চট্টগ্রাম ব্যুরো
প্রকাশ : ২২ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:২৪ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

রাউজানে আট মাসে ৯ খুন

ছবি : কালবেলা গ্রাফিক্স
ছবি : কালবেলা গ্রাফিক্স

রক্ত ঝরছেই চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলায়। চার দিনের ব্যবধানে মো. ইব্রাহিম নামে আরও এক যুবদলকর্মীকে গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।

মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) দুপুর ১টার দিকে রাউজান সদর ইউপির পূর্ব রাউজান ৮ নম্বর ওয়ার্ডে গাজীপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত ইব্রাহিম মোহাম্মদ আলমের ছেলে। তিনি দীর্ঘদিন বিদেশে ছিলেন।

এর আগে গত শনিবার রাতে রাউজানের বাগোয়ান গরীর উল্লাহ পাড়ায় খুন হন আরেক যুবদলকর্মী আবদুল্লাহ মানিক। এ নিয়ে গত আট মাসে রাউজানে ৯টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। রাজনৈতিক শত্রুতা এসব হত্যাকাণ্ডের পেছনের প্রধান কারণ বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। এসব ঘটনায় এলাকায় চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তিনটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে আসা একদল দুর্বৃত্ত ইব্রাহিমকে মাথায় গুলি করে দ্রুত চলে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান তিনি। অভ্যন্তরীণ কোন্দলে এ ঘটনা ঘটেছে। এদিকে দুর্বৃত্তরা তাকে হত্যা করে চলে যাওয়ার সময় কদলপুর ইউপির ৩ নম্বর ওয়ার্ডের তালুকদার বাড়ির আবুল কালামের ঘরে ভাঙচুর চালায়। এ সময় তার ছেলে মন্নানকে না পেয়ে তার ভাই অটোরিকশাচালক মো. নাঈমের পায়ে এবং হাঁটুতে গুলি করে। তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

তাৎক্ষণিকভাবে কারা এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত এবং এর নেপথ্যে কী কারণ রয়েছে, তা নিশ্চিত করে জানাতে পারেনি পুলিশ। তবে স্থানীয়রা বলছেন, ইব্রাহিম এলাকায় যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন এবং কিছুদিন ধরেই রাজনৈতিক বিরোধে তিনি টার্গেটে ছিলেন।

রাউজান থানার ওসি (ভারপ্রাপ্ত) মনিরুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে এবং সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহসহ আশপাশের লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। প্রাথমিকভাবে এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলেই ধারণা করা হচ্ছে। অপরাধীদের চিহ্নিত করে দ্রুত গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশের একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে। নিহত ইব্রাহিমের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

গত আট মাসে রাউজানে ৯টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশ, নিহতের স্বজন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চাঁদাবাজি, দখল ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গত ২৮ আগস্ট থেকে ২২ এপ্রিল পর্যন্ত ৯ জন খুন হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ২০ জনের বেশি। প্রায় প্রতিদিন ঘটছে দখল, মাটি কাটা, পাহাড় কাটা, চাঁদাবাজি, দলীয় গ্রুপিং এবং আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনা। এসব ঘটনায় ব্যবহার হচ্ছে অত্যাধুনিক অস্ত্র। একের পর এক খুন, সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে পুলিশ। ধরা পড়ছে না জড়িতরা। তবে হত্যায় জড়িতরা এলাকায় ঘুরলেও পুলিশ ধরছে না বলে অভিযোগ স্বজনদের।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৫ আগস্ট পরবর্তী কিছু বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষ ও মারামারির ঘটনা ঘটলেও হত্যাকাণ্ড শুরু হয় ২৮ আগস্ট থেকে। ওই দিন বিকেলে পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের চৌধুরী মার্কেট এলাকায় পিটিয়ে হত্যা করা হয় রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার বেতবুনিয়া ইউনিয়নের শ্রমিক লীগ নেতা আব্দুল মান্নানকে (২৭)। তিনি বেতবুনিয়া সুগারমিল ডাকবাংলো এলাকার কবির আহাম্মদের ছেলে। ১ সেপ্টেম্বর সাবেক সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর বাগানবাড়ি থেকে মো. ইউসুফ মিয়া (৬৫) নামে এক ব্যক্তির রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত ইউসুফ রাউজান পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আবদুল শুক্কুর মিয়ার বাড়ির মৃত শামসু মিয়ার ছেলে।

১১ নভেম্বর নিখোঁজের তিন দিনের মাথায় রক্তাক্ত অবস্থায় হাফেজ মাওলানা আবু তাহের (৪৮) নামে এক মাদ্রাসাশিক্ষকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি রাউজানের চিকদাইর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের আকবর শাহ (রহ.) বাড়ির প্রয়াত আব্দুল মান্নানের ছেলে। এ হত্যাকাণ্ড রাজনৈতিক বিরোধে হয়েছে বলে স্থানীয় লোকজন ধারণা করলেও পুলিশ বলছে এটির তদন্ত চলছে। এখনো কারণ নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

গত ২৪ জানুয়ারি উপজেলার নোয়াপাড়া এলাকায় মোটরসাইকেলে করে চট্টগ্রাম শহর থেকে গ্রামের বাড়িতে জুমার নামাজ পড়তে মসজিদে যাওয়ার পথে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন মো. জাহাঙ্গীর আলম নামের এক ব্যবসায়ী। জাহাঙ্গীর আলম নোয়াপাড়া ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের নিরামিশপাড়ার মৃত আবু ছৈয়দ মেম্বারের ছেলে। জাহাঙ্গীরনগরের খাতুনগঞ্জের পাইকারি শুঁটকি ব্যবসায়ী ছিলেন তিনি।

গত ১৯ ফেব্রুয়ারি মুহাম্মদ হাসান (৩৫) নামে এক যুবলীগ কর্মীকে ঘর থেকে তুলে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে মুখোশধারী সন্ত্রাসীরা। নিহত হাসান নোয়াপাড়া ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের আহমেদ হোসেন মেম্বারের বাড়ির মো. বজল আহমেদ ড্রাইভারের ছেলে। তাকেও রাজনৈতিক বিরোধে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি পুলিশের।

গত ১৫ মার্চ ইফতার মাহফিল নিয়ে বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়াকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের পিটুনি ও ছুরিকাঘাতে খুন হন কমর উদ্দিন জিতু (৩৬) নামে এক যুবদল কর্মী। কমর উদ্দিন জিতু হলদিয়া ইউনিয়নের উত্তর সর্ত্তা গ্রামের মুহাম্মদ আলীর ছেলে। তিনিও রাজনৈতিক বিরোধে খুন হন।

গত ২১ মার্চ পূর্বগুজরা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বৃহত্তর হোয়ারাপাড়া এলাকার মোবারক খালের পূর্ব পাশে খোলা জমি থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় মো. রুবেল (৩৫) নামে এক যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়। গরু চোর সন্দেহে তাকে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করা হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ। নিহত রুবেল নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানার মৃত নুরুল আলমের ছেলে। সর্বশেষ ১৯ এপ্রিল রাতে খুন হন যুবদল কর্মী মানিক আবদুল্লাহ। এ ঘটনায় জড়িত কাউকে এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

এরপর ১৯ এপ্রিল রাত দেড়টার দিকে চট্টগ্রামের রাউজানের বাগোয়ান ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের গরিব উল্লাহপাড়া গ্রামে ভাত খাওয়ার সময় গুলি ও ছুরিকাঘাত করে যুবদল কর্মী মানিক আবদুল্লাহকে (৩৬) হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ১২-১৫ জনের মুখোশধারী দুর্বৃত্ত ঘটনাটি ঘটিয়েছে বলে জানিয়েছেন তার স্বজনরা।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ঢাকায় আনা হলো হাতির আঘাতে আহত চিকিৎসকদের

খালেদা জিয়ার জন্মবার্ষিকীতে ক্যালিফোর্নিয়ায় দোয়া মাহফিল

হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ

হোয়াটসঅ্যাপে নতুন ফিচার, জেনে নিন কী থাকছে

জনগণ নির্বাচনমুখী হলে কেউ আর আটকতে পারবে না: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

আগামী নির্বাচন পিআর পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হবে : গোলাম পরওয়ার

ইংল্যান্ডের ১৩৬ বছরের রেকর্ড ভাঙতে যাচ্ছেন বেথেল

দেশে আরেক চেতনার উদ্ভব হয়েছে : রিজভী

বানানীতে রাব্বি হত্যা নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিল র‌্যাব

তরুণদের রক্তে ফিরতে পারে ত্বকের তারুণ্য

১০

গণতন্ত্রের জন্য জাতীয় ঐক্য বজায় রাখতে হবে : সালাহউদ্দিন 

১১

শরতের প্রথম দিন আজ

১২

বিপুল অস্ত্র উদ্ধার, রাজশাহীতে বাড়ি ঘিরে রেখেছে সেনাবাহিনী

১৩

কোনো যুদ্ধবিরতি, ‍কোনো চুক্তি হয়নি : বৈঠকের ফল ‘শূন্য’

১৪

৬৩ বছরে পা রাখতেন রক লেজেন্ড আইয়ুব বাচ্চু

১৫

টাকার বিনিময়ে শেখ মুজিবকে নিয়ে পোস্ট? সামনে এলো সত্য ঘটনা

১৬

যমুনায় দ্রুত বাড়ছে পানি, প্লাবিত নিম্নভূমি

১৭

শসা খেয়ে পানি খাচ্ছেন? হতে পারে যেসব বিপদ

১৮

প্রিমিয়ার লিগে যে ইতিহাস গড়লেন সালাহ

১৯

দেব-শুভশ্রী জুটি কেন জনপ্রিয়, জানেন না দেব নিজেও

২০
X