শ্রীমঙ্গলের কালাপুরে হাজী আলফত মিয়া এতিমখানা কাগজে কলমে থাকলেও বাস্তবে রয়েছে এর ভিন্নতা। দীর্ঘদিন ধরে গ্রামের এক তৃতীয়াংশ বাচ্চাদের জীবিত পিতাকে মৃত দেখিয়ে তাদের অজান্তে বাচ্চাদের এতিম বানিয়ে সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন সরকারের লাখ লাখ টাকা।
অভিযোগের তীর উঠেছে আব্দুল জলিল নুরীর বিরুদ্ধে। মানুষের আবেগ অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে বাচ্চাদের ছবি তুলে ভুয়া এতিমের তালিকা সাজিয়ে সরকারের দেওয়া বরাদ্দের টাকা তিনি লুট করছেন। উক্ত এতিমখানার সভাপতি আব্দুল জলিল ও তার ছেলে দেলোয়ার হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক দেখিয়ে বাপ ছেলের যোগসাজশে চলছে সরকারি টাকা লুটপাটের অভিনব কৌশল।
জানা যায়, হাজী আলফত মিয়া মৌলভীবাজার সদর উপজেলার বাসিন্দা। উনার নাম ব্যবহার করে দেশ ও বিদেশ থেকেও আনা হচ্ছে ভুয়া এতিমের নামে টাকা।
শ্রীমঙ্গল উপজেলার কালাপুর গ্রামে ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত করা হয় হাজী আলফত মিয়া এতিমখানা। কাগজে কলমে ৭০ জন বাচ্চাদের জীবিত পিতাকে মৃত বানিয়ে ভুয়া এতিম দেখিয়ে সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে তাদের নামে বরাদ্দ করা হয়েছে ক্যাপিটেশন গ্রান্ড। প্রতি মাসে সরকারি বরাদ্দের ক্যাপিটেশন গ্রান্ডের জনপ্রতি ২ হাজার টাকা করে, বছরে ৪ লাখ ৮ হাজার টাকা আত্মসাৎ করছেন।
এলাকার ছুরুক মিয়া, মোস্তফা মিয়া, রশিদ মিয়া, খালিক মিয়া, বাবুল মিয়া, আহাদ মিয়া আখাইসহ অনেকের সঙ্গে কথা বললে জানা যায়, তাদের বাচ্চাদের ইসলামী শিক্ষা দানের জন্য আব্দুল জলিল নুরীর কাছে পড়তে দেন। তাদের মৃত বানিয়ে বাচ্চাদের এতিম বানানোর বিষয়ে কিছুই জানেন না তারা। মাসিক বেতন হিসাবে তারা প্রত্যেকে ১শত ৫০ টাকা করে দিয়ে আসছেন। অথচ তাদের ভুয়া মৃত্যু সনদ দাখিল করা হয়েছে সুনির্দিষ্ট দপ্তরে।
এসব বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের সভাপতি আব্দুল জলিল নুরী বলেন, আমার এতিমখানায় ৩ জন এতিম রয়েছেন। তালিকায় থাকা বাকী এতিমদের ব্যাপারে জানতে চাইলে বলেন,আমার ভুল হয়েছে।
উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা সুয়েব চৌধুরী জানান, আমরা অডিটে গেলে আব্দুল জলিল নানা টালবাহানা করেন। আজ এই এতিম নাই কাল চলে গেছে অমুক জায়গায় এসব বলেন আব্দুল জলিল।
এসব ভুয়া এতিগম ও জীবিত অভিভাবকদের মৃত দেখানোর ব্যাপারে জানতে চাইলে বলেন, উনাদের দেওয়া তালিকা অনুযায়ী আমরা পাঠাই।
অনুসন্ধান চলছে টের পেয়ে গত ২২ আগস্ট পূর্বের ৭০ জনের অনুমোদনকৃত এতিমের তালিকা থেকে ৩৩ জন এতিমকে বাদ দিয়ে উক্ত এতিমখানা থেকে ৩৭ জনের নতুন আরেকটি তালিকা দাখিল করা হয় উপজেলা সমাজ সেবা বরবার।
এ ব্যাপারে জেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, আমি এই এতিমখানার ব্যাপারে ব্যবস্থা নেব। আমি এ ব্যাপারে অবগত আছি।
মন্তব্য করুন