ঋণ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার ফিঙ্কা ইন্টারন্যাশনাল নামের এক বেসরকারি এনজিও সংস্থা শতাধিক গ্রাহকের কাছ থেকে প্রায় অর্ধকোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা হয়ে গেছে। এ ঘটনায় বুধবার (৯ আগস্ট) দুপুরে চৌবাড়ী এলাকায় ভাড়াবাড়িতে অবস্থিত ফিঙ্কা ইন্টারন্যাশনালের কার্যালয় ঘেরাও করেন ভুক্তভোগী গ্রাহকরা। এদিকে এ ঘটনায় বাড়ির মালিক জাহাঙ্গীর হোসেনের সহযোগিতা থাকতে পারে বলে দাবি করেন ভুক্তভোগীরা।
ভুক্তভোগীরা জানান, প্রবাসী ঋণসহ অন্যান্য ঋণ দেওয়ার কথা বলে অন্তত শতাধিক গ্রাহকের কাছ থেকে গ্রাহক সদস্য ফি এক হাজার ৫০ টাকাসহ গ্রাহকের ঋণভেদে প্রতিজনের কাছ থেকে ৫ হাজার থেকে শুরু করে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়েছে। এদের অধিকাংশ দিনমজুর ও ভ্যানচালক। অধিকাংশ গ্রাহককে বুধবার ও বৃহস্পতিবার ঋণ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বুধবার সকালে গিয়ে গ্রাহকরা দেখেন কার্যালয়ে তালা এবং এনজিও কর্মীদের মুঠোফানও বন্ধ। ফিঙ্কা ইন্টারন্যাশনালের কামারখন্দ উপজেলার এই শাখায় ব্যবস্থাপক ছিলেন সাখাওয়াত হোসেন, তার সহযোগী ছিলেন আজাদ, জাহাঙ্গীর ও নাদিম।
ভুক্তভোগী গ্রাহক উপজেলার কর্ণসূতি গ্রামের শান্তা আকন্দ বলেন, প্রবাসী ঋণ দেওয়ার কথা বলে ফিঙ্কা ইন্টারন্যাশনালের মাঠকর্মী আজাদ মঙ্গলবার আমার কাছ থেকে ১১ হাজার ৫০০ টাকা নেয়। আমাকে বৃহস্পতিবার ঋণ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বুধবার সকালে এসে দেখি অফিসে তালা, পরে মাঠকর্মী আজাদকে ফোন দেওয়া হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। আমি ছাড়াও অন্তত শতাধিক গ্রাহকের প্রায় ৫০ লাখ টাকা নিয়ে ফিঙ্কা ইন্টারন্যাশনালের কর্মীরা পালিয়ে গেছে।
ভুক্তভোগী ভ্যানচালক রিপন বলেন, গত শনিবার ফিঙ্কা ইন্টারন্যাশনালের মাঠকর্মী আজাদ আমাদের কর্ণসূতি গ্রামে গিয়ে সহজ শর্তে প্রবাসী ঋণ, পশু পালনের ওপর ঋণসহ অন্যান্য ঋণ প্রদানের কথা বলে। পরে আমি দুই লাখ টাকা ঋণের আবেদন করলে মাঠকর্মী ঋণ দেওয়ার আশ্বাস দেন এবং সদস্য ফি ১ হাজার ৫০ টাকা ও ঋণের সঞ্চয় দুই লাখের ১৫ হাজার টাকা দাবি করেন। পরে মঙ্গলবার আমি আজাদের কাছে সম্পূর্ণ টাকা প্রদান করি। আমাকে ঋণ দেওয়ার কথা ছিল বুধবার। কিন্তু সকালে এসে দেখি সব তালাবদ্ধ করে এনজিও কর্মীরা পালিয়ে গেছে। পরে তাদের নম্বরে যোগাযোগ করা হলে মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। একই অবস্থা মোর্শেদুল, ইসমাইলসহ আরও অনেকের। তারা প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছেন।
বাড়ির মালিক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, গত জুলাই মাসের ৩০ তারিখে ফিঙ্কা ইন্টারন্যাশনালের জাহাঙ্গীর নামের এক ব্যক্তি আমার বাড়ি ভাড়া নেওয়ার জন্য আমাকে ফোন করে। আমি ঢাকায় থাকায় এ ব্যাপারে কয়েকদিন পর সাক্ষাতে কথা বলব বলা হলে তাদের বাড়িটি ভাড়া নেওয়া জরুরি বলে জানায়। পরে তাদের চলতি মাসের ১ তারিখ থেকে বাড়ি ভাড়া দেই এবং আগামী ১৫ আগস্ট ভাড়ার চুক্তি করা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যার কারণে তাদের কাছ থেকে কোনো কাগজপত্র বা ঠিকানা নেওয়া হয়নি। কিন্তু বুধবার সকালে শুনি তারা সব তালাবদ্ধ করে চলে গেছে। পরবর্তীতে তাদের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় সহযোগিতার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি বাড়ির মালিক, থাকি ঢাকায়। এ ঘটনায় জড়িত থাকার কোনো প্রশ্নই আসে না। যেসব গ্রাহক ঋণ নেওয়ার আগে টাকা দিল তাদের অন্তত একবার এই এনজিওর ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া দরকার ছিল।’
এ ঘটনায় ফিঙ্কা ইন্টারন্যাশনালের কামারখন্দ উপজেলার এই শাখার ব্যবস্থাপক সাখাওয়াত হোসেন, মাঠকর্মী আজাদ, জাহাঙ্গীর ও নাদিমের সঙ্গে তাদের মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাদের সবার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এ ব্যাপারে কামারখন্দ থানার ওসি মোহা. রেজাউল ইসলাম জানান, ফিঙ্কা ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি এনজিও গ্রাহকের টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় থানায় কেউ অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে এ বিষয়ে গুরুত্বের সঙ্গে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিষয়টি নিয়ে নবাগত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিন সুলতানা দৈনিক কালবেলাকে বলেন, বিষয়টি আমি জানতে পেরেছি কিন্তু আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত যারা প্রতারণার শিকার হয়েছেন, তারা কেউ অভিযোগ করেননি। এমনকি উপজেলায় বেসরকারি এনজিও সংস্থাগুলোকে নিয়ে আমরা যে মাসিক সভা করি তার তালিকাতেও এই এনজিওর নাম নেই। অর্থাৎ এই এনজিও সংস্থাটি আমাদের অবগত না করেই তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করত। আগামী সভায় উপজেলা জনপ্রতিনিধি ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য সবাইকে এই বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ প্রদান করব। ইতিমধ্যে যে ঘটনাটি ঘটেছে অভিযোগ পেলে আমরা এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।
মন্তব্য করুন