শৈহ্লাচিং মার্মা, রুমা (বান্দরবান)
প্রকাশ : ১৩ মার্চ ২০২৫, ০২:২৮ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

সাঙ্গু নদীর পানিই ৩৮ পরিবারের ভরসা

সাঙ্গু নদী। ছবি : সংগৃহীত
সাঙ্গু নদী। ছবি : সংগৃহীত

বাড়ির সামনে বয়ে গেছে নদী। তারপরও বাড়িতে বিশুদ্ধ পানীয় জলের তীব্র সংকট। তাই নিজেরাও সব কাজে অনিরাপদ নদীর পানি ব্যবহার করি। আর বাড়িতে মেহমান এলে, এই পানি-ই পান করাচ্ছি। এভাবে চলছে প্রায় চার মাস। এসব কথা বলেছেন মেঞোচিং মার্মা (৪১) ও চিংমে মার্মা (৫৮)। গত সোমবার রিঝুক পাড়ার একটি চা দোকানে বসে কথা হয় এই দুই নারী সঙ্গে। ওই সময় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পাড়া প্রধানসহ নারী-পুরুষ বেশ কয়েকজন দোকানে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন।

টেবিলে প্লাস্টিক জগ আর বোতলে স্বচ্ছ পানি। পানি নিরাপদ কি না, জানতে চাইলে দোকানে থাকা সাথোয়াইচিং (৩৫) আঙুল দেখিয়ে বলেন, পানি এই সাঙ্গু নদী থেকে তোলা। নিরাপদ ও অনিরাপদ জানি না, আমরা সবাই নদীর পানি খাই। চা-দোকানের যাবতীয় কাজ এ পানি দিয়ে সেরে নিতে হয়। আর কোনো উপায় নেই। পাড়াবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাড়াটি প্রতিষ্ঠার বয়স প্রায় ৩০ বছর। ৩৮ পরিবারের শিশু কিশোর নারী-পুরুষ এ পাড়ায় বসবাস করছেন।

বান্দরবানের রুমা উপজেলায় সদর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিত এই রিঝুক পাড়াটি। রুমার অন্যতম পর্যটন স্পট রিজুক ঝরনাটি এ পাড়ার বিপরীতে অবস্থিত। পর্যটন স্পট রিঝুক ঝরনার কারণে রিঝুক পাড়াটিও পর্যটকের কাছে বেশ পরিচিত।

হাস্যোজ্জ্বল মুখে স্বাচ্ছন্দ্যবোধে চা পান করতে করতে মেঞোচিং মার্মা বলেন, আমাদের মাচাং ঘরের ধারে হয়ে বয়ে যায় সাঙ্গু নদীর পানি। নারীরা এখন এই পানি ব্যবহার করছেন রান্না মোছাসহ সব কাজে। শুধু ঘরে নয়। কোনো অতিথি এলেও নিরাপদ পানি বলতে সাঙ্গু নদী পানির বিকল্প নেই।

পাড়ার পাশে যে ঝরনা থেকে বিশুদ্ধ পানীয় জল সংগ্রহ করা যেত, তাও প্রতি বছর ডিসেম্বর শুরু হতে না হতেই পানি শুকিয়ে যায়।‌ ফোঁটা ফোঁটা পড়া এক কলসি পানি ভরাতে কমপক্ষে তিন থেকে চার ঘণ্টা লাগে। এই পানীয় জলের সংকটের ভোগান্তি কাকে বোঝাব—এই প্রশ্ন করেন চিং মে প্রু। তিনি বলেন, এখন আমাদের নারীদের পানি সংগ্রহের একমাত্র উৎস সাঙ্গু নদী। পানি তুলতে নেমে ওপর থেকে মল ভেসে আসতেও চোখ পড়ে।

বিঝুক পাড়া কারবারি প্রুসানু মার্মা জানান, ১০ থেকে ১২ বছর আগে রুমা সদর ইউনিয়ন পরিষদ জিএফএস পাইপের মাধ্যমে প্রাকৃতিক ঝরনা থেকে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করেছিল। কিন্তু তিন বছর আগে প্রবল বর্ষণে পাইপ লাইনটি ভেঙে নষ্ট হয়ে যায়। তখন থেকে বন্ধ হয়ে যায় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ।

পাড়ার বাসিন্দা চসিংঅং মার্মা বলেন, কোনো সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে সহযোগিতা পেলে পানি সরবরাহ ব্যবস্থা করা সম্ভব। কারণ পাড়ার পার্শ্ববর্তী থেকে পাইপ লাইন দিয়ে পানি আনা সম্ভব।

স্থানীয় মেম্বার চাইশৈহ্লা মার্মা বলেন, এই রিঝুক পাড়ায় জি এফ এস পাইপ লাইনের মাধ্যমে বিশুদ্ধ পানীয় জলের সরবরাহ করার জন্য এরই মধ্যে উপজেলা প্রশাসনের কাছে লিখিতভাবে প্রকল্প প্রস্তাব দাখিল করা আছে। চলতি জুন মাসের মধ্যে বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়ে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে বিএনপি প্রার্থী মান্নানের মনোনয়নপত্র দাখিল

ডেলি ও এসিআইর যৌথ উদ্যোগে স্টেশনারি জগতে নতুন দিগন্তের সূচনা

চাকরি হারালেন পুলিশের ৬ কর্মকর্তা

চকরিয়ায় মনোনয়নপত্র জমা দিলেন সালাউদ্দিন আহমদ

অপ্রতিরোধ্য সালমান খান, চমকে দিলেন ভক্তদের

আ.লীগের ১০ নেতার পদত্যাগ

ঢাকা-১০ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিলেন রবিউল

কেঁপে উঠছে গোমতী সেতু, আতঙ্কে যাত্রীরা

শীতে আপনার লোভনীয় পানীয় হাড়ের জন্য বিপজ্জনক নাতো

নতুন ৩ বিদেশিকে দলে ভেড়াল চট্টগ্রাম রয়্যালস

১০

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে রেখেছে ছাত্র-জনতা

১১

তুরস্কে মৃদু ভূমিকম্প, ভূপৃষ্ঠের খুব কাছে ছিল উৎপত্তিস্থল

১২

হাদির হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার দাবিতে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ

১৩

প্রত্যেকটা পয়সা ফেরত দেব : তাজনূভা

১৪

খাবারে বিষক্রিয়া; গুরুতর অসুস্থ ভারতীয় অভিনেত্রী

১৫

মেঘনায় ফের যাত্রীবাহী লঞ্চ ও পণ্যবাহী জাহাজের সংঘর্ষ

১৬

এনসিপি ছাড়ার কারণ জানালেন তাজনূভা জাবীন

১৭

নারীসহ ৩ নাগরিককে বাংলাদেশে পুশইন করল বিএসএফ

১৮

দল ছাড়লেন এনসিপির আরেক নেতা

১৯

গরম পানি কি সত্যিই হজম ভালো রাখতে সাহায্য করে

২০
X