যুক্তরাষ্ট্র থেকে রওনা হওয়া দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীপুত্র শামীম সাঈদী এখনো না পৌঁছানোর কারণে এবং মাসুদ সাঈদী জানাজার স্থানে না আসায় জানাজা শেষ করতে চায় জামায়াতে ইসলামীর নেতারা। যার কারণে বারবার মুসল্লীদের কাতার সোজা করে জানাজা শুরুর চেষ্টা করলেও সাধারণ মানুষ অস্বীকৃতি জানাচ্ছে।
স্থানীয় একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে, দ্রুত দাফন সম্পন্ন করতে প্রশাসনের চাপ রয়েছে। এজন্য জামায়াতের নেতারা জানাজা শেষ করতে চায়।
সোমবার (১৪ আগস্ট) রাতেই পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয় জানাজার নামাজ শুরু হবে মঙ্গলবার দুপুর ২টায়। তারপরও বারবার তাড়াহুড়ো করে জানাজার নামাজ শুরু করতে চাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন আগত মুসল্লীরা।
এ বিষয়ে একাধিক জামায়াতের নেতাদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তারা বিষয়টি এড়িয়ে যান।
এদিকে সাঈদী ফাউন্ডেশন মাঠে এরই মধ্যে উপস্থিত হয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, মাওলানা তারেক মনোয়ারসহ দলের শীর্ষ ও স্থানীয় নেতাকর্মীরা।
এর আগে মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) সকাল ১০টার দিকে সাঈদী ফাউন্ডেশন মাঠে পৌঁছে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আমৃত্যু দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে বহনকারী লাশবাহী ফ্রিজিং গাড়ি।
তার জানাজাকে ঘিরে সাঈদী ফাউন্ডেশন মাঠ ও তার আশেপাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকা লোকারণ্য হয়ে গেছে বলে দাবি করে ফেসবুক পেজে ভিডিও শেয়ার করেছে জামায়াতে ইসলামী।
এদিকে ফাউন্ডেশন মসজিদের পাশে সাঈদী পারিবারিক কবরস্থানে বড় ছেলে মাওলানা রাফীক সাঈদীর কবরের পাশে তার কবর খনন করা হয়েছে।
এর আগে সাঈদীর ছোট ছেলে মাসুদ সাঈদী এক বার্তায় জানান, ‘পিরোজপুরের আল্লামা সাঈদী ফাউন্ডেশনের বায়তুল হামদ জামে মসজিদের পাশে কবর খনন করা হয়েছে। এখানেই শুয়ে আছেন তার বড় সন্তান রাফীক বিন সাঈদী, তার ছোট ভাই হুমায়ুন কবীর সাঈদী, তার বড় পুত্রবধূ সুমাইয়া রাফীক সাঈদী।’
এদিকে ভোর ৫টা ৪০ মিনিটের দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) থেকে সাঈদীর মরদেহ বহনকারী ফ্রিজিং গাড়ি পিরোজপুরে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়। এর আগে ভোর ৫টার দিকে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আমৃত্যু দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্স ঘিরে বিক্ষোভ করেন জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা। ঢাকায় সাঈদীর জানাজা পড়ানোর দাবি করেন তারা। পরে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
গতকাল সোমবার রাত ৮টা ৪০ মিনিটে বিএসএমএমইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। তার মৃত্যুর খবর পেয়ে রাত সাড়ে ১১টার পর থেকে শাহবাগ এলাকায় জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা জড়ো হন।
তার আগে রোববার (১৩ আগস্ট) বিকালে তিনি কারাগারের ভেতরে বুকের ব্যথায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। সেখান থেকে রাতেই তাকে জরুরি অবস্থায় ঢাকায় হস্তান্তর করা হয়।
কাশিমপুর কারা কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরেই একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আমৃত্যু দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত জামায়াতের নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার পার্ট-১ বন্দি ছিলেন। সেখানে থাকা অবস্থায় রোববার বিকাল ৫টার দিকে তিনি বুকের ব্যথায় অসুস্থ হয়ে পড়েন।
পরে কারা কর্তৃপক্ষ তাকে কারাগারের অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে পাঠানো হয়।
মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে আমৃত্যু কারাদণ্ডের আদেশ দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। ২০১০ সালের ২৯ জুন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে আটক হন সাঈদী। পরে ২ আগস্ট মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
মন্তব্য করুন