সাইয়েদ বাবু, কুড়িগ্রাম
প্রকাশ : ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৫৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

শিশু নুহা-নাবা বাড়িতে ফেরায় আনন্দিত বাবা মাসহ স্থানীয়রা

শিশু নুহা-নাবা। ছবি : কালবেলা
শিশু নুহা-নাবা। ছবি : কালবেলা

প্রায় আড়াই বছর পর হাসপাতাল থেকে নিজ বাড়িতে ফিরেছে কুড়িগ্রামের আলোচিত কোমর ও মেরুদণ্ডে জোড়া থাকা শিশু নুহা ও নাবা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮ দফা অস্ত্রোপচার ও চিকিৎসার পর গত মঙ্গলবার বাড়িতে ফিরেছে তারা। শিশু দুটোর চঞ্চলতায় মুখর হয়ে উঠে বাড়ির আঙিনা। তা দেখে আনন্দিত এলাকাবাসীসহ আলমগীর-নাসরিন দম্পতি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নের শিবরাম গ্রামে আলমগীর-নাসরিন দম্পতির বাড়ি। আলমগীর হোসেন রানা একজন পরিবহন শ্রমিক ছিলেন। ২০২১ সালের ২২ মার্চ কুড়িগ্রামের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে জোড়া লাগানো দুই কন্যাসন্তানের জন্ম দেন স্ত্রী নাসরিন বেগম। মেরুদণ্ড জোড়া লাগানো জমজ দুই কন্যাকে পেয়ে আনন্দের বদলে বিষাদে ভরে যায় এই দম্পতির মন। অর্থের অভাবে উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে শিশু দুটিকে আলাদা করার জন্য যেতে পারছিলেন না কোনো হাসপাতাল বা চিকিৎসকের কাছে। এ অবস্থায় ওই বছরের ৪ এপ্রিল সিভিল সার্জন অফিসের সহায়তায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয় শিশু দুটিকে। তখন জোড়া লাগা শিশুদের পৃথক করাসহ চিকিৎসার দায়িত্ব নেয় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। সেখানকার চিকিৎসক ও নিউরোসার্জন ডা. মোহাম্মদ হোসেনের তত্ত্বাবধানে ৮ দফা অস্ত্রোপচারের পর গত বছর জানুয়ারি মাসে পৃথক করা হয় শিশু দুটিকে। দেশের চিকিৎসাবিজ্ঞানে যা মাইলফলক হয়ে যায়। এরপর থেকে ওই হাসপাতালে চিকিৎসা চলছিল তাদের। সফল অস্ত্রোপচার ও চিকিৎসা শেষে গত সোমবার রাতে হাসপাতাল থেকে জোড়া শিশু নুহা ও নাবাকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি যান তারা। তাদের এই অকল্পনীয় পৃথক চিকিৎসা নিয়ে স্বস্তি ও আনন্দে প্রতিবেশী, স্বজনসহ আলমগীর-নাসরিন দম্পতির মাঝে।

স্থানীয় আমির হোসেন বলেন, ‘আমার এলাকায় জন্ম নেয় জোড়া লাগানো শিশু। পরে তাদের ঢাকায় চিকিৎসা করে আলাদা করা হয়েছে। তাদের দেখে আমরা খুব খুশি হয়েছি। বাচ্চা দুটো ভালোই আছে। শুনলাম তাদের নাকি পুরোপুরি চিকিৎসা এখনো শেষ হয় নাই। তারা তো গরিব আমরা সবাই যদি তাদের পাশে দাঁড়াই, তাহলে হয়তো ভালোভাবে চিকিৎসা শেষ হতে পারে তাদের।’

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, আল্লাহর রহমতে চিকিৎসার মাধ্যমে তারা আজ আলাদা আলাদা জীবন পেয়েছে। আমরা এতে খুব খুশি। তাদের সন্তানের মুখ দেখলে মনটা ভরে যায়। আরও তাদের অপারেশনের দরকার আছে। আর তো তাদের এতো টাকা পয়সা নাই। এবারের চিকিৎসার জন্য যদি কোনো দানশীল মানুষ তাদের পাশে দাঁড়ায়, তাহলে হয়তো ভালোভাবে চিকিৎসাটা শেষ করতে পারবে।

শিশু নুহা ও নাবার বাবা আলমগীর হোসেন রানা বলেন, ‘নুহা-নাবা কুড়িগ্রামে জন্মগ্রহণ করার পর থেকে কোমর ও মেরুদণ্ড জোড়া লাগানো থাকে। পরের দিন আমি রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই। এখানকার ডাক্তার ঢাকা মেডিকেল না হয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে যেতে বলে। পরে কুড়িগ্রামের সিভিল সার্জনের সহযোগিতায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরো সার্জন ডা. মোহাম্মদ হোসেন স্যারের সঙ্গে যোগাযোগ করে দেন।’

তিনি বলেন, ‘স্যার আমার বাচ্চা দুইটার জন্য অনেক কিছু করেছে। স্যার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যোগাযোগ করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেন। আমরা প্রায় ৩২ মাস হাসপাতালে থাকি। বাড়ির জমি বিক্রি করে ১০ লাখ টাকা খরচ করি। আর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ব্যয় করে ৩৫ লাখ ও এক দানশীল ব্যক্তি ১৫ লাখ টাকা দেন। এখনো তাদের আরও একটি করে অপারেশন বাকি আছে। ৪-৫ মাস পর সেই অপারেশন করতে হবে। এ ছাড়া তাদের পেছনে প্রতি মাসে ১৫ হাজার টাকা খরচ লাগে। মেয়েদের চিকিৎসা করতে গিয়ে তো আমারও মোটর শ্রমিকের চাকরিটা চলে গেছে। এখন অবস্থা খুবই খারাপ। কীভাবে বাকি চিকিৎসাটা করাব চিন্তায় আছি।’

আলমগীর হোসেন রানা কালবেলাকে আরও বলেন, সরকার পতনের পর প্রধান উপদেষ্টা, বাকি চিকিৎসার জন্য বিএনপির মহাসচিব ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমিরের কাছে আবেদন করেছি। এখনো কারও কোনো অনুদান পাইনি। অন্যের সাহায্য সহযোগিতায় আমার মেয়ে দুইটা সুস্থ হয়েছে। নতুন জীবন পেয়েছে। তারা যেন বড় হয়ে মানুষের সেবায় কাজ করতে পারে—এ প্রত্যাশা আমার। তিনি কুড়িগ্রামের কৃতীসন্তান বিএনপির কেন্দ্রীয় সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদের সহায়তা আশা করেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

১০ ডিসেম্বর : আজকের নামাজের সময়সূচি

কেশবপুরে চার নারী পেলেন ‘অদম্য নারী পুরস্কার’

সিলেটে ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ ১৪ প্রতিষ্ঠানকে ৮ লাখ টাকা জরিমানা

শরীয়তপুরে বাড়ি ফেরার পথে শিক্ষার্থীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ

মাদ্রাসা সুপারের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ, তদন্ত কমিটি গঠন

মাছ ধরতে গিয়ে ভারতে আটক ৬ জেলে, ১৩ মাস পর হস্তান্তর

হাটহাজারীতে খালেদা জিয়ার সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনায় গণদোয়া

জনসভায় হামলা-ভাঙচুর গণতন্ত্রের ওপর গভীর হুমকি : জেএসডি

একাধিক চাকরি করলে শিক্ষকদের এমপিও বাতিল

সিলেটকে বাংলাদেশের ১ম দুর্নীতিমুক্ত জেলা ঘোষণার উদ্যোগ

১০

সাবেক সেনা কর্মকর্তার কাছে তারেক রহমানের দুঃখ প্রকাশ

১১

বিএনপি তারেক রহমানের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ : টুকু

১২

ঢাকায় নেত্রকোনা মুক্ত দিবস উদযাপন

১৩

এনসিপির প্রথম ধাপের মনোনয়নপ্রাপ্তদের নাম ঘোষণা কাল

১৪

যুদ্ধবিমান ইউরোফাইটার টাইফুনের অনন্য যেসব শক্তিমত্তা

১৫

যাত্রীদের সুসংবাদ দিল মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ

১৬

ব্যাংক কর্মীদের উৎসাহ বোনাস নিয়ে নতুন নির্দেশনা

১৭

গুলিবিদ্ধ বিএনপি নেতার খোঁজ নিলেন জামায়াত নেতারা

১৮

শাটল ট্রেনে কাটা পড়ে বৃদ্ধের মৃত্যু

১৯

চিকিৎসাধীন অবস্থায় চবি ছাত্রদল নেতার মৃত্যু

২০
X