সংস্কার শেষ করে দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার জন্য প্রফেসর ডক্টর ইউনূসকে আহ্বান জানালেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বুধবার (৩০ এপ্রিল) বিকেলে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার মুন্সিরহাট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত গণসংযোগে এ আহ্বান জানান তিনি।
এসময় মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা কথা বলার ও পত্র-পত্রিকায় লেখার স্বাধীনতা চাই। দল করার স্বাধীনতা দিতে হবে। বিএনপি করলে আমার চাকরি হবে না এই ব্যবস্থা আমরা চাই না। আমরা স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা চাই। সরকারের কথা শুনে যেন বিচারের রায় না দেয় এমন একটা বিচার ব্যবস্থা চাই। তাই সরকারকে অনুরোধ করে বলছি আপনি এগুলো তাড়াতাড়ি করেন। তাড়াতাড়ি করলে জনগণ তার ভোট দিয়ে নিজস্ব সরকার তৈরি করবে।
ইউনুসকে উদ্দেশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, আপনি যতই বলেন আপনাকে তো আর জনগণ ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেনি। তাই এখন জনগণ চায় তারা ভোট দিয়ে তাদের লোক নির্বাচিত করতে। তারা ভোট দিতে চায়। সেই ব্যবস্থাটা একটু তাড়াতাড়ি করেন। আর যত দেরি করবেন ততোই হাসিনা বলবে আমি আসতেছি আবার।
শেখ হাসিনা সম্পর্কে মির্জা ফখরুল বলেন, ভারতকে বলা হচ্ছে হাসিনাকে ফেরত দিতে। ওই হাসিনা ছাত্র-জনতাকে মেরেছেন। তার বিচার করা হবে। মা-বোনদের সম্ভ্রম নষ্ট করেছে। তার জবাবদিহিতা করতে হবে। রাষ্ট্র এমনি এমনি চলে না। যে রাষ্ট্র চালায় তাকে সবাইকে সমানভাবে দেখতে হবে। ভালোবাসতে হবে। হিন্দু-মুসলিমদের মধ্যে বিভেদ তৈরি করে দিয়েছে। প্রমাণিত হয়ে গেছে এদেশের মানুষের প্রতি হাসিনার কোনো দয়াময় নেই।
ফখরুল হাসিনা সম্পর্কে আরও বলেন, আমরা তো অনেক মামলা হামলা শিকার হয়েছি, কই আমরা তো পালিয়ে যাইনি। খালেদা জিয়া ছয় বছর জেল খেটেছেন, কই তিনি তো পালিয়ে যাননি। আমি ১১ বার জেল খেটেছি। বাড়ি থেকে রাস্তা থেকে পুলিশ এসে নিয়ে গেছে কিন্তু পালিয়ে যাইনি। কারণ আমরা রাজনীতি করেছি, চুরি করিনি।
তিনি হিন্দুদের উদ্দেশ করে বলেন, আপনারা দয়া করে বিভ্রান্ত হবেন না, আমরা সবাই এক। আমরা হিন্দু-বৌদ্ধ-মুসলিম-খ্রিস্টান সবাই মিলে এই দেশটাকে সুন্দর করে গড়ে তুলবো। গণতান্ত্রিক দেশ তৈরি করবো। শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে শুরু করে যুবকদের চাকরির ব্যবস্থা করবো। কৃষকদের কৃষি পণ্যের ন্যায্য মূল্যের ব্যবস্থা আমরা করবো। শ্রমিকরা যাতে ন্যায্য পারিশ্রমিক পায় সেই ব্যবস্থা করবো ইনশাল্লাহ।
বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতার জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়ে তিনি বলেন, আগামী মাসের চার পাঁচ তারিখে তিনি দেশে আসবেন। আল্লাহ যেন তাকে সুস্থ করে আমাদের মাঝে ফিরিয়ে দেন। এর পরে তারেক রহমান সাহেবও আসবেন। এরপর আমরা নেতাদের সঙ্গে নিয়ে নির্বাচন করে সুন্দরভাবে একটা পার্লামেন্ট গঠন করবো ও সুন্দর দেশ তৈরি করবো। এই লক্ষ্যকে সামনে নিয়ে সবাই একযোগে একসঙ্গে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
এর আগে কিসমত কেশুরবাড়ি লক্ষ্মীর হাট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ভাগকে ভয়ংকর বলে আখ্যায়িত করে বলেছেন আমরা হিন্দু-মুসলমান ভাগ হবো না।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা যারা রাজনীতি করি তারা কাউকে নৌকা আর কাউকে ধানের শীষে ভাগ করেছি। হিন্দু-মুসলমান ভাগ করেছি। এ ভাগ খুব ভয়ংকর। আমরা কখনো হিন্দু-মুসলমান ভাগ হবো না। আপনার ভোট আপনি দেবেন, যাকে খুশি তাকে দেবেন।
তিনি বলেন, আমরাই ভাগ করে রাখছি মুসলমান, হিন্দু, খ্রিস্টান। অথচ আমরা যুগের পর যুগ একসঙ্গে মিলেমিশে বসবাস করে আসছি। গ্রামে একে অপরের বিপদে-আপদে এগিয়ে আসার সময় হিন্দু-মুসলমান দেখি না। ভাগ হলে বছরের পর বছর অশান্তি লেগে থাকবে।
১৯৪৭ সালের দেশ ভাগের ঘটনা সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা তখনো মিলেমিশে থেকেছি। আমাদের শান্তি নষ্ট করার জন্য সেসময় উপরে যারা ছিল তারা আমাদের মাঝে গন্ডগোল বাঁধিয়ে দিত। আমরা বিভাজনের দিকে যাব না।
মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা আমাদের ভোট দেন আর না দেন, আপনাদের পাশে আছি। আপনাদের অধিকার আদায়ের জন্য আমার আপনাদের পাশে থাকব।
এসময় জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সাল আমিনসহ জেলা বিএনপির অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন