বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত বলেছেন, বিগত ২০০১ সালের নির্বাচনের পর এদেশের সংখ্যালঘুদের উপর ভয়াবহ নির্যাতন নেমেছিল। বিএনপি সরকার তার বিচার করেনি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দুই একটি ছাড়া আর কোনো ঘটনার বিচার হয়নি।’
শনিবার (২৬ আগস্ট) দুপুরে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ লক্ষ্মীপুর জেলা শাখার নবনির্বাচিত কমিটির পরিচিতি সভা ও সমাবেশ অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তার বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
অস্তিত্বের লড়াইয়ে আসুন, সবাই ঐক্যবদ্ধ হই’-এ স্লোগানকে সামনে রেখে লক্ষ্মীপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
এসময় তিনি আরও বলেন, ২০১৮ সালে নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নির্বাচনের ইশতেহারে ঘোষণা দিয়েছিল ঐক্য পরিষদের উত্থাপিত জাতীয় ঐক্যমতের ৭ দফার মধ্যে ৫ দফা বাস্তবায়ন করবে। নির্বাচনী ইশতেহারের ঘোষণা ছিল, সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় ও জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন করা হবে, সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করা হবে, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পণ আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন করা হবে, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ফাউন্ডেশন গঠন করা হবে, সমতলের আদিবাসীদের জন্য ভূমি কমিশন গঠন করা হবে, বর্ণ বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়ন এবং পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইনের বাস্তবায়ন করা হবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সাড়ে চার বছরে এর একটিও বাস্তবায়ন হয়নি।
উপস্থিতিদের আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, আসুন, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের ঘোষিত ঐতিহাসিক ৭ দফা দাবি বাস্তবায়নের আন্দোলনে সামিল হই। বাংলাদেশকে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ফিরিয়ে আনি। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তুলি।
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ লক্ষ্মীপুর জেলা শাখা আয়োজিত সমাবেশের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম সভাপতি অধ্যাপক ড. নিমচন্দ্র ভৌমিক। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সংগঠনের আরেক অন্যতম সভাপতি নির্মল রোজারিও। তিনি বলেন, ‘এই সরকারের শাসনামলে সংঘটিত রামু, গোবিন্দগঞ্জ, সাঁথিয়া, ভোলা, নাসিরনগর, নোয়াখালী জেলার চৌমুহনী ও রাজগঞ্জে সংঘটিত সাম্প্রদায়িক হামলা ও ২০২১ সালের দুর্গোৎসবের সময় কুমিল্লার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত একটি পূজামণ্ডপে বানোয়াট ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দুদের বাড়ি ঘর মন্দিরে হামলা ও একাধিক ঘটেছে। কিন্তু দূর্ভাগ্য এর কোনটির বিচার হয়নি বরং ফেসবুকে কথিত বার্তা ছড়ানোর অভিযোগে কিছু সংখ্যালঘু যুবককে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আমরা মনে করি গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও ন্যায় বিচারই পারে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে। বস্তবে আমরা সেই অবস্থা থেকে অনেক দূরে আছি। বর্তমানে রাষ্ট্রটি অসাম্প্রদায়িক হলেও সমাজ সাম্প্রদায়িক হয়ে গেছে।’
এসময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, অ্যাডভোকেট জহর লাল ভৌমিক, অ্যাডভোকেট তাপস কুমার পাল, উত্তম চক্রবর্তী, সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য, নিতাই প্রসাদ ঘোষ ও গৌতম মজুমদার।
শংকর মজুমদারের সভাপতিত্বে এবং অ্যাডভোকেট মিলন মন্ডলের সঞ্চালনায় উক্ত সমাবেশে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মনীন্দ্র কুমার নাথ, রমেন মন্ডল, শ্যামল পালিত, শৈবাল কান্তি সাহা, স্বপন চন্দ্ৰ নাথ ও শিমুল সাহা।
জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সহস্রাধিক নারী-পুরুষ সমাবেশে মিলিত হন।
মন্তব্য করুন