‘ঘুসের’ জন্য এমপিওভুক্তির ফাইল আটকে রাখার অভিযোগে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) রাজশাহী আঞ্চলিক কার্যালয়ে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বুধবার (৩০ এপ্রিল) দুপুরে দুদকের জেলা সমন্বিত কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ইসমাইল হোসেনের নেতৃত্ব অভিযানটি চালানো হয়। এসময় দুদকের কর্মকর্তারা নতুন এমপিওভুক্তির আবেদনের ৯২টি ফাইল আটকে রাখার অভিযোগ তোলেন।
তবে আগামী ৬ মে এমপিওভুক্তির ফাইল পাঠানোর শেষ সময় বলে জানিয়েছেন মাউশি রাজশাহী অঞ্চলের উপপরিচালক (কলেজ) ড. আলমগীর কবীর। ফলে দুদকের এই অভিযান ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলেও দাবি করেন তিনি।
জানা গেছে, মাউশির কলেজ শাখার উপপরিচালক ড. আলমগীর কবির নিজের অফিসে ফাইল আটকে রেখেছেন- এমন অভিযোগে অভিযান চালায় দুদক। এ সময় দুদকের ওই টিম ডিডি আলমগীরের বিরুদ্ধে অনৈতিকভাবে ৯২ টি ফাইল আটকে রাখার অভিযোগ করেন।
অভিযানের সময় দুদকের সমন্বিত রাজশাহী জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আমির হোসাইন সাংবাদিকদের বলেন, আমরা দেখতে পেলাম উপ-পরিচালক আলমগীরের কাছে ৯২ টি ফাইল পেন্ডিং আছে। অনৈতিকভাবে ধরে রেখে পরিচালকের কাছে ফরওয়ার্ড করেননি।
তিনি বলেন, অদৃশ্য শক্তির বলে তিনি ২০২৪ সালের নভেম্বরে উপ-পরিচালক হিসেবে মাউশিতে যোগদান করেছেন। গত দুই সপ্তাহ আগে আমরা ওনার বিরুদ্ধে আরেকটি অভিযান পরিচালনা করেছি। আজকে একই অভিযোগে অভিযান পরিচালনা করলাম। আমি জানি না কোন অদৃশ্য শক্তির বলে এখনো তিনি সপদে বহাল আছেন। আমার মনে হয় বিষয়টি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ভেবে দেখা উচিত।
অভিযানের বিষয়ে জানতে চাইলে দুদকের এই কর্মকর্তা বলেন, ফাইল পাঠানোর সময় আরও তিন দিন রয়েছে। তাহলে কিসের ভিত্তিতে আপনারা অভিযান পরিচালনা করলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কমিশনের সিদ্ধান্তে আলোকে আমরা কাজ করে থাকি। কমিশনের বাইরে আমরা কিছু করতে পারি না।
ফাইল পাঠানোর সময় আছে অথচ উপ-পরিচালক অনৈতিকভাবে ফাইল আটকিয়ে রেখেছেন এটি আপনারা কীভাবে বলছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আসলে এই তিনদিনে কি ৯২ টা ফাইল ফরওয়ার্ড করা সম্ভব?
জানতে চাইলে মাউশি রাজশাহী অঞ্চলের উপ-পরিচালক ড. আলমগীর কবির বলেন, ফাইল আটকে রাখার কোন প্রশ্নই আসে না। নতুন এমপিওভুক্তির ফাইল পাঠানোর শেষ তারিখ আগামী ৬ মে। অথচ ফাইল পাঠানোর নির্দিষ্ট সময়সীমার ৫দিন আগেই দুদক কীভাবে জানতে পারলো যে, আমি ফাইল আটকিয়ে রেখেছি। যদি স্পেসিফিক আমার ফাইল আটকে রাখার জন্য দুদক অভিযান পরিচালনা করে থাকে তাহলে আমি বলব দুদক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এটি করেছে। আর আমার বিরুদ্ধে কোনো ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ না পাওয়ার পরেও একজন দুদক কর্মকর্তা বলেছেন, আমি নাকি অদৃশ্য শক্তির বলে এখনো স্বপদে বহাল আছি।
মাউশির এই কর্মকর্তা বলেন, চলতি মাসের ২০ এপ্রিল পর্যন্ত শিক্ষক-কর্মচারীর সাড়ে ৮ হাজার কারেকশন ফাইল ফরওয়ার্ড করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত ১৫০টি ফাইল পেন্ডিং ছিল। রাত ১২টা পর্যন্ত প্রায় ৬০টি ফাইলের কাজ করে ফরওয়ার্ড করেছি। বাকি যে ফাইলগুলো ছিল সেগুলো আজকে রাতের মধ্যেই ফরওয়ার্ড করা সম্ভব। এখনো সময় আছে ৬ মে পর্যন্ত। অথচ আমি ফাইল আটকে রেখেছি এমন অভিযোগ তুলে দুদক অভিযান পরিচালনা করেছে- যা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
তিনি আরও বলেন, অফিস আদেশের ভিত্তিতে আমি আজ (বুধবার) পদোন্নতির একটি মিটিংয়ে নওগাঁ ডিসি অফিসে গিয়েছিলাম। অথচ অফিসে না থাকা অবস্থায় দুদক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই অভিযান পরিচালনা করেছে।
মন্তব্য করুন