আসিফ পিনন, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ১০ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৪৭ এএম
আপডেট : ১০ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৬ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

ত্রাসের জনপদে জ্ঞানের আলো ছড়ালেন যিনি

গ্রামীণ জনপদে শিক্ষা খাতে অসামান্য অবদান রাখায় কালবেলার দ্বিতীয় বর্ষপূর্তিতে সম্মাননা দেওয়া হয় শিক্ষক আদিত্য রঞ্জন বড়ুয়াকে। ছবি : কালবেলা
গ্রামীণ জনপদে শিক্ষা খাতে অসামান্য অবদান রাখায় কালবেলার দ্বিতীয় বর্ষপূর্তিতে সম্মাননা দেওয়া হয় শিক্ষক আদিত্য রঞ্জন বড়ুয়াকে। ছবি : কালবেলা

আশির দশকে চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম আঁধার মানিক পরিচিত হয়ে ওঠে সন্ত্রাসের অভয়ারণ্য হিসেবে। গুম, খুন, চুরি, ছিনতাই ছিল এ গ্রামের নিত্যদিনের ঘটনা। দিনের আলোতেও যে গ্রামে চলাফেরা করতে ভয় পেত মানুষ, ঠিক তখনই আলোর শিখা জ্বালান আদিত্য রঞ্জন বড়ুয়া।

ভীতি ও অপরাধ দূর করতে এই জনপদে শিক্ষকতা শুরু করেন আদিত্য রঞ্জন। ছড়িয়ে দেন জ্ঞানের আলো। ১৯৮২ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত প্রায় ৩৭ বছর আঁধার মানিক স্কুলে শিক্ষকতা করেন তিনি। এ সময়ের মধ্যে হাজারো শিক্ষার্থীকে আলোকিত মানুষ হওয়ার মন্ত্র শিখিয়েছেন। তার হাতে প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে আজ কেউ চিকিৎসক, কেউ ব্যাংকার, কেউ প্রকৌশলী, সাংবাদিক কিংবা প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করছেন।

গত ১৬ অক্টোবর ‘গ্রামীণ জনপদে শিক্ষা খাতে অসামান্য অবদান’ রাখায় কালবেলার দ্বিতীয় বর্ষপূর্তিতে সম্মাননা দেওয়া হয় আদিত্য রঞ্জন বড়ুয়াকে। সেখানে শিক্ষকতার একাল-সেকাল কালবেলার কাছে তুলে ধরেন প্রবীণ এই শিক্ষক। প্রকাশ করেছেন নিজের আশা-প্রত্যাশার, স্বপ্নের কথা। তবে দীর্ঘ ৩৭ বছরের শিক্ষকতা জীবনে আছে হতাশাও। সবকিছু ভুলে নিজের বাকি জীবনটুকু শিক্ষার্থীদের জন্য উৎসর্গ করতে চান আদিত্য রঞ্জন বড়ুয়া।

জানা গেছে, রাউজান উপজেলার প্রাচীনতম বিদ্যাপীঠ আঁধার মানিক স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৭২ সালে। শুরুর দিকে আঁধার মানিক জুনিয়র হাইস্কুল নামকরণ হলেও ১৯৮৭ সালে এ বিদ্যাপীঠে শুরু হয় মাধ্যমিক স্তর। নামকরণ হয় ‘মধ্যম আঁধার মানিক উচ্চবিদ্যালয়’ নামে। আঁধার মানিক গ্রামের এই স্কুলেই ১৯৮২ সালে শিক্ষকতা পেশা শুরু করেন আদিত্য রঞ্জন বড়ুয়া। প্রায় ৩৭ বছরে আটজন প্রধান শিক্ষকের অধীনে কাজ করেছেন আদিত্য।

২০১৯ সালে তিনি অবসরে গেলেও কর্তৃপক্ষের অনুরোধে তিনি স্কুলটিতে এখনো যুক্ত আছেন ‘অতিরিক্ত শিক্ষক’ হিসেবে। প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের আগ্রহ এবং স্কুল কর্তৃপক্ষের অনুরোধে এখনো শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত আছেন আদিত্য রঞ্জন। মূলত আদিত্যর ৩৭ বছরের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতেই স্কুল কর্তৃপক্ষের এ সিদ্ধান্ত।

অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষক হিসেবেই বেঁচে থাকতে চান আদিত্য বড়ুয়া। নিজের সুখস্মৃতি নিয়ে আঁধার মানিক গ্রামেই কাটাতে চান জীবনের বাকিটা সময়।

আদিত্য কালবেলাকে বলেন, আমার জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হলো স্কুলে যাওয়া-আসা এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কাটানো সময়টুকু। ২০১৯ সালে আমি অবসরে গিয়েছি। কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষ অনুরোধ জানিয়েছে যেন তাদের সঙ্গেই থাকি। এখন অতিরিক্ত শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি।

শিক্ষার্থীদের বিষয়ে প্রবীণ এই শিক্ষক বলেন, আগের শিক্ষার্থীরা সব সময় নিয়ম মেনে চলত। এখনকার শিক্ষার্থীরা মেধাবী হলেও তবে আগের শিক্ষার্থীদের মতো নয়। যা-ই হোক আমি যত দিন বেঁচে আছি, তাদের নিয়েই থাকতে চাই।

কালবেলার বিভাগীয় বিশেষ প্রতিনিধি ও ব্যুরো প্রধান সাইদুল ইসলাম বলেন, স্যার (আদিত্য) আমারও শিক্ষক। দীর্ঘদিন ধরে গ্রামের স্কুলেই শিক্ষকতা করেছেন তিনি। বর্তমান সময়ে এমন নির্লোভ ও সাদামাটা মানুষ পাওয়া বিরল ব্যাপার। তিনি শুধু শিক্ষকই নন, আদর্শ মানুষ গড়ার কারিগর।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আজকের দিন কেমন কাটতে পারে, জেনে নিন রাশিফলে

স্বামীকে বিদায় দেওয়া হলো না সানজিদার

বৃহস্পতিবার রাজধানীর যেসব মার্কেট বন্ধ

০১ মে : কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

টিভিতে আজকের খেলা

আড়িয়াল খাঁ নদে ফেলে সন্তানকে হত্যার অভিযোগ

০১ মে : আজকের নামাজের সময়সূচি

‘চাকরি খেয়ে ফেলব’, কারারক্ষীকে আ.লীগ নেতার হুমকি

মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীর মৃত্যু, পরিবারের দাবি হত্যা

মুরাদনগরে উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবির মিছিলে পুলিশের বাধা 

১০

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ

১১

উপবৃত্তির ৬৭ অ্যাকাউন্টের নাম্বার পরিবর্তন, শিক্ষা অফিসার বরখাস্ত 

১২

খেলার সময় পাগলা কুকুরের আক্রমণ, শিশুসহ আহত ১৬

১৩

৭৫ বছর বয়সে ডিগ্রি পাস, প্রশংসায় ভাসছেন সাদেক আলী

১৪

গোপালগঞ্জে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ৫৬ সেকেন্ডের মিছিল 

১৫

শখের বড়শিতে ২০ কেজির কোরাল

১৬

এসএসসি পরীক্ষার্থীর ছুরিকাঘাতে রিকশাচালক নিহত

১৭

কয়লা তৈরির কারখানায় অভিযান, ৩ লাখ টাকা জরিমানা

১৮

চ্যাম্পিয়ন্স লিগে থ্রিলারের ছোঁয়া, বার্সা-ইন্টার ম্যাচে ৬ গোলের উৎসব!

১৯

শতাধিক ভুয়া পেজে ‘অশ্লীল বিজ্ঞাপন’, বিব্রত ডা. জাহাঙ্গীর

২০
X