখালী সাততলা বাউন্ডারি বস্তি এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন রনি। যেদিন রনি নিহত হন, সেদিন তার স্ত্রী বাবার বাড়িতে ছিলেন।

উপজেলার চাখার সরকারি ফজলুল হক কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন রনি। বাবা মারা যাওয়ার পর তার আর লেখাপড়া করা হয়নি। সংসারের হাল ধরেছেন। তখনই মহাখালীর ওই ওয়ার্কশপে কাজ নেন। মা গৃহপরিচারিকার কাজ করতেন। রনির আয় দিয়ে মূলত চলত চার সদস্যের পরিবার।

১৯ জুলাই বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে মায়ের কাছ থেকে ১০০ টাকা নিয়ে মহাখালীর বস্তি এলাকার বাসা থেকে বের হন রনি। বিকেল ৫টার দিকে মহাখালী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। হঠাৎ একটি গুলি এসে লাগে তার শরীরে। সেখানেই মারা যান তিনি।

খবর শুনে পাগলপ্রায় মা রাত ৮টার দিকে ছুটে যান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে। সেখানে রনির মরদেহ শনাক্ত করেন তিনি। ময়নাতদন্ত শেষে সন্তানের মরদেহ গ্রহণ করেন ২০ জুলাই। তারপর বানারীপাড়ার সলিয়াবাকপুর ইউনিয়নের পূর্ব বেতাল গ্রামে আনা হয়। ওই দিন দিবাগত রাত ১টায় পারিবারিক কবরস্থানে বাবার কবরের পাশেই রনিকে দাফন করা হয়।

স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, রনি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। তিনি পরিবারের একমাত্র রোজগারের ব্যক্তি ছিলেন। তার আয়েই চলত তাদের সংসার। মাস শেষে কষ্টার্জিত উপার্জনের টাকা তিনি মায়ের হাতে তুলে দিতেন। গ্রামের বাড়ি থাকা দাদিও রনির ভরণ-পোষণের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন। রনি নিহত হওয়ার সময় তার স্ত্রী মিম ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। কিন্তু আজ এই পরিবারের হাল কে ধরবে? কীভাবে বেড়ে উঠবে তার সন্তান?

আদরের নাতিকে হারিয়ে আজও কান্না থামছে না রনির দাদি শতবর্ষী মরিয়ম বেগমের। আর নাড়িছেঁড়া বুকের ধন ছেলেকে হারিয়ে মা মেরিনা বেগম কাঁদতে কাঁদতে এখন আর চোখে পানি আসে না।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বিশ্বকাপ জয়ের দৌড়ে এগিয়ে কারা, জানাল অপটা সুপারকম্পিউটার

শতাব্দীর ভালো নির্বাচন চাই : ইসি সচিব

অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশোনায় ভিসা ঝামেলা এড়াতে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবীমা

কেন বার বার পরিচালকের প্রেমে পড়েন নায়িকারা?

দেশের স্বার্থে একটা ভালো নির্বাচনের বিকল্প নেই : ইসি সানাউল্লাহ

১৯ দেশের নাগরিকদের গ্রিন কার্ড ও নাগরিকত্ব দেবে না যুক্তরাষ্ট্র, তালিকায় যারা

বিপিএল: বড় চমক দেখাল ঢাকা ক্যাপিটালস

তেঁতুলিয়ায় শীতের দাপট, তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রিতে

৮ কুকুরছানা হত্যার ঘটনায় সেই নারী গ্রেপ্তার

দাম কমল স্বর্ণের, কত দরে বিক্রি হচ্ছে আজ

১০

৭ বছরের প্রেমে মজে কাকে বিয়ে করলেন নির্মাতা আরিয়ান?

১১

কারখানা সিলগালা / ফিটকিরি, সোডা ও হাইড্রোজ মিশিয়ে গুড় তৈরি

১২

এক নজরে ২০২৫ সালে ছক্কা হাঁকানোয় বাংলাদেশের শীর্ষ পাঁচ ব্যাটার

১৩

বায়ুদূষণে শীর্ষে দিল্লি, ঢাকার খবর কী

১৪

শাহরুখ-সালমানের ধারেকাছেও নেই আমার পারিশ্রমিক: মনোজ

১৫

ইউরোপ এখন ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে বাধা দিচ্ছে, অভিযোগ পুতিনের

১৬

ল্যাপটপকে দীর্ঘদিন টিকিয়ে রাখার ৫ টিপস

১৭

চীনে গড় আয়ু বেড়ে ৭৯ বছর

১৮

ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সে ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ

১৯

পরীক্ষা বন্ধের উসকানি : প্রাথমিকের ৩ শিক্ষকের বিরুদ্ধে নোটিশ

২০
X