নোয়াখালীতে মা-মেয়ে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন করেছে পুলিশ। এতে মা নুরুন্নাহারের ওমান প্রবাসী বন্ধু আলতাফ হোসেন চাহিদামতো টাকা না পেয়ে মা-মেয়েকে একাই ছুরিকাঘাতে হত্যা করেছে। আজ বুধবার সন্ধ্যায় নোয়াখালী পুলিশ সুপার মো. শহীদুল ইসলাম সুধারাম মডেল থানায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি করেন।
তিনি বলেন, আটক আলতাফ হোসেন একজন ওমান প্রবাসী। তার বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রামগতির আলেকজান্ডার এলাকায়। বিদেশ থেকে মোবাইলের রং নম্বরে নিহত নুরুন্নাহারের সঙ্গে পরিচয় হয়। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে বিদেশে টাকা রোজগার করতে না পারায় নুরুন্নাহার তাকে দেশে আসার জন্য বলে এবং ব্যবসার জন্য তিন লাখ টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়।
এদিকে আলতাফ হোসেন পরিবারের অগোচরে গত ৮ জুন দেশে আসেন এবং নুরুন্নাহারের সঙ্গে তার বাসায় গিয়ে দেখা করেন। পরে নুরুন্নাহার তার বাসার নিচতলা ভাড়া নেওয়ারও প্রস্তাব দেন। আলতাফ তাতে রাজি হলেও গত ৬ দিনে ব্যবসার জন্য কোনো টাকা না দেওয়ায় সে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে।
পুলিশ সুপার জানান, বুধবার সকাল ১০টার দিকে নুরুন্নাহারের স্বামী ফজলে আজিম কচি ও ছেলে হৃদয়ের অনুপস্থিতিতে আলতাফ হোসেন বাজার থেকে একটি ছুরি কিনে ওই বাসায় যান। এ সময় পাশের কক্ষে মেয়ে প্রিয়ন্তী ঘুমিয়েছিলেন। পরে টাকার জন্য কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে সঙ্গে থাকা ছুরি দিয়ে নুরুন্নাহারকে ভয় দেখান আলতাফ। এ সময় নুরুন্নাহার ভয়ে মেয়ের কক্ষে চলে গেলে সেখানে মা-মেয়েকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করেন আলতাফ। এতে মা নুরুন্নাহার ঘটনাস্থলে মারা গেলেও মেয়ে প্রিয়ন্তী দৌড়ে নিচে চলে যায়। পরে আলতাফ বের হলে স্থানীয়রা তাকে আটক করে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে দেয়। প্রিয়ন্তীকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে সেও মারা যায়।
মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আলতাফ হোসেন একাই এ খুন করেছে বলে স্বীকার করেছে। পরিবারের দেওয়া মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাকে আগামীকাল বৃহস্পতিবার আদালতে সোপর্দ করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিজয়া সেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোর্তাহীন বিল্লাহ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বেগমগঞ্জ সার্কেল) মো. নাজমুল হাসান রাজিব, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নাজিম উদ্দিন আহমেদ, সুধারাম মডেল থানার ওসি মো. আনোয়ারুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বার্লিংটন মোড়ে মানিক মিয়ার বাড়িতে শিক্ষার্থী প্রিয়ন্তী ও তার মা নুরুন্নাহারকে ছুরিকাঘাত ও গলাকেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় পুলিশ আলতাফ হোসেনকে রক্তাক্ত অবস্থায় আটক করে। তিনি লক্ষ্মীপুরের রামগতি থানার আলেকজান্ডারের মৃত আবুল কালামের ছেলে।
মন্তব্য করুন