নরসিংদীর শিবপুরে মৌসুমের শেষ কাঁঠালগুলো বিক্রির জন্য চারটি ভ্যানে করে নেওয়া হচ্ছে হাটে। উৎসবের আমেজে ভ্যানের চারদিক সাজানো হয়েছে রঙিন কাগজের নিশান ও জরি দিয়ে। ঢাকঢোল পিটিয়ে স্থানীয় চৈতন্যা হাটের দিকে এগিয়ে চলছে ভ্যান। সঙ্গে তাল মিলিয়ে কৃষকসহ ছোটবড় একদল গ্রামবাসী নেচে-গেয়ে উল্লাস করছেন।
বাগান থেকে কাঁঠাল সংগ্রহ করা মৌসুমের শেষ কাঁঠালগুলো বিদায় জানানোর এই রীতির স্থানীয় নাম ‘নিশান উৎসব’।
বুধবার (১৭ আগস্ট) সকালে এই দৃশ্যের দেখা মেলে নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার বাঘাব ইউনিয়নের বিরাজনগর গ্রামে।
উপজেলার বাঘাব, যোশর ও জয়নগর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা থেকে বাগান থেকে কাঁঠাল সংগ্রহ করে ভ্যানে করে নেওয়া হয় হাটে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, প্রতিবছর কাঁঠালের মৌসুমের শেষ দিকে গাছে থাকা অবশিষ্ট কাঁঠাল এভাবেই হাটে বিক্রির জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। উৎসবটি শত বছরের ঐতিহ্য। বাব-দাদার আমল থেকে বছরের পর বছর ধরে এ উৎসব উদ্যাপন করা হয়। প্রতিবছরই কাঁঠালের মৌসুমের শেষ সময়ে শ্রাবণ-ভাদ্র মাসে এ উৎসবের আয়োজন করা হয়।
কাঁঠাল ব্যবসায়ী কৃষক খোরশেদ আলম বলেন, আমরা ছোট থেকেই দেখে আসছি, আমাদের বাবা-দাদারা এই উৎসব করে আসছেন। আমরাও সেই ঐতিহ্য ধরে রাখতে এই উৎসব করি। আগে আমরা নিজেদের মাথায় করে কাঁঠাল নিয়ে উৎসব করতে করতে হাটে গিয়ে কাঁঠাল বিক্রি করতাম। এখন সবাই মিলে ভ্যানে করে নেচে-গেয়ে হাটে নিয়ে যাই।
কাঁঠাল ব্যবসায়ী মিয়া হোসেন, এবার কাঁঠাল ব্যবসা করে লাভ হয়েছে। প্রতিবছর এই সময়ে প্রত্যেকের গাছ থেকে শেষ সময়ের শেষ কাঁঠাল নিয়ে এসে একটি জায়গায় জমানো হয়। পরে ঢাকঢোলের তালে সবাই নেচে-গেয়ে সেসব কাঁঠাল বাজারে নিয়ে বিক্রি করেন। মৌসুম শেষে কাঁঠালের ভালো দামও পাওয়া যায়।
হাটে আসা কাঁঠালের পাইকার সৈয়দ উদ্দিন মিয়া বলেন, এখান থেকে কাঁঠাল পাইকারি কিনে ঢাকায় ছোট কাঁঠাল, সিলেটে বড় একারের কাঁঠাল পাঠানো হয়।
চৈতন্যা বাজার কমিটির সভাপতি ফজলুর রহমান বলেন, বাগান থেকে কাঁঠাল বিক্রি করে প্রত্যাশিত মুনাফা হওয়ার পরই এলাকার ব্যবসায়ীরা এ উৎসবের আয়োজন করেন। এটি এ অঞ্চলের শত বছরের ঐতিহ্য। কৃষকদের এই উৎসবের সঙ্গে বাজার কমিটি এবং বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পাইকাররাও যোগ দেন। এ বছর শেষ হাটে ৫ হাজার টাকা দিয়ে সবচেয়ে বড় কাঁঠালটি বিক্রি করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন