আসন্ন এশিয়া কাপে ভারত ও পাকিস্তান সম্ভাব্যভাবে তিনবার মুখোমুখি হতে পারে—গ্রুপ পর্বে, সুপার ফোরে এবং ফাইনালে। সেপ্টেম্বরের এই টুর্নামেন্টের ভেন্যু সংযুক্ত আরব আমিরাত, যা ক্রিকেট বিশ্বের অন্যতম আলোচিত দ্বৈরথের নতুন মঞ্চ হয়ে উঠতে পারে। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে—ভারতের আদৌ পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলতে উচিত কি না?
পক্ষে থাকা যুক্তি স্পষ্ট—ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের জনপ্রিয়তা ও বাজারমূল্য অন্য যে কোনো ক্রিকেট দ্বৈরথের চেয়ে অনেক বেশি। সম্প্রচারস্বত্ব থেকে বিপুল অর্থ আসে, যা উপমহাদেশের অন্য ক্রিকেট খেলুড়ে দেশগুলোর আর্থিক স্থিতি বজায় রাখতে বড় ভূমিকা রাখে। ভারতকে অনেকেই উপমহাদেশের ‘বড় ভাই’ হিসেবে দেখে, যে আর্থিকভাবে অন্যদের টিকিয়ে রাখে।
বিপক্ষে থাকা মতও ততটাই তীব্র—যে দেশের সঙ্গে কয়েক মাস আগেই যুদ্ধাবস্থা ছিল, তাদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলা উচিত নয়। রাজনৈতিক ও দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের টানাপোড়েন না মিটে গেলে মাঠের লড়াই অযৌক্তিক বলে মনে করেন তারা।
তবে বিতর্ক যাই থাকুক, ভারত-পাকিস্তান দ্বৈরথকে এখনো ক্রিকেটের সবচেয়ে প্রতীক্ষিত ম্যাচ ধরা হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান বলছে, প্রতিদ্বন্দ্বিতা মাঠে আর ততটা সমানে সমান নয়। গত ১৫ বছরে দুই দল খেলেছে ১৭টি ওয়ানডে—ভারত জিতেছে ১২টিতে, পাকিস্তান মাত্র ৪টিতে। টি-টোয়েন্টিতে ১৩ ম্যাচের মধ্যে ভারত জিতেছে ১০টি, পাকিস্তান ৩টি।
গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের কাছে হারার পাশাপাশি পাকিস্তান হেরেছিল স্বাগতিক যুক্তরাষ্ট্র ও তুলনামূলক দুর্বল দলগুলোর কাছেও। আর কয়েকদিন আগেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডেতে মাত্র ৯২ রানে গুটিয়ে গিয়ে ২০২ রানে হারের লজ্জা পেতে হয়েছে বাবর আজমদের।
তবু অর্থনৈতিক দিক থেকে এই ম্যাচ অমূল্য। সম্প্রচারস্বত্ব, গ্রাউন্ড রাইটস ও অন্যান্য আয়ের হিসাব মিলিয়ে এশিয়া কাপের তিন আসরে মোট মূল্য প্রায় ১ হাজার ৯৪৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রতিটি ক্রিকেট বোর্ড নিশ্চিতভাবে পাচ্ছে ২৯০ থেকে ৩৩২ কোটি রুপি, যা ভারতের অংশগ্রহণ ছাড়া সম্ভব নয়।
ভারত-ইংল্যান্ড বা ভারত-অস্ট্রেলিয়া সিরিজ এখন রেকর্ড ভিউয়ারশিপ ও আয় এনে দিচ্ছে। কিন্তু ভারত-পাকিস্তান দ্বৈরথের সেই মর্যাদা ফিরিয়ে আনতে হলে মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মানও বাড়াতে হবে। আপাতত বাস্তবতা হলো—আর্থিকভাবে ম্যাচটি যতটা গুরুত্বপূর্ণ, প্রতিযোগিতার দিক থেকে তা অনেকটাই ম্লান হয়ে গেছে।
মন্তব্য করুন